মাছুমুর রহমান বাপ্পী: গত ৩১শে মে, কানাডার টরন্টো শহরের মুসলিম উম্মাহর জন্য ছিল একটি বিশেষ দিন।

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার অব কানাডার ভবনটি স্থায়ী ভাবে চার্চ থেকে মসজিদে রূপান্তরিত হলো। দুপুর ১:৪৫ মিনিটে সরকারি কাগজ পত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হলো “মসজিদ আল-আবেদীন”। মুফতি, হাফেজ আসলাম উদ্দিন আল-আজহারীর নিরলস প্রচেষ্টায় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ভাড়ার মাধ্যমে শুরু হয় মসজিদের কার্যক্রম।

মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যত পরিকল্পনার দিকে লক্ষ্য রেখে ৬৩০ হাজার কানাডিয়ান ডলার জমা দানের মাধ্যমে স্বাক্ষর করা হয়েছিল এই ৭.৮ মিলিয়ন ডলার এর ভবনটি।
চুক্তিপত্র অনুযায়ী গত ৩১শে মে ২০২২ দিনটি ছিল আরো ৫.৬৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে জায়গাটিকে চার্চ থেকে থেকে মসজিদে রূপান্তরিত করার শেষ তারিখ।

কোভিড-১৯ এর কারণে মসজিদের জন্য ফান্ড সংগ্রহের কাজটি অনেকটা পিছিয়ে ছিল। কোনো মসজিদ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাসায় গিয়ে ফান্ড সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য ছিল। তাই সবার মধ্যে ফুটে উঠেছিল দুশ্চিন্তার ছাপ, হয়তবা এই স্বল্প সময়ের মধ্যে এত বড় অঙ্কের টাকা জোগাড় সম্ভব হবে না, উপরান্ত জমাকৃত ৬৩০ হাজার ডলার ও বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল।

কিন্তু মানুষের সাধ্য যেখানে গিয়ে শেষ হয় আল্লাহর সাহায্য সেখান থেকেই শুরু হয়। আল্লাহর এই নতুন ঘরটির ব্যাপারে ও খোদায়ি এই অমোঘ বিধানটির ব্যাতিত্রæম ঘটেনি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর হাতে সময় মাত্র ৮ মাস। মহান রব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে, মুফতি আসলাম উদ্দিন আল আজহারী সাহেবের নেতৃত্বে এক দল দক্ষ ও নিবেদিত প্রাণ, নারী-পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সল্প সময়ের মধ্যেই সম্ভব হয় এই বিশাল অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করা। (যদিও কিছু অর্থ কর্জে হাসানা রয়েছে)
বরফের চাদরে ঢাকা পৃথিবীর ২য় বৃহত্তর দেশ কানাডার বুকে দ্বীন ইসলাম এর কাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তারা ছুটে গিয়েছিলেন দেশের আনাচে-কানাচে।

শুধু তাই নয় অবশেষে যেতে হয়েছে নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ফিলাডেলফিয়া ক্যালিফোর্নিয়া, লন্ডনের ইস্ট লন্ডন, হোয়াইট চ্যাপেল, ব্রিকলেন এর বিভিন্ন অলিতে,গলিতে। স্বেচ্ছাসেবক দলের তালিকায় ছিলেন বিভিন্ন মসজিদের ইমাম,মুসল্লি, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, সমাজকর্মী ও স্টুডেন্ট সহ অনেকেই।

উল্লেখ্য যে বিশ্বের আনাচে-কানাচে থেকে অনেক মা-বোনেরা ও তাদের গহনা এবং টাকা পয়সা দিয়ে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
উদ্দেশ্য ছিল একটাই কিভাবে আল্লাহর ঘরটি স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। মাগরিবের নামাজের পরপরই শুরু হয় শুকরিয়া আদায় ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান।

আবু বকর মসজিদের শিক্ষক মৌলানা ক্বারী ইমরান সাহেবের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তৎসঙ্গেই মুফতি আসলাম উদ্দিন আল আজহারী ঘোষণা দিলেন “আলহামদুলিল্লাহ আজ থেকে আল্লাহর জমিনের এই অংশটি (চার্চটি) স্থায়ীভাবে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার অফ কানাডা নামে মসজিদে রূপান্তরিত হলো”। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত মুসল্লিরা খুশির কান্নায় বুক ভাসিয়ে ফেলে। আল্লাহু আকবার,ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরা মসজিদ প্রাঙ্গণ। এ যেন এক স্বর্গীয় উপলব্ধি।
উক্ত মহতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কানাডার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ইসলামিক স্কলার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ইমাম কাউন্সিল অব কানাডার সভাপতি শেখ রাফাত মোহাম্মদ, ইসলামিক সোসাইটি অফ টরোন্টো এর ইমাম মোহাম্মদ বদানীয়া,শেখ ফয়েজ ইয়াহিয়া, আবু হুরায়রা মসজিদের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ হাসান।

মসজিদ তাকওয়া এর ইমাম হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া পাটেল এর দোয়া ও রাতের খাবারের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।