মঙ্গলবার গাড়ির চাপায় কিশোরীর মৃত্যুর পর তদন্তকারী টরন্টোর দুই পুলিশ কর্মকর্তা। (ইনসেটে নিহত নাদিয়া)

সুহেল ইবনে ইসহাক: গত ১৯ শে অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১১:৪৫ মিনিটে নাদিয়া মজুমদার নামে ১৭ বছরের এক বাংলাদেশী স্কুলছাত্রী টরন্টো শহরের স্কারবোরো এলাকার বার্চমাউন্ট রোড ও ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউর ইন্টারসেকসনে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু বরণ করে। টরন্টো পুলিশের বরাত দিয়ে সি.বি.সি. নিউজ জানায়, দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে বার্চমাউন্ট রোড এবং ড্যানফোর্থ অ্যাভিনিউ এলাকায়। পুলিশ এসে একটি ধূসর ডজ ক্যারাভান মিনিভ্যান, গাড়ির চালক এবং দুর্ঘটনায় আহত মেয়েটিকে দেখতে পায়।

টরন্টোর প্যারামেডিক্স জানিয়েছে, কিশোরের জীবন-হুমকির মুখে, সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে তাকে টরন্টোর সেন্ট-মাইকেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে মেয়েটি মারা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরটি বার্চমাউন্ট পার্ক কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটের মেধাবী ছাত্রী ছিল। টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড (টিডিএসবি) জানায়, সে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির চালক ঘটনাস্থলে রয়েছেন। সার্জেন্ট পুলিশের ট্রাফিক সেবার মুখপাত্র ওরাং মোমেনি বলেন, ট্রাফিক সার্ভিসের সদস্যরা দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
ডিউটি ইন্সপেক্টর মাইকেল উইলিয়ামস এর ভাষায়, যখন এই দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন কিশোরটি ক্রসওয়াকে ছিল। উইলিয়ামস বলেন, পুলিশ বিশ্বাস করে যে, মিনিভ্যানের চালক বার্চমাউন্ট রোডের দক্ষিণ দিকে ছিল এবং ডানফোর্থ এভিনিউতে পূর্ব দিকে যাওয়ার জন্য বামদিকে বাঁক দিচ্ছিল যখন কিশোরটি বার্চমাউন্ট রোডের পূর্ব দিকে মিনিভ্যান কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্তা হয়। কিশোরটি দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে যাচ্ছিল।

কানাডায় জন্ম নেয়া নাদিয়া মজুমদার এর বাবার বাড়ি সিলেট শহরের রায়নগর আবাসিক এলাকায়। ১৭ বছরের এই তরুণী নাদিয়া মজুমদারের এই অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে এক শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে নিহতের এলাকার নব নির্বাচিত এম.পি.ও সাবেক মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার, একই এলাকার এম.পি.পি. ডলি বেগম, টরন্টো সিটি মেয়র জন টোরিসহ বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন।

পুলিশ তার পরিবারের সদস্য, হাসপাতালে তদন্তকারীদের এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে কথা বলছে। স্কুলের অভিভাবকদের বাড়িতে পাঠানো একটি চিঠিতে টিডিএসবি বলেছে যে, বোর্ডের সমাজকর্মী এবং মনোবিজ্ঞান কর্মীরা বুধবার স্কুলের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সহায়তা এবং পরামর্শ দেওয়ার জন্য স্কুলে থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মুমিনুল হক বলেন, নিহত মেয়েটি তার প্রতিবেশী। তিনি তাকে “খুব সুন্দর,” “সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল” এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের “সর্বদা শ্রদ্ধাশীল” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি জানান, খবর শোনার পর তিনি ঘটনাস্থলে আসেন।

তিনি বলেন, “আমরা এ নিয়ে খুব মর্মাহত। সে আমাদের সামনে বড় হয়েছে। সে আমাদের প্রতিবেশী। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এই জীবনহানির বিচার চাই।”

বার্চমাউন্ট পার্ক কলেজিয়েট ইনস্টিটিউটের ১২ শ্রেণীর ছাত্রী হ্যামিল্টন শহরের অত্যন্ত পরিচিত মুখ আজিজুল মজুমদার সুমন ও হাজেরা বেগম সিপা এর বড় মেয়ে নাদিয়া মজুমদার স্কুল থেকে লাঞ্চ করার জন্যে রাস্তায় বাহির হলে ৪০ বছরের এক মহিলার চলন্ত গাড়ি (ডজ কেরাভেন ভ্যান) তাকে ধাক্কা দেয়।

নিহত নাদিয়ার জানাজার নামাজ গত বৃহস্পতিবার ২১শে অক্টোবর বাদ জোহর টরন্টোস্থ মসজিদ আল-আবেদীন, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার এ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে মরহুমার লাশ কানাডিয়ান বাংলাদেশী ফিউনারেল সার্বিসের সার্বিক তথ্যাবধান ও সহযোগিতায় রিচমন্ড হীলের টরন্টো মুসলিম সেমিট্রিতে দাফন করা হয়।