আকতার হোসেন : আমার মতো ছন্দাও প্রতি বিকেলে ছাদে উঠে পায়চারি করতো। সে করতো তার মতো। আমি আমার মতো। একদিন লক্ষ্য করলাম রাত হবার পরও ছন্দা ছাদ থেকে নামছে না। ওদের বাড়িতে আমি অনেক গেছি। ওর ভাই পারভেজ ছিল আমার বন্ধু। পারভেজ দুবাই চলে যাবার পর তেমন যাওয়া হতো না। পরের দিন জানলাম সন্ধ্যার পরও কেন ছন্দা ছাদে বসেছিল।

ছন্দার ছোট বোনের নাম নন্দা। খুব চুপচাপ মেয়ে। কিন্তু এই চুপচাপ হয়ে থাকা মেয়েটি আমার সর্বনাশ করে ছাড়লো। বড় বোনকে বলেছিল, জানো আপু, তোমার জন্যই হীরু ভাই প্রতিদিন ছাদে উঠে ঘোরাঘুরি করে। হয়ে গেল। বলা নেই কওয়া নেই ছন্দা আমার প্রেমে পড়ে গেল। উঠ ছুঁড়ি তোর প্রেম। সেই থেকে ছন্দার একক প্রেমের বাঁধনে আটকে আছি। শুনেছি ছেলেরা মেয়েদের গায়ে ফুল ছোড়ে, চিঠি পাঠায়, চোখ টেপে। কপাল মন্দ তাই আমি পেলাম ফুল আর চিঠি। অনেকটা জোর করেই ছন্দা আমাকে তার করে নিলো। ছন্দার কথাতে এখন আমি উঠি বসি। আমি তার চোখের মণি।

ছন্দা-নন্দাদের সবগুলো ভাইবোনের গায়ের রং কালো। এর মধ্যে নন্দা তাদের অন্যতম। নন্দাকে নিয়ে ওর বাবামা’র ভীষণ চিন্তা। নন্দার বড় হয়েছে অথচ ওর জীবনপথ সম্পূর্ণ ফাঁকা। ওর জন্য কোথাও কারোর অপেক্ষা নেই। আমাকে যেমন জোর করে ছন্দা প্রেমে ফেলেছে, নন্দার সেই নিজস্ব জোরটুকুও নেই। নেই মানে কিছুই নেই। যেমন অল্প কথা বলে তেমনি অল্প লোককে চেনে। এসব কিছুর জন্য নন্দা তার গায়ের রঙকে দায়ী করে। তাই বসেছিল বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলে একদিন ওরও একটা বিয়ে হয়ে যাবে। পুরুষ আসবে জীবনে।

আমাদের গলির সবশেষ বাড়িটা ছিল রানাদের। ছয় সাতটা ভাইবোন ওরা। বাবা বিমানের কর্মকর্তা। ঘুষটুস খান না তাই জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। বাড়ির বড় ছেলে হয়েও রানা একটা মাস্তান মার্কা ছেলে। অথচ আশ্চর্য কি জানেন? আশেপাশের কেউ রানাকে কখনো মাস্তানি করতে দেখেনি। একবার শুধু এক রিক্সা যাত্রীকে দু’টো ঘুষি মারতে দেখেছিলাম। রিক্সার যাত্রী আমাদের মহল্লার কেউ ছিলো না। দু’টো ঘুষি দেবারও প্রয়োজন ছিলো না। প্রথমটাতেই নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়তে শুরু করেছিল। রাগ সামলাতে না পেরে অতিরিক্ত আরো একটা ঘুষি ছুড়ে দিলো লোকটির দাঁতের ওপর। নিমিষে দাঁতের মধ্যে লাল জোয়ার উঠলো। সেই থেকে রানার মাস্তান খ্যাতি।

এই খ্যাতির পেছনের ঘটনা হলো, এক বৃদ্ধ রিক্সাচালকের কাছে একশো টাকার ভাংতি না থাকায় যাত্রীটি ভাড়া না দিয়েই চলে যাচ্ছিল। রিক্সাচালক তার হাত ধরে অনুরোধ করে বললো, আজ বাজার সদাই না নিয়ে গেলে বাড়িতে সকলে উপোস করবে। কিন্তু যাত্রীটি ছিল ফুল বাবু। মহা ক্ষেপে রিক্সাচালককে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিলো। গর্ব করে বলতে লাগল, এত্ত বড় সাহস, আমার হাত ধরে টানাটানি। জানোছ আমি কে?

পাশে দাঁড়িয়ে ছিল রানা। রিক্সা চালক মাটিতে পড়ে চিত হয়ে আছে। উঠবার মতো শক্তি ছিল না তার। কপাল ফেটে রক্ত গড়াচ্ছিল। রিক্সাচালকের পক্ষ থেকে তাই রানা এগিয়ে এসে জানতে চাইলো কোন মন্ত্রীপুত্র তিনি? রানারা চটে গেলে তাদের প্রশ্ন করার ভাষা বদলে যায়। স্বভাবতই রানাদের প্রশ্নের উত্তর না এসে উত্তরের বদলে লাল রক্ত বেরিয়ে আসে।

