অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বে সবার আগে নিজেদের তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু এই টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। তারা রাশিয়ার এমন কর্মকান্ডকে বেপরোয়া, বোকামি ও অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিকা অনুমোদন দেয় নি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম মহাকাশে স্পুটনিক স্যাটেলাইটের সফল উড্ডয়ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। এবারও তারা সেই ধারা অনুসরণ করেছে। সেই স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিতে তারা এই টিকার নাম দিয়েছে ‘স্পুটনিক-ভি’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে নতুন করে এক শীতল যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়া।

তারা এই টিকার কোনো পরীক্ষা, ডাটা প্রকাশ না করে আকস্মিকভাবে এটা অনুমোদন দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার এক মেয়ের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে এই টিকা। এতে তার দেহে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। এই টিকার মেয়াদ শরীরে দু’বছর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু রাশিয়ার এমন দাবি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন বিজ্ঞানীতো পুতিনের এই উদ্যোগকে অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া এই টিকা হতে পারে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপর্যয়কর। অন্য এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যেসব টিকা অধিক অনিরাপদ ও কম কার্যকর এমন টিকার ব্যবহারের ফলে যে ক্ষতি হবে, তা বর্তমান সমস্যাকে আরো অপরিসীম পর্যায়ে নিয়ে যাবে। তা সত্ত্বেও রাশিয়া দাবি করেছে, এরই মধ্যে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডোজের জন্য ২০টি দেশ থেকে অর্ডার পেয়েছে তারা। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তে কয়েক লাখ ডোজ কেনার চুক্তি করেছেন। রাশিয়ান কর্মকর্তাদের মতে, আগেই এই টিকা কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত, ব্রাজিল ও সৌদি আরব।
ক্রেমলিন এবং তাদের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া থেকে রাশিয়ার সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের সারা বিশ্বের পাইওনিয়ার বা অগ্রদূত বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই টিকাকে জাতীয় প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এর আগে গত মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। তারা বলে, পশ্চিমাদের করোনা ভাইরাস তৈরির গবেষণা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করার চেষ্টা করেছে রাশিয়া। এভাবে গবেষণা চুরি করে তারা টিকা তৈরির লড়াইয়ে বিজয়ী হতে চায়।
ওদিকে পুতিনের ঘোষণা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের এজেন্সি রাশিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিকাকে অনুমোদন দেয়ার আগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। ওদিকে এই টিকার মান সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছে জার্মানি। তারা বলেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ওই টিকাকে অনুমোদন দেবে, যা পূর্ণাঙ্গ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জার্মান নিউজপেপার বিষয়ক নেটওয়ার্ক আরএনডি’কে বলেছেন, রোগীদের নিরাপত্তা আমাদের কাছে সর্বাধিক অগ্রাধিকারে রয়েছে। রাশিয়ার টিকার মান, কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জীববিজ্ঞানী প্রফেসর ফ্রাঁসোয়া ব্যালক্স কড়া সমালোচনা করেছেন পুতিনের। বলেছেন, তিনি বেপরোয়া ও বোকামি করছেন। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া একটি টিকাকে অনুমোদন দেয়া অনৈতিক। ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ড. মাইকেল হেড বলেন, রাশিয়ার টিকা নিয়ে প্রকৃতপক্ষে কি ঘটনা ঘটছে তা আগেভাবে পরিষ্কার করে কিছুই বলা হয় নি। কোনো টিকা অনুমোদন দেয়ার আগে তার ওপর জনগণের আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মহামারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর কিথ নিল বলেন, স্বল্প পরিসরে একটি টিকাকে নিরাপদ মনে হতেই পারে। কিন্তু তা সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম এটা প্রদর্শন করতে বড় রকমের ট্রায়াল প্রয়োজন। ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির প্রফেসর ড্যানি আল্টম্যান বলেন, একটি টিকাকে অনুমোদন দেয়ার আগে তার পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি কম নিরাপদ ও কর্ম কার্যকর টিকা আমাদের বর্তমান সঙ্কটকে অপরিসীম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। আমি আশা করবো এসব ধারা অনুসরণ করা হবে।