অনলাইন ডেস্ক : গত কয়েক বছর ধরেই নানা কারণে দেশে শিল্পোদ্যোগের বড় অংশই শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখছে না। তাই টিকতে না পেরে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা। সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি এই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে।

খোদ সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের (ডিআইএফই) হিসাব অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর ১৫ হাজার ৯৬৫টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা ১ হাজার ৯১৫টি এবং গার্মেন্টসের বাইরে অন্যান্য খাতের কারখানা ১৪ হাজার ৫০টি।

এসব কারখানায় কাজ করতেন ১০ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকের বেশির ভাগই বর্তমানে বেকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি মাঠ পর্যায় থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, এর বাইরেও গত কয়েক মাসে ৮৭টি কারখানা থেকে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গার্মেন্টস কারখানার সংখ্যা ৭৫টি। অন্যদিকে বন্ধ হওয়া কারখানার তালিকায় লে অফ (সাময়িক বন্ধ ঘোষণা) হওয়া কারখানা রয়েছে ৩৭টি। এসব কারণে শ্রম অসন্তোষও চলছে দেশের বিভিন্ন কারখানায়।

ডিআইএফইর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় ৬৫টি কারখানায় শ্রম অসন্তোষ চলছে। এর মধ্যে ৫৫টি গার্মেন্টস কারখানা।

এছাড়া বন্ধ হওয়া প্রায় ২ হাজার গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী। তবে এ তালিকায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত পোশাক মালিকের বাইরেও বিপুলসংখ্যক কারখানা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বন্ধ হওয়া এসব কারখানা মূলত স্বল্প পুঁজির এবং অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির। রপ্তানি আদেশ বাতিল কিংবা স্থগিত হওয়ায় এবং সময়মতো তৈরি পণ্যের অর্থ না পাওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। কারখানা বন্ধ হওয়া সংক্রান্ত এ তথ্য ও পরিস্থিতি শ্রম মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়েও জানানো হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিআইএফইর যুগ্ম মহাপরিদর্শক শামসুল আলম খান বলেন, দেশব্যাপী মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর কারখানা বন্ধ হওয়ার আলোচ্য চিত্র তারা পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

গত ফেব্রুয়ারি থেকেই বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের তোড়জোড় শুরু হলেও বাংলাদেশে এর প্রকোপ শুরু হয় মার্চ থেকে। ক্রমেই সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার মার্চের শেষের দিকে এসে লকডাউনের আদলে দেশব্যাপী ছুটি ঘোষণা করে। দুই থেকে আড়াই মাস শেষে অর্থনীতি ধীরে ধীরে চালু করা হলেও গতি আসেনি। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানিও কমে গেছে ব্যাপক হারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার। এর প্রভাবে ব্যাপক হারে কর্মহীন হচ্ছেন কর্মী।

জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বাইরেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হচ্ছেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) হিসাবে করোনা পরিস্থিতিতে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।