অনলাইন ডেস্ক : গত ২ সেপ্টেম্বর, শনিবার কানাডার টরন্টোতে কৃষ্ণ-উৎসবের আয়োজন করা হয়। আলোচনা, সঙ্গীত, নৃত্য, কবিতা ও সাহিত্য পাঠের ভেতর দিয়ে অন্টারিওর কৃষ্ণ অনুরাগীদের দ্বারা আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয় পাঁচহাজার বছর আগের মানব জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান শ্রীকৃষ্ণকে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঠিক বিকেল ৫টায় আয়োজনের উদ্বোধন করে কমিটির ৫ সদস্য আকবর হোসেন, সুব্রত কুমার দাস, অসীম ভৌমিক, ড সুশীতল সিংহ চৌধুরী এবং প্রতিমা সরকার। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন নন্দিত লেখক ও উপস্থাপক দেবাঞ্জনা মুখার্জি ভৌমিক।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তৃতা লরেন কুইন এলিজাবেথ পুরস্কারপ্রাপ্ত সর্বজনশ্রদ্ধেয় পুরোহিত শ্যামল ভট্টাচার্য, টরন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের প্রাক্তন ট্রাস্টি পার্থি ক্যান্ডেভ্যাল এবং এনআরবি টেলিভিশনের সিইও শহিদুল ইসলাম মিন্টু।

শ্যামল ভট্টাচার্য এই আয়োজনকে বিশেষ গুরুত্বের বলে উল্লেখ করেন। পার্থি ক্যান্ডেভ্যাল তাঁর বক্তৃতায় শ্রীকৃষ্ণ বিশ্যে তাঁর বিশেষ আগ্রহের কথা বলেন। ২০১৬ সাল থেকে হিন্দু কমিউনিটির জন্যে এনআরবি টেলিভিশন কী কী আয়োজন করেছে সেগুলোকে উল্লেখ করেন শহিদুল ইসলাম মিন্টু।

পাঁচ ঘন্টার এই বিশাল আয়োজনে অন্যতম উদ্যোক্তা বিশিষ্ট লেখক গবেষক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব সুব্রত কুমার দাস আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেন তাঁর স্বাগত বক্তব্যে। সবাইকে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বড়ো পরিসরে কৃষ্ণ উৎসব আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সুব্রত।

অনুষ্ঠানে ‘জ্ঞানগ্রন্থ গীতা’ শিরোনামে আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট চিন্তক ও লেখক আকবর হোসেন। ক্ষ্ণৃ-দর্শন নিয়ে কথা বলেন উত্তর আমেরিকা ইসকনের অগ্রণী পুরুষ ওয়াকিং মঙ্ক ভক্তিমার্গ স্বামী। ‘পশ্চিমা সাহিত্যে ভগবদগীতার প্রভাব’ এবং ‘জীবনযাত্রায় কৃষ্ণদর্শন’ বিষয়ে কথা বলেন যথাক্রমে সুজিত কুসুম পাল এবং হীরা লাল পাল।

কৃষ্ণ নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশনায় ছিলেন সোনালী রায়, সুভাষ দাশ এবং রোমেনা হক রুমা। বিশিষ্ট তবলাশিল্পী অঞ্জন ঘোষ পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে তবলায় সঙ্গত করেন। অনুষ্ঠানে কীর্তন পরিবেশন করেন বিষ্ণুপ্রিয়া নামে টরন্টোর জনপ্রিয় কীর্তন দলের শিল্পীরা। এছাড়াও যে কিশোরতরুণ বয়েসী শিল্পীরা সঙ্গীতে অংশ নেয় তারা হলো অনন্ত নির্ঝর, তানিশা ভৌমিক, কনিনিকা দত্ত, দ্বৈপায়ণ দাশ উপম, দেবস্মিতা দাম এবং দাকশীষ দে ওম।

সারা অনুষ্ঠান জুড়েই মাঝে মাঝে ছিল শ্রীকৃষ্ণের জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে নৃত্য পরিবেশনা। বিপ্লব কর পরিচালিত নৃত্যকলা কেন্দ্রের যে কিশোর শিল্পীরা অংশ নেয় তাঁরা হলো কৃশিব বিনায়ক কর, আরাধ্য দেব, শ্রেয়ানা প্রতিষ্ঠা কর, শ্রীজা সাহা, ধীষোনা শ্রেষ্ঠা কর, পারিজাত পাল, এবং ইন্দ্রা বিদূষী কর। চিত্রা দাসের নেতৃত্বে নৃত্য ঝংকারের যে শিশি কিশোর শিল্পীরা অংশ নেয় তাঁরা হলো অগ্নিলা, আরিয়া, আরুশী, মেধা, শ্রেয়া, অবন্তী, ত্রিচিনা, চারুশী , মানসি , আরিয়ানা , দিপাঞ্জলি এবং নিশু। এছাড়াও তারানা পারফর্মিং আর্টসের শিল্পী পারমিতা তিন্নি, গার্গী লাহিড়ী এবং সুচনা দাস বাঁধন নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন। মণিপুরি নৃত্যে কৃষ্ণকে উপস্থাপন করেন অনিন্দিতা রায়।

কৃষ্ণ উৎসবে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের জন্যে ছিল একটি আকর্ষণীয় কুইজ পর্ব। শ্রীকৃষ্ণের পরিবার, ইতিহাস, দর্শন ও সৃষ্টি ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন করা হয় এই পর্বে। কুইজ পর্বটি পরিচালনা করেন কমিউনিটির প্রিয় উপস্থাপক জ্যোতি দত্ত পুরকায়স্থ। পুরস্কার বিতরণ করেন ভক্তিমার্গ স্বামী। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে যথাক্রমে সার্বভৌম রায় মজুমদার ঋদ্ধি , দাকশীষ দে ওম, ঋতুরাজ।

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সম্মিলনে আয়োজিত এই আয়োজনে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে রচিত বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন লেখকের রচনা থেকেও পাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যে নন্দিত বাচিক শিল্পীরা পাঠে অংশ নেন তাঁরা হলেন শেখর গোমেজ, সামিনা চৌধুরী, এলিনা মিতা এবং তাসমিনা খান। পাঠ-পর্বটি পরিচালনা করেন বিপ্লব সোম। এছাড়াও অপূর্ব রায় কবি জয়দেব রচিত সংস্কৃত গ্রন্থ গীতগোবিন্দ এবং এর বাংলা অনুবাদ থেকে পাঠ করে শোনান।

মঞ্চে কৃষ্ণকে উপস্থাপন করেন সার্বভৌম রায় মজুমদার ঋদ্ধি। সাথে অর্জুন হিসেবে ছিল অর্ঘ ধর।

স্কারবোরোর বার্চমাউন্ট রোডে অবস্থিত টরন্টো দুর্গাবাড়িতে এই আয়োজন শুরু হয়েছিল ঠিক ৫টায়। চলেছিল রাত সোয়া এগারোটা পর্যন্ত। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে আয়োজন কমিটির পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অসীম ভৌমিক এবং ড সুশীতল সিংহ চৌধুরী।

উল্লেখ করা যেতে পারে যে পুরো অনুষ্ঠানটি এনআরবি টেলিভিশন সরাসরি স¤প্রচার করে। এই স¤প্রচারে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার সূর্য চক্রবর্তী এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান সূর্য ল। সমাপনী কীর্তনে বিশিষ্ট শিল্পী চন্দন পাল সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে তোলেন।