৯ই মার্চ কমনওয়েলথ দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারো কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি দেশে একযোগে দিবসটি পালিত হয়। কমনওয়েলথ দিবসকে নারী ও মেয়ে শিশুদের প্রতি যৌন বৈষম্যমূলক আইন সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের তরুণ সম্প্রদায়। “#সংস্কার৫৩-টুগেদার ফর লিগ্যাল ইক্যুয়ালিটি” নামে এক অনলাইন ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে তারা এ আহবান জানায়। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এ আইনগুলোর বেশিরভাগই বিংশ শতাব্দীতে অচল যা প্রতিনিয়ত একজন মেয়েশিশু, মহিলা বা ভিন্ন লিঙ্গ বৈচিত্রের জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবারের এই ক্যাম্পেইন এর আওতায় বাংলাদেশ একটি “ফোকাস কান্ট্রি” কারণ আশা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকারের সুবিবেচনায় এই ঔপনিবেশিক আইনগুলোতে পরিবর্তন আনা হবে ।

অন্যান্য বছরের থেকে এবছরের কমনওয়েলথ দিবসটি একটু ব্যতিক্রম কারণ, এবছরই যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়েছে আর সেইসাথে যুক্তরাজ্য সরকারের উদ্যোগে কমনওয়েলথভুক্ত দেশমূহের সাথে তার ব্যবসা-বাণিজ্য আর যোগাযোগ বাড়ানোর ত্রে তৈরী করা হচ্ছে। তাছাড়া, এবছরই আফ্রিকান দেশ রুয়ান্ডাতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানদের ২৬তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সংযোগ, রূপান্তর আর উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি সার্বজনীন ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ । কমনওয়েলথ যুবসমাজের মতায়নের লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন সামাজিক বিকাশ খাতে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং তার জন্য কমনওয়েলথ এর সমর্থনে বিভিন্ন যুব নেটওয়ার্ক সংগঠিত হয়েছে। কমনওয়েলথ ইয়ুথ জেন্ডার অ্যান্ড ইকুয়ালিটি নেটওয়ার্ক (সিওয়াইজেইএন) তারই একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুব নেটওর্য়াক যা কমনওয়েলথ রাষ্ট্রের লিঙ্গ, বর্ণ, যৌনতা ও জাতীয়তা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সমতা নিশ্চিত করতে জড়িত।
কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড এবছরের কমনওয়েলথ দিবসের বাণীতে বলেছেন যে এটি এমন একটি দিবস যেদিন আমরা সবাই কমনওয়েলথ এর প্রতি আমাদের স্বপ্ন এবং ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ করি আর আমাদের সার্বজনীন ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সমন্বিত উন্নয়ন আর বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। কমনওয়েলথ দিবসের আলোচনায় যখন সার্বজনীন ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সমন্বিত উন্নয়ন আর বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টি আসে ঠিক তখনি ব্রিটিশরাজ ও তাদের রেখে যাওয়া আইনকানুন গুলোর কথা মনে পরে যায়। যা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সমন্বিত উন্নয়ন আর বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধার েেত্র প্রতিনিয়ত অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ।

বাংলাদেশে কমনওয়েলথ ইয়ুথ জেন্ডার এন্ড ইকুয়ালিটি নেটওয়ার্ক ক্যাম্পেইন লিড তুষার কান্তি বৈদ্য বলেন, রুয়ান্ডায় অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের কাছে নিরপদ গর্ভপাত বিষয়ে আইনী সংস্কার চাওয়া হবে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন নারীর গর্ভপাত শুধুমাত্র তার জীবন বাঁচানোর েেত্রই করা যাবে এই মর্মে যে আইন রয়েছে সেটির সংস্কার জরুরী। সেইসাথে মেয়েদের বিয়ের বয়সসীমা ১৮ থাকলেও, কিছু বিষয়ে তা শিথিলযোগ্য মর্মে স¤প্রতি যে সংযোজন করা হয়েছে সেটির প্রত্যাহার, রাজনীতিসহ সকল েেত্র নারীর এবং লিঙ্গ বৈচিত্রের মানুষের আরো বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং কর্মস্থলে নারীর বা লিঙ্গ বৈচিত্রের মানুষের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ, ছেলে শিশুদের ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিষয়ে আইনী সংস্কারের জন্য সুনিশ্চিত প্রতিশ্রæতি চাওয়া হবে । যুবসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আসন্ন কমনওয়েলথ ইয়ুথ ফোরাম এর মাধ্যমে এই আইন সংস্কারের দাবি জানানোর মাধ্যমে নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্রের মানুষের অধিকার আদায় সহজ হবে । সেইসাথে এই উদ্যোগ একটি সমৃদ্ধশালী সমাজ গড়ায় সহায়ক হবে যা কিনা এবছরের কমনওয়েলথ দিবসের মূলসুর।