মনিস রফিক : বৃদ্ধাবস্থায় মানুষের শারীরিক ক্ষমতা কমতে থাকার সাথে সাথে বিভিন্ন মস্তিষ্কজনিত অসুখ শরীরে জেঁকে বসে। বর্তমানে কানাডায় ষাট বছরের বেশি মানুষের তিন ভাগের দুই ভাগই ‘ডিমেনশিয়া’য় আক্রান্ত। কানাডাসহ সারা পৃথিবীতে এ সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে বেড়ে চলছে। বয়স্ক মানুষের জীবন, তাদের অবস্থান এবং তাদের মস্তিষ্কজনিত বিভিন্ন অসুখ নিয়ে “বাংলা কাগজ” এ লিখছেন মনিস রফিক। সত্য ঘটনার লেখাগুলি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।

মেক্সিকোর একজন বৃদ্ধা ছবি : ইন্টারনেট

চার.
প্রায় এক পনের দিন পর ওলেনা শান্তা মারিয়া আমার দিকে তাকিয়েছিল। তখন তার চোখ ছিল অন্যরকম এক মায়াবী স্নেহ ভালবাসায় ভরা। একেবারে তিন চার বছরের ছোট্ট কন্যা শিশুর মত নিস্পাপ চাহনিতে তার এই চেয়ে থাকা আমাকে কিছুটা চমকিয়ে দিয়েছিল। আমার কী বলা উচিত এমন ভাবতে ভাবতে কয়েকটা সেকেন্ড পার হয়ে গেল, এর মধ্যেই সে তার হুইল চেয়ার থেকে আলতো উঠে এসে টান মেরে আমার হাতটা ধরে তার চেয়ারের পাশের সোফায় বসালো। তার এমন আচরণে আমি একেবারে থতমত হয়ে গিয়েছিলাম। পঁচাশি বছরের মারিয়াকে কেউ কখনো এমনরূপে দেখেনি আর হুইল চেয়ার থেকে এমনভাবে উঠে এসে টান মেরে আমার মত কাউকে এক ঝটকায় এমনভাবে পাশের সোফায় বসাবে তা কখনো কারো কল্পনায়ও আসেনি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে মারিয়া যা করলো তা সত্যিই এক বিস্ময়ের বিষয়। মারিয়া সাধারণত সবসময় একেবারে নিশ্চুপ থাকে, ওল্ড হোমের কারো সাথে কথা বলে না, চুপ করে জানালার পাশে বসে থাকে অথবা টেলিভিশনের পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকে বা ছোট্ট শিশুর মত প্লাষ্টিকের সব্জী-খেলনা খেলে। মারিয়া আর একটা কাজ করে, তা হচ্ছে, তার ছেলে ডেভিড এর জন্য অপেক্ষা করে। যদিও সাধারণত ডেভিড মাসে দুবারের বেশি তার মা’কে দেখতে আসে না।

প্রায় তিন বছর আগে মারিয়াকে এই ওল্ড হোমে তার ছেলে ডেভিডই রেখে যায়। মাকে এই হোমে রেখে যাওয়া ছাড়া ডেভিডের আর অন্য কোন উপায় ছিল না। নিজে দূরপাল্লার গাড়ি চালায় ফলে মাসের বেশির ভাগ সময়ই তাকে ঘরের বাইরের থাকতে হয়। চার বছর পূর্বে বাবা মারা যাবার পর তার মা বড় বেশি একা, নীরব আর নিথর হয়ে পড়েছিল। স্কারবরোর বাড়িটা মারিয়ার জন্য বড় বেশি ভুতুড়ে হয়ে পড়েছিল, রিকার্ডো মারা যাবার পর মারিয়ার কথা বলা, ঘুরে বেড়ানো আর স্বপ্ন দেখার সাথী সারা জীবনের জন্য হারিয়ে গেছে। হয়তোবা রিকার্ডোকে হারানো, নিজের বানানো বাড়িটা হাত ছাড়া হওয়া আর ছেলেকে কাছে না পাওয়া মারিয়ার জীবনকে এমন নীরব নিথর করে দিয়েছ।

