অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতে ইতিবাচক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে কবে নাগাদ ভ্যাকসিন নেবেন তা এখনও নিশ্চিত করেননি তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর গত বছরের ২৫ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি দেয় সরকার। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আবারও দ্বিতীয় দফায় মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। আগামী ২৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) তার দ্বিতীয় দফা মুক্তির সময়সীমা শেষ হবে। খালেদা জিয়া বর্তমানে তার গুলশানের ভাড়া বাড়ি ফিরোজাতেই আছেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দায়িত্বশীলদের একটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে ইতিবাচক অবস্থানে আছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা একাধিক দায়িত্বশীল জানান, বিএনপি-প্রধান ভ্যাকসিন নেবেন। কিন্তু কবে নেবেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

সূত্রের দাবি, তৃতীয় দফায় শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। পরিবার ও দলের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে দেশের বাইরে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে। ফলে, সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশযাত্রার অনুমতি দেওয়া হলে ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন খালেদা জিয়া। আর বিদেশযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনও বাধা হবে না বলেও জানান একাধিক দায়িত্বশীল।

জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের এখনও ভ্যাকসিন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি ফুলটাইম কোয়ারেন্টিন মেনটেইন করছেন, ফলে আরও একটু সময় গেলে তা হতে পারে। তার ভ্যাকসিনের নেওয়ার ব্যাপারে কোনও নেগিটিভিটি নেই। উনি পজিটিভ।’

তবে, খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘আমি জানি না। নলেজে নেই এটা।’

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ নিয়ে দলের নেতাদের অবস্থান ছিল নেতিবাচক। কোনও কোনও নেতা টিকা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিধন করার অভিযোগও করেছিলেন । যদিও বিএনপির সিনিয়র কোনও কোনও নেতা ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়ে টিকা গ্রহণ করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

স্থায়ী কমিটির একাধিক সূত্র জানায়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিনা রহমান টিকা গ্রহণ করেছেন।

দলীয় একটি সূত্রের ভাষ্য, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ-কেউ টিকা নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়ায় এখন প্রকাশ্যে কেউ টিকার বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী নয়। কোনও কোনও নেতা টিকা নিলেও তা গোপন রেখেছেন। এক্ষেত্রে দলীয় প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া টিকা গ্রহণ করলে নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হবে।

টিকা গ্রহণ করার বিষয়ে নিজের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বলেন, ‘আমার শারীরিকভাবে নানা সমস্যা আছে। এজন্য সিঙ্গাপুর ও দেশে যারা আমাকে চিকিৎসা দেন, তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। তবে আমার জানামতে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) হার্টের কোনও প্রবলেম নেই, তিনি নিতে পারেন। তবে ভালো বলতে পারবেন তার চিকিৎসকেরা।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও মানসিকভাবে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ম্যাডাম। তবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত আামার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেবার ইচ্ছে নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘ম্যাডামের টিকা গ্রহণের বিষয় নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনও আলোচনা হয়নি। এটা তো তার পরিবার ও চিকিৎসকেরা দেখভাল করবেন। টিকা তো নিতে হবে সবাইকে। আমরা টিকা নিয়ে ডিপ্লোমেসি করছে না, ভ্যাকসিন নিয়ে পলিটিক্স করছি না। টিকা যেহেতু অ্যাভেলেবল হয়েছে, আমরা সবাই নেবো। বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিগণ টিকা গ্রহণ করেছেন আগে, কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়নি। রাষ্ট্রপ্রতি-প্রধানমন্ত্রী টিকা নিলে জনগণের মধ্যে আস্থা বাড়তো।’

ইকবাল হাসান মাহমুদ জানান, তিনি নিজে আগামী ২০ মার্চের পর টিকা গ্রহণ করবেন।