অনলাইন ডেস্ক : প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সেটাকে ৫ লাখ টাকা করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে করযোগ্য নয় এমন টিনধারীদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডিসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এ কথা বলেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ‘বিদ্যমান সংকটময় ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে সরকার এ বিশাল আকৃতির বাজেট প্রণয়ন করেছে। তবে, দেশীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান তৈরি, রাজস্ব ঘাটতি মেটানো, অর্থায়ন নিশ্চিতকরণ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ স্থিতিশীলতা আনয়নে আমরা বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জিং সময় অতিবাহিত করছি, তা মোকাবিলায় বাজেটে সরকার ব্যবসা ও অর্থনীতির সমন্বয় করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত ব্যক্তিগত আয়ের সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সেটাকে ৫ লাখ টাকা করা প্রয়োজন। এছাড়া করযোগ্য নয় এমন টিনধারীদের ওপর ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা তৈরি করবে। তাই এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কর আদায়ের জন্য এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে এজেন্টদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখলে করজাল বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ভ্যাট টার্নওভারের সীমা বৃদ্ধিসহ ভ্যাট রিটার্ন ও অডিট প্রক্রিয়া অটোমেশনের করা প্রয়োজন। এছাড়া রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যকার পার্টনারশিপ বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার।’

‘কর্পোরেট কোম্পানির উইথহোল্ডিং কর রিটার্নের সংখ্যা ২৯টির পরিবর্তে ১২টিতে নামানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে ডিসিসিআই মনে করে কর্পোরেট করের হার না কমানোর ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়বে। কর্পোরেট করের হার ও ক্যাশ লেনদেনের সীমা ৩৬ লাখ টাকার পরিবর্তে বার্ষিক খরচের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া নন-লিস্টেড কোম্পানির কর হার ২.৫ শতাংশ হ্রাস করা প্রয়োজন।’

‘স্থানীয়ভাবে মোবাইল ফোনের উৎপাদনের ওপর ভ্যাট আরোপের কারণে এর উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমাদের উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এটা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই। এছাড়া সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক্স, সোলার এনার্জি, লিফট ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে এসব খাতে স্থানীয় শিল্পের সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে।’

সামীর সাত্তার বলেন, ‘জ্বালানি খাতে মূল্য সহনীয় রাখতে বাজেটে ১৩ ধরনের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু ও ভ্যাট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে ডিসিসিআই। পাশাপাশি ডিজেল আমদানিতে ৫ শতাংশ ডিউটি কমানোর পাশাপাশি উৎসে কর সমন্বয় করার বিধানের কারণে তেলের মূল্য কমবে। যেটি মূল্যস্ফীতি হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

‘খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সারের দাম কম রাখতে গ্যাসের মূল্য কমানোর পাশাপাশি এ খাতে ব্যবহৃত ডিজেলে দাম কমানো প্রয়োজন এবং কৃষিখাতের আধুনিকায়নে যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর অব্যাহত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।’

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৪.৭০ শতাংশ বেশি। সরকারের এ ব্যাংক নির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ বাড়বে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো এবং বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে ব্যাগেজ রুল সংশোধন ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’