ডেভিড কিছুদিন আগে ছাপান্ন’তে পা দিয়েছে। ডেভিডের ছয় বছর বয়সে রিকার্ডো মারিয়াকে নিয়ে মেক্সিকো থেকে টরন্টোতে এসেছিল। মেক্সিকোর এক গহীন গ্রামে জন্ম নেয়া মারিয়া দীর্ঘদিন টরন্টোতে থাকার পরও সেই গ্রামের গ্রামীণতা ছাড়তে পারেনি। এমনকি ইংরেজি ভাষাটাও একেবারে শিখেনি, ‘ইয়েস’ ‘নো’ ধরনের ইংরেজি ছাড়া আর অন্য ইংরেজি শব্দ তার মুখ দিয়ে বের হয় না। মারিয়ার এই গ্রামীণতা রিকার্ডো খুব মুগ্ধ হয়ে ভালোবাসতো। প্রাণপ্রিয় স্বামী-স্ত্রী বলতে যা বুঝায় মারিয়া আর রিকার্ডো ছিল ঠিক তেমনই। রিকার্ডো গাড়ি চালিয়ে ঘরে ফিরলে মারিয়া আন্যরকম ব্যস্ততায় মেতে উঠতো। রান্না করা, স্বামী সেবা করা আর ছেলেকে নিয়ে মেতে থাকায় মারিয়া যে সুখ পেত তা আমার বাংলাদেশের আমাদের মায়েদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

রিকার্ডো মারা যাবার পর বাস্তবিক অর্থেই মারিয়ার আকাশটা ভেঙ্গে পড়ে। পঞ্চাশ বছরের সংসারে রিকার্ডোই ছিল তার এক মাত্র ধ্যানজ্ঞান। ফলে যে কষ্টটা মারিয়া পেয়েছিল তা হয়তো স্বাভাবিক ছিল। সেই থেকে একেবারে চুপ করে গেল সে। কারো সাথে কথা বলে না। এমনকি ডেভিড এর সাথেও না। তবে নীরবে সে ডেভিডের সব যত্ন নিত, কিন্তু একটু অন্যভাবে। ডেভিডকে সে ভাবতো একবারে ছোট্ট বাচ্চা। ডেভিড বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত সে খাবার খেতো না, আর সবসময় ডেভিডকে নিজ হাতে সে খাবার খাওয়িয়ে দিতে শুরু করল। শুধু তাই নয়, ডেভিডকে খাওয়ানোর আগে সুর করে ছড়া গেয়ে গেয়ে চলতো।

নিজেদের বাড়িতে মা’য়ের দেখাশুনায় ডেভিড আর পেরে উঠছিল না, তার কাজের ধরনের জন্য আর পক্ষে সবসময় তার মায়ের কাছে কাছে থাকা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তা ছাড়া নিজে বিয়ে শাদী না করার ফলে ঘরের প্রতি তার টানটা কিছুটা কমে আসছিল। মাতৃসেবায় নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে গিয়ে ডেভিড মারিয়াকে এই হোমে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। মারিয়া জীবনে কোনো চাকুরী না করায় সরকারিভাবে মাসে যে টাকা পাওয়া শুরু করে তা দিয়ে হোমের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে ডেভিড স্কারবরোর বাড়িটা বিক্রি সেই বিক্রির টাকার অর্ধেক অংশ মায়ের আকাউন্টে রেখেছে যা দিয়ে আরো কুড়ি বছর অনায়াসে মারিয়ার হোমের খরচ চালানো যাবে। জীবনটাকে এমনভাবেই সরল সমীকরণে ডেভিড হিসাব করেছিল।

মারিয়া গ্রামের সরল মুখ্য সুখ্য মেয়ে। জীবনে সে কখনো অংক কষেনি। আর সমীকরণ শব্দের সাথে তার কখনো পরিচয়ও হয়নি। তার কখনো মনেই হয়নি যে রিকার্ডো তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে রিকার্ডোর সাথে তার যখন প্রথম দেখা হয় তখন সে মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় চার শ মাইল গভীরের সান্দ্রা নামের পাহাড়ী প্রকৃতি ঘেরা গ্রামের সরল এক মেয়ে। সেই গ্রামেই ট্রাক চালিয়ে কোনো এক কাজে এসেছিল রিকার্ডো, মারিয়াকে প্রথম দেখেই আর পছন্দ হয়ে গেল, তারপর বিয়ে। আর সেই বিয়ের পর একসাথে যে থাকা শুরু হল সেটা শেষ হল যখন রিকার্ডো একেবারে চলে গেল। মারিয়া এই সময়গুলোর হিসাব খুব সহজেই করতে পারে, আর অন্য হিসাব কখনো তার মাথায় কোনোভাবে ঢুকে না।

মারিয়াকে যেদিন ডেভিড হোমে আনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল আর তার আগে স্কারবরোর বাড়িটা বিক্রি করার জন্য কাগজপত্র ঠিকঠাক করা শুরু করছিল, তখন মারিয়া বুঝে ফেলেছিল, তার জীবনের সেইদিনগুলি তার জীবন থেকে একেবারে সরে সরে এতটা দূরে সরে যাচ্ছে যে আর কোনোভাবে সেটা ফিরে আসবে না। নির্বাক মারিয়ার নিশ্চয় তখন মনে হয়েছিল জীবনচক্রের মহাসমীকরণ- জন্ম, শৈশব, বাল্যকাল, যৌবন কাল, পৌঢ়ত্ব আর বার্ধক্যের খেলা। জন্মের পরে যেমন সবাই শিশু থাকে মৃত্যুর আগেও তেমনি সবাই শিশু হয়ে যায়।

