শওগাত আলী সাগর : ১. লুনা আর ওমর সব আয়োজনের মধ্যমণি হলেও শাহজাহান সাহেব আমার মনে গেঁথে গেলেন। শাহজাহান সাহেব পেশায় আইনজীবী, ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় কথা বলতে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সামনে নিয়ে এলেন, ‘শেষের কবিতা’ থেকে উদ্ধৃত করলেন- যে সব মানুষের হয়, সে পরিবারের হয় না, আর যে পরিবারের হয় সে সব মানুষের হয় না। তাঁর আকাংখা ছিলো, তাঁর আকাংখা আছে- তাঁর ছেলে পরিবারের হবে, আবার সব মানুষের হবে। বাবা হিসেবে এই চাওয়াটা ব্যতিক্রমী, অন্যরকম। তিনি ছেলের নতুন সংসারের সুখ কামনায় নিজের প্রত্যাশাকে সীমিত রাখেননি। তিনি চেয়েছেন- তাঁর ছেলে সংসারী হোক, কিন্তু সব মানুষের হোক, সবার হোক। এ এক কঠিন চাওয়া। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রী লুৎফুন্নাহার সেই চাওয়ায় নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়ে গেলেন।

২. ব্যারিষ্টার ওমর আল জাহিদ আর নুসরাত জাহান লুনার বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি নানা কারণেই আলোচিত। এক সাথে এতো মানুষের সমাগম কমিউনিটি কেন অনেক বড় সেলিব্রেটিদের আয়োজনেও হয় না। ওমর কমিউনিটর প্রায় সব মানুষকেই জড়ো করতে চেয়েছিলেন। তিনি তো বলেই ফেলেছেন, স্পেস পাওয়া গেলে তিনি হয়তো আরো মানুষকে আমন্ত্রণ জানাতেন।

ওমর আর লুনার বিয়ের এই অনুষ্ঠানটি কমিউনিটির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে, অতিথিরা অকপটে আনন্দ করেছে। সেই সব এড়িয়ে আমি, জয়ন্ত বণিক আর সেরীন ফেরদৌস ওমরের বাবা মো. শাহজাহান সাহেব, মা অধ্যাপক লুৎফুন্নাহারকে নিয়ে মগ্ন রইলাম।

৪. নতুন বর হিসেবে ওমরের বক্তব্যটাও বেশ আকৃষ্ট করলো। কথাবার্তায় কী অসাধারণ সারল্য তাঁর। নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করলেন না তিনি, পরিমিত শব্দ প্রয়োগে সংক্ষেপে যে কথাগুলো বললেন, সেখানেও আমরা শাহজাহান সাহেবের ভিন্নচিন্তারই প্রতিফলন দেখলাম যেনো। ‘আমি যদি দামি কোনো একটা শার্ট কিনতে টাকা চাইতাম বাবা সেটি দিতেন না, কিন্তু আজিজ মার্কেট থেকে বই কিনবো বলে ১০ হাজার টাকা চাইলে বাবা- ১২ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতেন, বাবা চাইতেন আমি যেনো বই পড়ি, আলোকিত মানুষ হই।’ – বাবা সম্পর্কে জানালেন ওমর।

৫. আমি আর জয়ন্ত বণিক জাহাঙ্গীর ভাইকে নিয়েও কথা বললাম। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন ওমরের চাচা। বিয়ের এই অনুষ্ঠানে তাঁকে আলাদা করে সম্মানিত করার বিষয়টিও আমাদের চোখে পরলো। জাহাঙ্গীর ভাইরে সাথে আমার বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে টেলিফোনে, পেশাগত কারণে। কিন্তু যখনি কথা হয়েছে, কখনোই মনে হয়নি তাঁর সাথে আমার দেখা হয়নি, তার কথাবার্তায় মনে হতো- তিনি আমার খুবই কাছের কেউ। আর ওমর তো তাঁর ভাইয়ের ছেলে।

ওমর অবশ্য নিজেই জানিয়েছেন, গত আট বছরের কানাডা জীবনে তাঁর জাহাঙ্গীর চাচা তার যতো আব্দার, সহ্য করেছেন- নিজের ছেলেমেয়েদেরও হয়তো অতোটা সুযোগ তিনি দেননি। জাহাঙ্গীর ভাই, শাহজাহান সাহেবরা ভাই ভাই- তাদের চিন্তায় মিল থাকাটা স্বাভাবিক। ওমরের বিয়ের অনুষ্ঠানে সঙ্গত কারণেই তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ আসনে।

৬. ওমর আর লুনার বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এইসব কেন বলছি! বলছি এই কারণে- দেশে কিংবা প্রবাসে পরিবার, পারিবারিক বন্ধন, পরষ্পরের সম্মানবোধ যখন নানা টানাপড়েনে হুমকির মুখে, তখন এই ধরনের আচরণ আমাদের উৎসাহি করে, প্রেরণা দেয়। আমরা পরিবার নিয়ে আশাবাদী থাকি।

৭. এবার একটু লুনার কথা বলি। লুনাকে আমি যে দুএকবার কাছ থেকে দেখেছিÑ তাঁকে আমার সবসময়ই মনে হয়েছে ডিপার্টমেন্টের সেই জুনিয়র মেয়েটা, যে কীনা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রেম করে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের প্রেমের কথাটা সবাই জানে। ওমর আর নুসরাত জাহান লুনা’র সেই প্রেমটা সবসময়ই অটুট থাকুক।

ওমর আর লুনার নতুন জীবনে শুভ কামনা জানাই। লুনাকে সঙ্গে নিয়ে ওমর পরিবারের হোক, সব মানুষের হোক।