অনলাইন ডেস্ক : ঘড়ির কাটায় তখন ঠিক ঠিক সকাল ৮টা। ভ্যাংকুভারের পুর্ব হেস্টিংস স্ট্রিটে দেখা গেল একদল তরুণ-তরুণী কোকেন সেবনে ব্যাস্ত। তুষারপাতের মধ্যেও রাস্তায় এসময় দেখা যায় তারা দাঁড়িয়ে রয়েছে মাদক গ্রহণের জন্য। আবার কেউ কেউ মানুষের ভিড় থেকে একটু দূরে গিয়ে ফাঁকা জায়গা খুঁজছেন মাদক সেবনের জন্য।

এমন দৃশ্য এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যের ভ্যাংকুভার শররের অলি গলিতে। আবার এও দেখা যায় কখনও রাস্তার পাশের দোকানগুলোর সামনেও ভিড় জমাচ্ছে কোকেন গ্রহণের জন্য। গায়ে কম্বল জড়িয়ে তরুণীরাও যেন পিছিয়ে নেই প্লাষ্টিক টিউবে করে কোকেন নেয়ায়।

স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছে, রাস্তাগুলো যেন নরকে পরিণত হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার দেখা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদকসেবীদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কোনো বাধা দেওয়া দূরে থাক বরং কিনা বলছে তেমন কোনো ভুল তাদের চোখে ধরা পড়ছে না।

রাজ্যের আইন অনুযায়ী একজন তার সাথে ২.৫ গ্রাম পর্যন্ত হেরোইন, ফেন্টানিল, কোকেন, মেটামফেটামিন বা উত্তেজক মাদক বহন করতে পারবে। আর এই আইনের ফলে এই পরিমান মাদক বহনকারীরা গ্রেপ্তারের আওতামুক্ত। এক তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালে ১১ হাজারেরও বেশি ব্রিটিশ কলম্বিয়ান অতিরিক্ত হারে মাদক সেবনের কারণে মৃত্যুবরণ করায় জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়। গত ৬ বছরে এই রাজ্যে মাদক সেবনের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে আইন সংশোধনের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী ক্যারোলিন ব্যানেট। আর পুলিশের স্টাফ সার্জেন্ট ক্রিজ ক্লার্ক বলেন, ‘অল্প মাদক পরিবহনের সাথে যারা যুক্ত তাদেরকে বোঝানোর সময় এসছে। বিচার বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধের পাশাপাশি সমাজকেও কলুষিত করছে। একমাত্র প্রাণ বাঁচাতেই আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।’

জাষ্টিন ট্রæডো সরকার ২০২১ সালে প্রনীত বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের মধ্যে ১৫২ মিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্তদের সুচিকিৎসার জন্য আর ১৩৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে পুনর্বাসনের জন্য। লিবারেল পার্টির এক সদস্য মাদক নির্মূলে টরেন্টো ও এডমন্টন রাজ্যকে অনুসরণের দাবি জানান।
গত মঙ্গলবার এক বক্তব্যে রাজ্যের চিফ করোনার লিসা লাপোয়েন্ট জানান, এখন পর্যন্ত ২২৭২ জনের বেশি মাদক সেবনের কারণে মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৪৪ বছর বয়সী ব্যাক্তিরাও রয়েছেন। এই অকাল মৃত্যু হার কমাতে একযোগে প্রশাসন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. পেক্সটন ব্যাচ এক সংবাদ সম্মেলনে তার আবেগী প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমরা যেভাবেই হোক ব্যর্থ হচ্ছি প্রতিদিন এই মৃত্যুহার ঠেকাতে। সত্যিকার অর্থে কিছু করতে পারছিনা নানা সীমাবদ্ধতার জন্য। তবে আমি আশা করছি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর সরকার এই নরক থেকে বের করে আনার পথ বাতলাবেন।’ সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