স্কারবরোর বাড়িটার ব্যাকইয়ার্ড ভরা ছিল সব্জী বাগানে। সান্দ্রার সেই গ্রামের বাড়ির পেছনের দিকও ছিল সব্জী বাগানে ভর্তি। প্রকৃতির মেয়ে হয়ে মারিয়ার প্রায় মনে হত, প্রকৃতির মধ্যে প্রিয়জন নিয়ে জীবন কাটনোই যে সুখ তা শহর জীবনের এ সময়ের ছেলেপুলেদের কখনো বুঝানো যাবে না। রিকার্ডো মারা যাবার পর সে ভীষণভাবে গ্রামীণ সরলতা আর শহর জীবনের অর্থহীন ছুটোছুটির পার্থক্য বুঝতে পারে। সে বুঝতে পারে পরম প্রিয় ভালোবাসা আর দায়সারা যত্ন নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য। সে বুঝতে পারে, যে ডেভিড ছোট্টবেলায় তাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারতো না সে এখন কোনোরকমে শুধু বৃদ্ধা মায়ের সেবা যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করে। মায়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেই সে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে। হয়তোবা ডেভিড আশেপাশের মানুষদের দেখাতে চায়, সে মায়ের প্রতি কত বেশি যত্নবান। মারিয়ার ডেভিডকে প্রায় বলতে ইচ্ছে করে, পৃথিবীর মায়েরা শুধু থাকা-খাওয়ার দিলেই সুখী হয় না, খুশি হয় না, তারাতো সারাজীবন নিজে না খেয়ে সন্তানদের খাওয়ায়। সন্তানদের জন্য অবলীলায় নিজের সব সুখ শান্তি ত্যাগ করতে পারে। শেষ বয়সে তাদের প্রয়োজন শুধু প্রিয়জনদের একটু সান্নিধ্য আর একটু ভালোবাসা। রিকার্ডোর চলে যাওয়া আর ডেভিডের তাকে এই হোমে এমনভাবে রেখে যাওয়ায় এখন তার মাথায় কিলবিল করে অনেক জিজ্ঞাসা। নির্বাক মারিয়ার মনোজগতের এমন জিজ্ঞাসা হয়তো সে মারা না যাওয়া পর্যন্ত ধরে চলবে।

মারিয়া এখন প্লাষ্টিকের সব্জী-খেলনা খেলে যেমনটি ছোট্ট বাচ্চারা বাজার থেকে কিনে আনা খেলনার সব্জী এনে রান্না-বান্না করে আর মগ্ন হয়ে সময় কাটায়। মারিয়া ঠিক তেমনি শিশুদের মত মগ্ন হয়ে খেলনার সব্জী নিয়ে রান্না করে আর রান্না শেষ হলে খাবারগুলো বেশকিছুক্ষণ টেবিলে সাজিয়ে ডেভিডের জন্য অপেক্ষা করে। তার অপেক্ষার প্রহর যখন কাটে না, তখন সে তার নিজের ভাষায় ছড়া আওড়াতে থাকে যেমন করে আমাদের ছোটবেলায় আমাদের মায়েরা আমাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করতো। এমন করে এক সময় সে ক্লান্ত হলে তার নিজের খাবার সময় হয় এবং তাকে যখন হোম থেকে খাবার দেয়া হয়, তখন তার সেই খাবারটুকু সে সামান্য খেয়ে বেশির ভাগ অংশ রেখে দেয় রিকার্ডো আর ডেভিডের জন্য।

মারিয়ার খেলনা প্রীতি দেখে আমি ডলারামা থেকে তার জন্য কিছু প্লাষ্টিকের সব্জী-খেলনা কিনেছিলাম। এতদিন ওগুলো তাকে দেবার পরিবেশ বা সাহস পাইনি। আজ যখন আমার সাথে মারিয়া ওমন ব্যবহার করলো ফলে আমি কিছুটা সাহস বা বন্ধুত্বের মনোভাব নিয়ে আমার ব্যাগ থেকে ওগুলো বের করে তার হাতে দিলাম। ছোট্ট শিশু খেলনা পেলে যেমন আচরণ করে মারিয়াও তেমন করতে লাগলো। আমার আনা সেই খেলনার মধ্যে একটা ছিল প্লাষ্টিকের বার্গার। খেলনাগুলো হাতে নেবার সময় সে একটা অদ্ভুত শিশু-হাসি দিয়েছিল। কিন্তু খেলনার ভিতর ‘বার্গার’টা দেখে আমার দিকে কট মট করে তাকিয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে দেয়ালে ছুঁড়ে মারলো। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সে চিৎকার করে কী যেন বলতে লাগল। তার নিজের ভাষায়। আমি যেগুলোর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মারিয়ার চিৎকারে হোমের সবাই জড় হয়ে গেলো। হোমের রেসিডেন্ট এবং হোমে যারা কাজ করে তাঁরা সবাই একে অপরের মুখের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। কারণ মারিয়া এমনরূপ কখনো কেউ দেখেনি। মারিয়া মানেই চুপচাপ নিজের মত কাজ করা একজন মানুষ।

