অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় করোনার টিকা গ্রহণ, টিকা না নিলে কী সমস্যা, নিলে কী সুবিধা- এসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় সরকারি নীতি পরিবর্তনের সমালোচনা শুরু হয়েছে।
দেশটিতে করোনা বিধি-নিষেধ নিয়ে সরকার এক দিকে নীতিমালা ঘোষণা করছে অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বলা হচ্ছে, নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সরকারের ভুলগুলি সহজেই চোখে পড়বে। করোনা মহামারীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচিত ও অনির্বাচিত কর্মকর্তারা একদিকে বিধি-নিষেধ আর নিয়ম-নীতি জানাচ্ছে অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা সরিয়ে ফেলছে।

ফুলডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণে প্রাদেশিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার ‘ধন্যবাদ’ দিলেও প্রস্তাবিত ভ্যাকসিন পাসপোর্টের বেলায় বলা হচ্ছে ‘দুঃখিত’। এছাড়া একবার বলা হচ্ছে ‘নো জ্যাব, নো জব’ আরেক বার বলা হচ্ছে, টিকা না নিলে সরকারি চাকুরেরা বেতন-ভাতা পাবেন না। এক বছর আগেই এসব নীতিমালার কথা বলা হলেও এখন আরো সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে আবারও প্রমাণ হয়েছে- এ দেশে জনগণ যদি সরকারকে এক ইঞ্চি ছাড় দেয় তবে সরকার প্রতি ক্ষেত্রে কয়েক মাইল পাড়ি দেবে।

সরকারি ও জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মহামারিটি শেষ করার জন্য আগে থেকেই টিকাকরণ কার্যক্রমকে উদ্বুদ্ধ করছেন। বলা হয়েছিল, এটি নিরাপদ, কার্যকর এবং দেশকে করোনামুক্ত রাখতে সহায়তা করবে। সেই লক্ষ্যে প্রথমে নাগরিকদের টিকা গ্রহণে উৎসাহিত ও পরে হুমকি দেয়া হয়েছিল । অন্টারিওসহ অনেক প্রদেশে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ হওয়া সত্তে¡ও মহামারি বিদায় না নেয়ায় এখন সরকার ‘বুস্টার ডোজের’ কথা বলছে। এছাড়া টিকা নেয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার ‘দায়’ এড়িয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও বিধি-নিষেধ আরোপের পথে হেঁটেছে। অর্থাৎ নতুন ‘গোলপেস্ট’ নির্ধারণ করেছে।

সমালোচকেরা বলছেন, কানাডা জুড়ে নতুন পদক্ষেপ কী হবে তা অনুমান করার জন্য তী² নজরদারি বা খুব বেশি মেধাবী হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইসরাইল ও ফ্রান্সে বুস্টার ডোজের জন্য ‘ফুল ভ্যাকসিনেটেড’ টিকার সংজ্ঞাই পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে এখন কেউ ২য় ডোজ নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে বুস্টার ডোজ না নিলে তাকে ‘আনভ্যাকসিনেটেড’ গণ্য করা হয়। কানাডাকেও হয়তো সেই পথেই হাঁটতে হবে।

সরকার হয়তো বলবে, প্রয়োজনের তাগিদে ‘গোলপোস্ট’ পরিবর্তন করতে হয়। অর্থাৎ পরিস্থিতির প্রয়োজনে নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হয়। কিন্তু এই পরিবর্তন যদি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তা হলে তাতে অটল থাকা সম্ভব হয় না। গত এপ্রিলে অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডেগ ফোর্ড টরন্টোর কুইন্স পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্টারিওবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে করোনার কয়েকটি বিধি-নিষেধ বাতিল করেছিলেন। এর আগে তিনি এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তবে শেষ কথা হচ্ছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো করোনার বিরুদ্ধেও সরকারকে দীর্ঘ লড়াই করতে হবে। ৯/১১-এর বিশ বছর পরও যেমন এখন বিমানবচন্দরে জুতা খুলে তল্লাশি চালাতে দেখা যায় তেমনি করোনা মহামারিও আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। প্রথমে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও এখন তা ৫ বছরের শিশুর পর্যায়ে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে সরকারও তার ক্ষমতার প্রয়োগ করে যাবে। সূত্র : রেডিও কানাডা