হাসান আমিন : একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে কানাডিয়ানদের আগ্রহের মাত্রা প্রায় পঞ্চাশটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। অন্যদিকে ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ ইউরোপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে মানুষের সর্বাধিক আগ্রহ রয়েছে। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ জার্নালিজম দুই সপ্তাহ আগে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, গ্রীস এবং চিলিতে জরিপ করা নাগরিকদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বলেছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সম্পর্কিত তথ্যের বিষয়ে আগ্রহী। অন্যদিকে, উত্তর এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ঠিক এর উল্টো চিত্র। এসব দেশের নাগরিকদের জলবায়ু সম্পর্কে তথ্য খোঁজার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।
কানাডার ৩৯ ভাগ নাগরিক বলেছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত তথ্যের বিষয়ে আগ্রহী। কানাডা ৪৬টি দেশের মধ্যে ৩১তম স্থানে রয়েছে। কানাডার আশেপাশেই রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও স্পেন।

গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র হল এমন একটি দেশ যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত সংবাদে সবচেয়ে কম আগ্রহ রয়েছে। বিষয়টি রাজনৈতিক মেরুকরণের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বাম এবং ডানের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন যত বেশি হবে, জলবায়ু সংক্রান্ত খবরে দেশব্যাপী আগ্রহ তত কম হবে।

উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ ভাগ নাগরিক বামদের সাথে যুক্ত। এরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য পেতে আগ্রহী। তারপরও এটি জনসংখ্যার মাত্র ৩০ ভাগ। কারণ ডানে যুক্ত নাগরিকদের খুব কমই এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এদের সংখ্যা শতকরা মাত্র ১৪ ভাগ।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ ঘটনাগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের আগ্রহকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীস এবং পর্তুগাল সা¤প্রতিক বছরগুলোতে ধ্বংসাত্মক দাবানলে আক্রান্ত হয়েছে এবং চিলি ক্রমাগত তীব্র খরার সম্মুখীন হচ্ছে; যা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও লক্ষণীয় করে তুলেছে। পাশাপাশি ওইসব দেশের গণমাধ্যমেও বিষয়টি দৃঢ়ভাবে উঠে এসেছে। গবেষকদের মতে গ্রীস এবং পর্তুগাল এমন জায়গা যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাম এবং ডানের মধ্যে খুব কম বিভাজন রয়েছে।

গবেষণা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে আগ্রহীদের কাছে তথ্যচিত্র এবং টেলিভিশন সিরিজ ঐতিহ্যবাহী সংবাদ মাধ্যমের খবরের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। কারণ তথ্যচিত্রে জলবায়ুর বিষয়ে চমকপ্রদ নানা ভিডিও, ছবি ও তথ্য সংযোজন করে এটি দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ্য হয়। এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর কল্যানে এগুলো লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌছে যায়। নেটফ্লিক্সে স¤প্রচারিত আওয়ার প্ল্যানেট সিরিজ ২০১৯ সালে মুক্তির পর থেকে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি বাড়িতে দেখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গবেষকদের মতে, এই ধরনের গল্প জনসাধারণকে জলবায়ু সমস্যাগুলোকে আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করে, যা প্রায়শই অবাস্তব হয়। কিছু ফিল্ম এবং সিরিজের বিরুদ্ধে তথ্য বেছে বেছে ব্যবহার করার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তার। এটি এমন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যা কখনও কখনও খুব সরল হয় এবং যথাযথতার অভাব থাকে। এর ফলে এসব তথ্যচিত্র কিছু জনসাধারণকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে এবং যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তাদের আরও বেশি সন্দিহান করে তুলতে পারে। সমীক্ষা অনুসারে, তরুণরা চায় সাংবাদিকরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিক। সূত্র : রেডিও কানাডা