মেক্সিকান নার্স ব্রেসিদার কাছে জানতে চেয়েছিলাম মারিয়া চিৎকার করে কী বলছিল। ব্রেসিদা আমাকে জানিয়েছিল, আমি মারিয়াকে যে প্লাষ্টিকের বার্গার দিয়েছিলাম সেটাতে সে প্রচন্ড রাগ করেছে, কারণ বার্গার তার ছেলেকে খেতে দিলে তার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাবে। সে কখনো তার ছেলেকে ‘জাং ফুড’ খেতে দেয় না। সে সব সময় তার ছেলের জন্য তার নিজের বাগানের টাটকা সব্জী রান্না করে। ব্রেসিদা আরো জানিয়েছিল, আমাকে দেখে তার অতীত জীবনের কথা মনে পড়ে যায় যখন তার জীবনে সুখের আনন্দ ছিল। ব্রেসিদা এবার কিছুক্ষণ থেমে আবার বলল, মারিয়া আরো বলেছে, একদিন আমাদের সবাইকে বুড়োবুড়ি হতে হবে। যখন প্রিয়জনরা কেউ কাছে থাকবেনা, এমন কি যে সন্তানের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে আমরা পাগল থাকি সেও আমাদের দূরে ঠেলে দিবে। সন্তানের সামান্যটুকু ভালোবাসা পাবার জন্য বুড়ি মায়ের জীবন যে কীভাবে চেয়ে থাকে তা সন্তানেরা কেউ বুঝে না। আর এই ওল্ড হোম করে তোমরা যারা সব বড়োবুড়িকে এক জায়গাই ফেলে দিয়ে নিজেদের মত আনন্দ ফূর্তিতে জীবন কাটাতে চাও তারা সবাই প্রস্তুত থাকো, বার্ধক্য তোমাদের কাউকে রেহাই দিবে না। তখন বুঝবে ভালোবাসা ছাড়া জীবন কত কষ্টের ! ব্রেসিদা আমার দিকে আবার কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর আবার বলল, ডেভিড অথবা তুমি যদি সত্যি তাকে ভালোবাসতে তাহলে তার আর হুইল চেয়ারে বসে থাকতে হত না, সে আবার আগের মত তার কাজ করতে পারতো, নিজের বাগানের সব্জী দিয়ে সুন্দর করে রান্না করে তোমাদের খাওয়াতে পারতো।

সন্ধ্যায় যখন আমার নিজের ঘরে ফেরার সময় হল তখন মারিয়ার ঘরে একবার ঢু মারলাম। দেখলাম সে গভীর মগ্ন হয়ে ঘুমাচ্ছে, একেবারে ছোট্ট মগ্ন শিশুর মত । ওল্ড হোম থেকে বের হয়ে গাড়ীটা যখন ষ্টার্ট দিলাম তখন বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ঝিমঝিম থেকে বৃষ্টি রূপ নিতে শুরু করেছে মুষলধারে। একবার মনে হল, ওল্ড হোমের সব একাকী থাকা শিশু-মানুষগুলোর পঞ্জীভূত কান্না বৃষ্টি হয়ে ঝরছে টরন্টোর রাস্তায়।

ওল্ড হোমে কাজ করতে এসে প্রতি মুহূর্তে যেসব নতুন নতুন ঘটনার মুখোমুখি হই তাতে জীবনের মানে অন্যরকম হয়ে যায় । বারবার জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়াই। প্রকৃতির ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে, মানুষের সরল ভালোবাসাকে অবলীলায় পা দিয়ে ঠেলে যে আমরা এক অদ্ভুত সভ্যতা আর প্রতিষ্ঠার পেছনে ছুটছি তারা সত্যিই কি জীবনে কখনো পরম তৃপ্তির শান্তি পাবো? না, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা সবাই এক একজন মারিয়া বা ম্যাকেঞ্জী হয়ে জীবনের শেষ দিনগুলি নীরবে চাপা বেদনায় পার করবো ? না, মৃত্যুর প্রহর গোনা দিনগুলি পার করার জন্য শিশুর অভিনয়ে বুকের ভিতরের জমাট কষ্টগুলোকে ভুলার চেষ্টা করবো?