অনলাইন ডেস্ক : করোনা মহামারির সংক্রমণ রোধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো কানাডাতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিশুদের অনলাইনে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে শিশুরা কতটুকু অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কানাডায় স¤প্রতি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৭৫% শিক্ষার্থী অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষায় কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে না। এতে দেখা গেছে, অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষায় ৩য় গ্রেডের একজন শিক্ষার্থী দেখে দেখে বই পড়তে পারে না, পড়ার সময় সে অনেক শব্দ বানান করে উচ্চারণ করে আবার কিছু শব্দের উচ্চারণই করতে পারে না। অথচ সরাসরি স্কুলে পড়া ৩য় গ্রেডের একটি শিশুর এই সমস্যা হতো না।
শুধু অনলাইন শিক্ষায় নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনলাইনে কাজের ফলে কর্মীর দক্ষতা কমে যাচ্ছে বলে সমীক্ষায় দেখা গেছে। জন বেহেন নামে এক ব্যাক্তি মিনি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তিনি জুম মিটিংয়ে জানান, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সময় তিনি লক্ষ্য করেছেন তার অনেক কর্মীর কর্ম দক্ষতা অনেক কমে যায়। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে এমনটা হলে শিশুদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে তা সহজেই অণুমেয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশুদের এভাবে পিছিয়ে পড়াতে শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজ বিজ্ঞানিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রিনা ডি এঞ্জলার ৭ বছরের ছেলে কন্মরের গত বছরের রিপোর্ট কার্ড দেখে তার মা-বাবা দুজনেই হতাশ। একটু লাজুক প্রকৃতির এই ছেলে গণিতসহ সব বিষয়েই খারাপ করেছে। এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য তাকে আরেক বছর একই গ্রেডে রাখার পরামর্শ এবং বাসায় বাড়তি যতœ নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রিনার বক্তব্য-তার ছোট ছোট আরও দু’টি শিশু সন্তান রয়েছে, একটি জুনিয়র কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি হয়েছে আরেকটির বয়স মাত্র ৮ মাস। এই ২টি শিশু ও সংসার সামলিয়ে তিনি কীভাবে বড় ছেলের জন্য বাড়তি সময় দেবেন। এছাড়া টিউটর রাখার সামর্থও তাদের নেই। রিনা আরও বলেন, তার ছেলের অগ্রগতি খুবই সামান্য, আগের ক্লাসগুলোতে তার যে ধারাবাহিকতা ছিল অনলাইনে ক্লাস শুরুর পর তা আর নেই।
আলবার্টায় শিক্ষা বিশেষজ্ঞ জর্জ গিওরগিও এক সমীক্ষায় দেখিয়েছেন, কানাডায় অনলাইন শিক্ষায় ১ম থেকে ৩য় গ্রেডের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। মহামরির আগে এই শ্রেণীর ১ জন শিক্ষার্থী যতটা অর্জন করেছিল এখন তা অনেক পিছিয়ে। মূলত তারা তাদের গ্রেড লেভেল থেকে ১২ মাস পিছিয়ে আছে। ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার ওই অধ্যাপক আরো বলেন, ৭৫ শতাংশ শিশুর যে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে তা ভবিষ্যতে আর পূরণ হবার নয়। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি অভিভাবকদের আরো সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়েছেন।
অনেকে তাদের সন্তানদের বাড়িতে বাড়তি সময় দিয়ে অথবা প্রাইভেট টিউটর রেখে তাদের সন্তানদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন শিশুদের শিক্ষার এই ঘাটতি পূরণ না করা গেলে কানাডায় আগামীতে একটি অর্ধ শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হবে। সূত্র : সিবিসি নিউজ