বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অভিনেতা, বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের ৫৫তম জন্মদিন আজ। প্রতিবারই তার জন্মদিন ঘিরে থাকে নানা আয়োজন। প্রিয় এই তারকার জন্মদিন তার ভক্তদের কাছে যে কোনো উৎসবের চেয়ে কম নয়। এই দিনের জন্য কতশত অপেক্ষায় থাকেন শাহরুখ-ভক্তরা।

গণমাধ্যমে ‌‘বলিউডের বাদশাহ’, ‘বলিউডের কিং’ ও ‘কিং খান’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর নতুন দিল্লির এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ভারতের নতুন দিল্লির পাঠান বংশোদ্ভূত। তার পিতা মীর তাজ মোহাম্মদ খান ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী ছিলেন। তিনি খান আবদুল গাফফার খানের অনুসারী ছিলেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসর সাথে যুক্ত ছিলেন। শাহরুখ খানের মাতা লতিফ ফাতিমা ছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারি প্রকৌশলী ইফতিখার আহমেদের কন্যা।

শাহরুখ খান গৌরী চিব্বারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, গৌরী পাঞ্জাবি হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ তারা ছয় বছর প্রেম করার পর ১৯৯১ সালের ২৫শে অক্টোবর ঐতিহ্যগত হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন। তাদের এক পুত্র আরিয়ান খান (জন্ম ১৯৯৭) ও এক কন্যা সুহানা খান (জন্ম ২০০০)। ২০১৩ সালে তারা তৃতীয় সন্তানের পিতামাতা হন, তার নাম আব্রাম খান, সারোগেট মায়ের মাধ্যমে তার জন্ম হয়।

শাহরুখ খান ৮০টির অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে চৌদ্দটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, যার আটটিই শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। হিন্দি চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০২ সালে ভারত সরকার শাহরুখ খানকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে এবং ফ্রান্স সরকার তাকে অর্দ্র দে আর্ত এ দে লেত্র ও লেজিওঁ দনর সম্মাননায় ভূষিত করে।

অভিনেতা হিসেবে বৈশ্বিক অবদানের জন্য শাহরুখ খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করেছে স্কটল্যান্ডের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়। এশিয়ায় ও বিশ্বব্যাপী ভারতীয় বংশোদ্ভূত তার প্রায় ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ভক্ত রয়েছে এবং তার মোট অর্থ সম্পদের পরিমাণ ২৫০০ কোটি রুপি-এরও বেশি। ওয়েলথ-এক্স সংস্থার বিচারে বিশ্বের সব থেকে ধনী হলিউড, বলিউড তারকার তালিকায় শাহরুখ খান দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। দর্শক ও আয়ের দিক থেকে তাকে বিশ্বের অন্যতম সফল চলচ্চিত্র তারকা বলে অভিহিত করা হয়।

টিভি সিরিয়াল থেকে বড় পর্দায় ১৯৮৮ সালে শাহরুখ খান জীবনে প্রথম ‘দিল দরিয়া’ নামক একটি টিভি ধারাবাহিকে কাজ করার চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু হতে বিলম্ব হচ্ছিল তখন। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সালে ‘ফৌজি’ নামক টিভি সিরিয়ালে তার অভিনয় জীবনের শুরু হয়। এই নাটকে তিনি ‘অভিমান্যু রায়’ নামের এক আর্মি ক্যাডেট চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন। পরে তিনি কাজ করেন ‘সার্কাস’ নামের আরেকটি ধারাবাহিকে। দিওয়ানা (১৯৯২) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেন। তার বিপরীতে ছিলেন দিব্যা ভারতী। ছবিটি ব্যবসা সফল হয় এবং তিনি বলিউডে নিজের অবস্থান তৈরি তরতে সক্ষম হন।

১৯৯৩ সালে বাজিগর ও ডর ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করে তারকাখ্যাতি পেয়ে যান শাহরুখ খান। ডর চলচ্চিত্রটি খুব সাফল্য লাভ করেছিল। বাজিগর ছবির জন্য তিনি তার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৫ ছিল শাহরুখ খানের জন্য তো বটেই, পাশাপাশি বলিউডের নতুন ইতিহাস গড়ার একটি বছর। মুক্তি পায় শাহরুখ-কাজল জুটির ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’। এটি বক্স অফিসের আগের সব রেকর্ড ভাঙে, যার সব কৃতিত্ব পান শাহরুখ খান। চলচ্চিত্রটি ভারতের সর্বাধিকবার প্রচারিত চলচ্চিত্র হিসেবে নতুন রেকর্ড করেছে। এর আগে অমিতাভ বচ্চনের ‘শোলে’র ২৬০ সপ্তাহ চলার রেকর্ডটি ভেঙে দেয়। চলচ্চিত্রটিতে শাহরুখ খান অভিনয় করেন ‘রাজ’ আর কাজল অভিনয় করেন ‘সিমরান’ চরিত্রে। মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটি বক্স অফিস মাত করে।

এরপর তাঁর চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে দিল তো পাগল হ্যায় (১৯৯৭), কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮), মোহাব্বতে (২০০০), কাভি খুশি কাভি গম (২০০১), কাল হো না হো (২০০৩) এবং ভীর-জারা (২০০৪), দেবদাস (২০০২) ইত্যাদি।

এরপর ‘ডন’ সিরিজ এর প্রথম মুভি পাওয়ার পর শাহরুখ খান ‘বলিউড কিং’ উপাধি পান। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাত হলেও শাহরুখ খান অভিনীত চরিত্রগুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন চরিত্রের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। ডর কিংবা বাজিগরে দেখা যায় নির্দয় এক শাহরুখ খানকে। অন্যদিকে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’তে চমৎকার এক রোমান্টিক যুবক।

আবার কাল হো না হো কিংবা দেবদাসে এক ব্যর্থ প্রেমিকের উপাখ্যান আমরা দেখতে পাই। কিন্তু অ্যাকশন হিরো হিসেবেও শাহরুখ নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ডন সিরিজ, যাব তাক হেয় জান, শক্তি-দ্য পাওয়ার, ম্যায় হু না-এর মতো চলচ্চিত্রগুলোতে দেখা মেলে অ্যাকশন হিরো শাহরুখ খানের।