কানাডার অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক : ফেডারেল সরকার কানাডায় বিদেশীদের বাড়ি কেনার উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়াতে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গত ৪ ফেব্রæয়ারি, রোববার এমনটিই জানিয়েছেন। ২০২২ সালে প্রথম ঘোষিত এই নিয়মটি এখন ২০২৭ সালের শুরু পর্যন্ত বাড়ানো হবে। তবে এ আইন কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, উদ্বাস্তু দাবিদার এবং অস্থায়ী কর্মীদের জন্য শিথিল থাকবে। এরা ছাড়া বিদেশী নাগরিক এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কানাডায় আবাসিক সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

বিদেশীদের বাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিধান ১ জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য কার্যকর করেছিল কানাডা। আইনে বলা হয়েছে, আগামী দুই বছরের জন্য কানাডীয় নন, এমন যে কোনো ব্যক্তির বাড়ি কেনা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, তারা বাড়ি কিনতে পারবেন না। নতুন এ আইন লঙ্ঘন করে কেউ বাড়ি কিনলে তাকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে। ‘অনুৎপাদনশীল বিদেশী মালিকানা’ ঠেকাতে কানাডার সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।

কানাডার বড় বড় শহরে আবাসন ব্যয় বেড়েছে। এ খরচ কমাতে ২০২২ সালের জুনে আইনটি পাস করেছিলেন কানাডার আইনপ্রণেতারা। এরপর ১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে তা কার্যকর করা হয়। ফ্রিল্যান্ড রোববার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘বিদেশী ক্রেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বৃদ্ধি করে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে বাড়িগুলো কানাডিয়ান পরিবারের বসবাসের জন্য বাড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হবে এবং একটি অনুমানমূলক আর্থিক সম্পদে পরিণত হবে না।’ এ দিকে, সরকারের এ উদ্যোগ কানাডায় বাড়ির দাম কমার পক্ষে সহায়ক এবং আবাসনের সামর্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ কানাডার সামগ্রিক হাউজিং বাজারের তুলনামূলকভাবে ছোট অংশই অ-কানাডিয়ানদের মালিকানাধীন।

উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে কিছু প্রভিন্সে অনাবাসীদের মালিকানাধীন বাজারের শেয়ার মাত্র দুই থেকে ছয় শতাংশের মধ্যে ছিল। ২০২১ সালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় মাত্র ১.১ শতাংশ বাড়ি বিক্রিতে একজন বিদেশী ক্রেতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও বাড়ি কেনার নিয়মে আরও ছাড় রয়েছে যা চার বা ততোধিক আবাসস্থল বা কিছু কম জনবহুল এলাকায় বিল্ডিং কেনার অনুমতি দেয়। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রেন্ডন ওগমুন্ডসন গত বছরের শেষের দিকে সিবিসি নিউজকে বলেছিল যে, ‘বিদেশী ক্রেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা অর্থনৈতিক নীতি বা আবাসন নীতির চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ছিল।’ বিদেশীরা কানাডায় অনেক বাড়ির মালিক, এমনটাও নয়। সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, অন্টারিওর ২ দশমিক ২ শতাংশ, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ৩ দশমিক ১ শতাংশ আবাসনের মালিক বিদেশী। এ ছাড়া টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ ও ৪ দশমিক ২ শতাংশ আবাসনের মালিক অ-কানাডীয়।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সেন্টার ফর আরবান ইকোনমিকস অ্যান্ড রিয়েল স্টেটের পরিচালক থমাস ডেভিডঅফ বলেন, কানাডার সবচেয়ে বড় দুটি শহর টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার। এ দুটি শহরে এমনিতেই বাড়ির দাম বেশি। এই দুই শহরে নতুন আইন খুব কমই কাজে আসবে। আবার কানাডায় বিদেশীদের বাড়ি কেনা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই অঙ্গরাজ্যে কর বাড়ানো হয়েছে।

কানাডায় বিদেশীদের বাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। প্রথম এমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় ২০১৭ সালে। ওই সময় কয়েক শ কোটি ডলারের ১০ বছরের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। নি¤œ আয়ের মানুষসহ কানাডীয়দের বাড়ির মালিক হওয়ার সুযোগ করে দিতে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। নতুন যাঁরা বাড়ি কিনবেন, তাদের জন্য এ প্রকল্পে করসুবিধা ও বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল।

এবার আইন করে যেসব এলাকায় বাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেসব এলাকার মধ্যে রয়েছে মহানগর এলাকায় তিন কিংবা এর কম ইউনিটের বাড়ি, শুধু এক পাশে বাড়ি (অন্য পাশ ফাঁকা), অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের ফ্ল্যাট। কয়েক বছরে কানাডার এমন মহানগর এলাকায় মানুষের আবাসন খরচ বেড়েছে। সূত্র : সিবিসি নিউজ