শাহনুর চৌধুরী : অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গত বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সে তার দ্বিতীয় বাজেট পেশ করার সময় বলেছেন, ‘এখন আমাদের নজর দেয়ার সময় কানাডিয়ানদের জীবন মানকে আরও সাশ্রয়ী করার দিকে, দেশের অর্থনীতিকে আরো বৃদ্ধি করার দিকে। এজন্য আমাদের প্রয়োজন স্মার্ট ইনভেস্টমেন্ট ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা।

বাজেট বিশ্লেষকেরা বলছেন, বরাবরের মতো অটোয়ার সবাই সরকারের এসব ‘বিস্তৃত লক্ষ্যের’ সাথে একমত হবেন। তবে আসল কথা হলো কীভাবে এসব লক্ষ্য অর্জিত হবে বা কীভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করা যায়? অর্থমন্ত্রী ফ্রিল্যান্ডের বাজেট বক্তৃতার সময় কনজারভেটিভ পার্টির অন্তবর্তীকালীন নেতা ক্যান্ডিস বার্গেন সংসদ লবিতে সাংবাদিকদের বলছিলেন, তার দলের এমপিরা এই ‘নিয়ন্ত্রনহীন ব্যায়ের’ বাজেট সমর্থন করবে না। এটি এনডিপির দায়িত্বহীন ও করভারে জর্জরিত একটি সাধারণ বাজেট। অন্যদিকে কনজারভেটিভ নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা পিয়েরে পোইলিভর এক টুইট বার্তায় বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটি একটি সমাজতান্ত্রিক জোট বাজেট। এই বাজেট দেশের মুদ্রাস্ফীতিকে ‘টার্বোচার্জ’ করবে। এই বাজেটে এনডিপির অবদান তুলনামূলকভাবে খুবই সামান্য, বিশেষ করে আর্থিক অর্থে।

তবে এনডিপির দাবি স্বাস্থ্য ও আবাসন খাতে আগামী ৫ বছরের জন্য প্রস্তাবনাগুলো লিবারেল ও নিউ ডেমোক্রেটদের সাথে আলোচনা থেকেই বেরিয়ে এসেছে। এই উপাদানগুলো ছাড়া কানাডিয়ানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন এই বাজেট তৈরি করেছে উদারপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ এনডিপি সরকার। বাজেটে প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২০২৭ সালে ঘাটতি কমে ৮.৪ বিলিয়ন ডলারে স্থীর হবে। যা হবে লিবারেলদের আমলে সবচেয়ে কম ঘাটতি।
তবে অটোয়া কীভাবে একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে তা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। বিশেষত মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফেডারেল সরকারের কৌশল কী হবে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

ফ্রিল্যান্ড বলেছেন, আমাদের কৌশলটি হল মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেনের মতো। স¤প্রতি তিনি ‘মডার্ন-সাপ্লাই-সাইড ইকোনমিক্স’ থিওরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করে সফল হয়েছেন। ফ্রিল্যান্ড বাজেটে যুক্তি দিয়েছেন যে, ইয়েলেন গত জানুয়ারিতে এক বক্তৃতায় যা বর্ণনা করেছেন কানাডায় লিবারেলরা গত সাড়ে ছয় বছর ধরে কমবেশি তা করার চেষ্টা করে চলেছে। তবে লিবারেলরা এ পর্যন্ত যেভাবে অর্থনীতিকে পরিচালিত করতে চেয়েছে ইয়েলেন সেটা আরো সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই পদ্ধতিটি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে অব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট মোচারের মতো রক্ষণশীল নেতারা এই পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতি গতি সঞ্চার করে গেছেন। তাই কানাডার ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ‘মডার্ন সাপ্লাই-সাইড সিস্টেমের’ পক্ষেই বাজি ধরেছেন ফ্রিল্যান্ড। বস্তুত, ফ্রিল্যান্ড এমন একটি বাজেট দিয়েছেন যাতে আবাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশ ও জলবায়ু শোধনসহ অভিবাসন এবং প্রশিক্ষণের মতো সব বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। এসব খাতে অর্থ সংস্থানের দিক নির্দেশনাও এতে আছে। ফ্রিল্যান্ড বলেন, মডার্ন সাপ্লাই-সাইড অর্থনীতি সাপ্লাই সাইডারদের মূল অন্তদৃষ্টি থেকে নেয়া। তবে এটি প্রগতিশীল, মানব কেন্দ্রীক দৃষ্টিভঙ্গীকেও সমর্থন করে। ব্যবসায়িক মনোভাবাপন্ন সমালোচকদের অভিযোগ ছিল যে ট্রুডো প্রশাসনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগের অভাব রয়েছে। এবারের বাজেটের শিরোনামে ‘অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেয়ায় তাদের সমালোচনা হয়তো কিছুটা কমবে, তবে একেবারে বন্ধ হবে না। ঠিক যেমন গত বছরের বাজেটে ‘প্রাগ্রামের’ কথা বলা হয়েছিল কিন্তু তারা বিশ্বাসী ছিল না। ফ্রিল্যান্ড বাজেটে রাজস্ব শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি ঋণ থেকে জিডিপি অনুপাত হ্রাসের কথা বলেছেন। বাজেটে পরিকল্পিত বার্ষিক ব্যয়ে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার কমানোর জন্য দু’টি পৃথক পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও কার্বন কেপচারে বিনিয়োগের জন্য কর রেয়াতের কথাও বাজেটে আছে। মোট কথা সরকার কর কমাতে, নিয়ন্ত্রণ কমাতে এবং বাজেটে ভারসাম্য আনতে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। কিন্তু মূল বিতর্কের বিষয় হচ্ছে এই সরকার কীভাবে এই বাজেট বাস্তবায়ন করবে এবং কতটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। সূত্র : সিবিসি