শাহনুর চৌধুরী : কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন তার সরকার দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার ৪র্থ ঢেউয়ের আঘাতের শঙ্কা করছেন। এ অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় শতভাগ ভ্যাক্সিনেশন। কিন্তু দেশে এখনো অনেকে স্বেচ্ছায় টিকা নিতে আগ্রহী নয়। তাই সব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী টিকা নিলে অন্যরাও এতে আগ্রহী হবে। এদিকে ওই একই সংবাদ সম্মেলনে ক্যুইবেকের প্রিমিয়ার ফ্রাসোঁ লেগাও তার প্রভিন্সে ‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলছেন, কানাডার মধ্যে ক্যুইবেকেই প্রথম চালু হবে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট। যারা পূর্ণ ২ ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের এই পাসপোর্ট দেয়া হবে। এই পাসপোর্টধারীরা কানাডার সর্বত্র এমনকি কানাডার বাইরেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, আমি প্রিভি কাউন্সিলের কর্তাদের বলেছি কীভাবে সবাইকে টিকার আওতায় আনা যায় সেই পথ খুঁজে বের করার জন্য। এ বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা আছে। তারা যদি নিজেরাই ভ্যাক্সিনেটেড না হয় তাহলে সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে উত্সাহী হবে না। তাই শতভাগ টিকার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আগে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টিকা নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের টিকা নেয়াটা বাধ্যমূলক ঘোষণা করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী এই প্রথমবারের মতো কোন শ্রেণীর মানুষের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার কথা বললেন। এর আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা বাধ্যতামূলক করার দাবি করা হলে সরকার তাতে সায় দেয়নি। কিন্তু এবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দেয়ায় সরকার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে টিকা নিশ্চত করার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের রয়েছে। আমরা যে কোন পন্থায় এই দায়িত্ব পালন করতে চাই। কেননা টিকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা ছাড়া আমরা এই মহামারির কবল থেকে মুক্ত হতে পারব না। সরকারী পেশাজীবীদের সংগঠন পাবলিক সার্ভিস কানাডার ভাইস প্রেসিডেন্ট স্টিফেন আউবরি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে গতি আনবে এবং ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের যে সব কর্মী সরাসরি স্বাস্থ্যখাতে জড়িত তাদের পূর্ণ ডোজ টিকা নিশ্চিত করেছি। অন্যদেরকেও দ্রæত টিকা নেয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছি।

এদিকে পাবলিক সার্ভিস এলায়েন্স অব কানাডার প্রেসিডেন্ট ক্রিস এইলওয়ার্ড বাধ্যতামূলক টিকা ও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করে বলেছেন, গণস্বাস্থ্যের জন্য এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা এমন একটি মহামারি মোকাবেলা করছি যেখানে একজনও নিরাপত্তাহীন থাকার অর্থ আমরা সবাই নিরাপত্তাহীন। তাই যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যে আনতে হবে। ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত জানুয়ারি মাসে রয়টার্সের সাথে এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী কানাডায় ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু না করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখন ক্যুইবেকে এটি চালুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অন্যান্য প্রদেশেও এই পাসপোর্ট চালুর কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে ক্যুইবেকের প্রিমিয়ারের ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর ঘোষণার প্রতি প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সম্মতিতে মনে হচ্ছে ফেডারেল সরকারও এখন একই কথা ভাবছে। প্রিমিয়ার ফ্রাসোঁ লেগাও বলেন, কানাডাসহ বিশ্ব এখন করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্কের মধ্যে আছে। কানাডায় টিকার ১ম ডোজ নিয়েছেন ৮০% এবং উভয় ডোজ নিয়েছেন ৭০%। প্রথম দিকে কিছু অ-ব্যবস্থাপনা, কিছু বিরল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং কিছু অহেতুক গুজবের কারণে অনেকে টিকা নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন। এখন এসব সমস্যা দূর হয়েছে, তাই সবার উচিত দ্রæত টিকা নেয়া এবং ভ্যাকসিন পাসপোর্ট সংগ্রহ করা।

এদিকে অন্টারিওতে টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে মোবাইল ভ্যাকসিন টিম চালু হয়েছে। এই টিম বিভিন্ন মার্কেট, ফার্ম এমনকি বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে মানুষকে টিকা দিচ্ছে। সেখানে ১২ বছরের ঊর্ধে বয়সীদের ৮০ শতাংশ এক ডোজ এবং ৭৫ শতাংশ ২ ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে অন্টারিও প্রশাসন। গত শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে ৭০% একডোজ এবং ৬৮% ২ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

এদিকে টরোন্টোতে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শত শত ডোজ টিকা বাতিল করে দিতে হয়েছে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে নিবন্ধন করেও সময় মতো টিকা নিতে না আসায় এগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। টরোন্টোর স্বাস্থ্যকর্মী কেইরো ম্যাশ বলেন, গত সপ্তাহে তারা মর্ডানার ৩৩০ ডোজ টিকা ফেলে দিয়েছেন। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো আর ব্যবহারের উপযোগী ছিল না। অন্যান্য অনেক টিকা কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটছে বলেও তিনি দাবি করেন।
কানাডার প্রধান গণস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. থেরেসা টিম বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে টিকার জন্য হাহাকার করছে, সেখানে কানাডায় এভাবে টিকা নষ্ট করার ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। তিনি সবাইকে টিকার জন্য নিবন্ধন এবং নিদ্রিষ্ট সময়ে টিকা গ্রহণ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতিটি ভ্যাকসিনই মহামূল্যবান। তাই দয়া করে কেউ এই সম্পদের অপচয় করবেন না। সূত্র : ন্যাশনাল পোস্ট ও সিবিসি নিউজ