অনলাইন ডেস্ক : কানাডায় করোনা বিধি-নিষেধ একে একে তুলে নেয়া হচ্ছে। জীবনযাত্রা ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। কিন্তু এর মধ্যেও বিপাকে রয়েছেন টিকা বিহীনরা। দেশটিতে যারা এখনো করোনার টিকা নেননি তাদের বিমানে ও ট্রেনে চড়তে দেয়া হচ্ছে না। করোনা বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হলেও তাদের ক্ষেত্রে এখনও ফেডারেল সরকার কেন এই আদেশ বজায় রেখেছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন টিকা বিহীনরা। অন্টারিওর ব্রাম্পটনের তামিকা মেকিনটোশকে গত মাসে তার দাদার অন্ত্র্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে জামাইকায় যাওয়ার জন্য বিমানে চড়তে দেয়া হয়নি। কেননা তিনি করোনার টিকা গ্রহনের সনদ দেখাতে পারেন নি। এখন তিনি প্রতিদিনই একের পর এক করোনার বিধি- নিষেধ তুলে নেয়ার খবর শুনেন আর তার দাদাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জ্যামাইকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণের কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। মেকিনটোশ বলেন, দাদার শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারাটা আমার জন্য ছিল খুবই কষ্টের। এখন যতক্ষণ পর্যন্ত আমি শারীরিকভাবে তার সমাধিস্থলে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে না পারি ততক্ষণ আমার মনের কষ্ট লাঘব হবে না। কিন্তু ভ্যাকসিন সনদ না থাকায় আমাকে বিমানে চড়তে দেয়া হচ্ছে না। আমি মনে করি না এটা ন্যায্য। কারোনার সব বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হচ্ছে। অথচ আমার চলাচলের অধিকার নেই। আমি এখনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটকে আছি, কোথাও যেতে পারছি না। ফেডারেল সরকার কেন এখনো এই নিয়ম বজায় রেখেছে তা আমার বোধগম্য নয়। করোনার টিকার হার বাড়ানোর জন্য কানাডা সরকার ২০২১ সালের নভেম্বরে ‘ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট’ বা বাধ্যতামূলক টিকার নিয়ম কার্যকর করেছিল। ওই নিয়মের আওতায় টিকা না নিলে বাস, ট্রেন ও বিমানে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে টিকা বিরোধীরা তখন থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। কিছু দিন আগে এই ইস্যুতে কানাডাজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও অবরোধ হয়েছে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে অনেক প্রদেশ ‘ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট’ কর্মসূচী বাদ দিতে বাধ্য হয়েছে। মেকিনটোশ বলেন, আমি মনে করি আমার কোন একটি বিষয় নির্বাচন করার অধিকার আছে। আমি টিকা না নেয়ার বিষয়টি বেছে নিয়েছি। কিন্তু এর জন্য আমার অন্য অধিকার কেড়ে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রসঙ্গত, কানাডায় এখন পর্যন্ত ৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৮৫ শতাংশ লোক সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছে। ওমিক্রন তরঙ্গের পর বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশটিতে বেশিরভাগ বিধি-নিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে। এর ফলে টিকা বিহীন লোকেরাও এখন রেস্তোরাঁ, জিমনেসিয়াম ও স্টেডিয়ামের মতো ভেন্যুগুলোতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু গণ পরিবহনে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞাটি এখনো বলবত রয়েছে।
ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নরওয়ের মতো অনেক দেশে এখন করোনা বিধি-নিষেধ সম্পূর্ণ তুলে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে গ্রিস ও জ্যামাইকার মতো কিছু দেশে এখনো টিকাবিহীনদের প্রবেশের আগে করোনা পরীক্ষা করে নিতে হয়। পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসলেই তাদেরকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। অন্যথায় বিমানবন্দর থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার টিকাবিহীন একজন নাগরিক কেথি নিউডর্ফ যিনি ভ্রমণ করতে আগ্রহী, কিন্তু নিয়মের বেড়াজালে আটকে গেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কানাডা সরকার অন্য দেশে কি হচ্ছে সে দিকে নজর দিচ্ছে না। এখানে আমার পছন্দমতো চলাফেরার স্বাধীনতা নেই। আমি কুইবেক বা অন্য কোথাও যেতে পারি না। আমার ট্রেনে বা প্লেনে চড়ার অনুমতি নেই। এখানে এক দেশে দুই নিয়ম চলছে। সূত্র : সিবিসি