রানাদের বাড়ির লোকজনকে আমাদের দেয়াল ঘেঁষে বড় রাস্তায় উঠতে হয়। বড় রাস্তা মানে যেখান দিয়ে বেবিট্যাক্সি দুই লেনে চলতে পারে। যে কয়টা বাড়ি পার হয়ে রানা বড় রাস্তায় যায় তার মধ্যে প্রথমে ছন্দা-নন্দাদের বাড়ি। সবশেষে রয়েছে আমাদের মমতাজ ভিলা। আমার বাবা পুলিশে চাকুরী করেন তাই মায়ের নামে বাড়িটার নাম। বাড়ির দলিলটাও করা হয়েছে মায়ের নামে। গরীব মানুষের মেয়ে হলে কী হবে। আমার মায়ের বেশ পুলিশী কপাল।
অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে চা নাস্তা খেয়ে রানা প্রতিদিন দুপুরে বেরিয়ে পড়ে। ফেরে সেই মাঝরাতে। গলির ভেতর তাকে খুব একটা দেখা যায় না। সারাদিন কী করে কেউ কিছু জানে না। তবুও তার নাম মাস্তান রানা।

একদিন বেলা করে ঘুম থেকে উঠে বের হবার সময় ছন্দা-নন্দাদের বাসার সামনে সে চুম্বকের মত আটকে যায়। প্রথমে ভেবেছিল ফেনসিডিলের নেশাটা বোধহয় কাটে নি। গতরাতে পেটে একটু বেশি পড়েছিল, তার রেশও হতে পারে। চোখ কচলিয়ে দেখে নেশা নয়, সবই বাস্তব। নন্দা গোসল সেরে দোতালায় গ্রীলের পাশে দাঁড়িয়ে চুল শুঁকচ্ছিল। একটার সাথে লেগে থাকা অন্য ভেজা চুলগুলো অন্যমনস্ক হয়ে ছড়াচ্ছিল। রানার মুখে শতবার শুনলেও আমি বিশ্বাস করতাম না। সে সময় আমিও বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কী যে সুন্দর লাগছিল নন্দাকে তা বলে শেষ করা যাবে না। মনে হচ্ছিল চেহারা দিয়ে স্বর্গের জ্যোতি গলে গলে পড়ছে। এমন অমায়িক দৃষ্টি মানুষের হতে পারে না। কালো রঙটা না হলে অতো মায়াবীও দেখাতো না হয়তো।

রানার গলায় ছিল একটা হলুদ রঙের মালা। গতরাতে মাজার থেকে নিয়ে এসেছিল। আজ আবার সেটাই গলায় ঝুলিয়ে বের হয়েছে। কাল বিলম্ব না করে মালাটি ছুড়ে মারলো রানা। নন্দার অন্যমনস্ক মুখের সামনে গ্রীলের রডে আটকে গেল অঘ্রাণী কাগজের ফুল।
রানা সবসময় কবিদের মতো কথা বলে। কবিদের মত কথা বলে কিন্তু সে কবি না। অথচ মাজারের আড্ডায় ওকে সবাই কবি ভাই বলে ডাকে। ধুঁয়া ঘরে বসে অনেকেই রানার আবোলতাবোল কথাকে কবিতা মনে করে হাত তালি দেয়। দিনে দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নন্দার উদ্দেশ্যে রানা কবিতার ঠং এ কথা বলতে শুরু করে। সে ভুলে গেল নন্দাদের গ্রীলঘেরা বারান্দায় কোন ধুঁয়া নেই। নেই কোন বাদ্য বাজনা। তবুও সে বললো, ‘ওগো কৃষ্ণ পরী, তুমি অপরূপা অস্পরী।

নন্দা চোখ তুলে তাকায়। তার চোখ রানার চোখে গিয়ে আটকে যায়। রানা কবিতার পিঠে চাবুক মারে। কবিতা এগিয়ে চলে।
‘তুমি মাটির দেশের তারা। মাটিতে দাঁড়ানো বৈশাখী মেঘ। চিরকাল আকাশে ছিলে। মাটিতে কেন এলে?
নন্দা পলক ফেলতে ভুলে গেল। কথা বলতে ভুলে গেল। পা তুলতে ভুলে গেল।

রানা ছুটছে তো ছুটছে। ‘ওগো কৃষ্ণ পরী, চেয়ে দেখ আমি জল মানব। আমি বাতাসী দানব।
এক সময় নন্দা শক্তি হারিয়ে ফেলে। সে ফিরে যায় রাজ প্রাসাদের অন্দরমহলে। রানা সুর করে একটা গান ধরে বড় রাস্তার দিকে এগিয়ে চলে। রানার গানও ঠিক ওর কবিতার মতো। মোটেও সুর ও ছন্দে থাকে না। তবুও সে সুরে দম দিয়ে গেল। সুর যেন বেসুরে চলে না যায় তার জন্য তৃপ্তিহীন চেষ্টা।

উপরে দাঁড়িয়ে আমি সব দেখলাম। দেখলাম যে-ঝড় রানার চোখে লেগে গেল সে-ঝড় রানাকে লণ্ডভণ্ড করে দেবে। রানা সত্যি সত্যি মাস্তান হলে ভাল হতো। ছুরি চাকু এতটা ধারালো নয় যতটা কপালে উঠে আসা কাজলা রঙের চুল। যে আগুনে রানার চোখ পড়েছে সে-আগুন মানুষকে অন্ধ করে দেয়। রানা এবার অন্ধ হয়ে যাবে।

সেদিনের পর থেকে রানাকে গলিতে নিয়মিত দেখা যেতে লাগল। টুকরো টুকরো কিছু মাজার নন্দাদের বাসার সামনে জায়গা পেল। নন্দাদের বাসার সামনে একটা লাইটপোস্ট থাকলে ভালো হতো। রানার হেলান দিতে সুবিধা হতো। রানা কাগজ কলম ছাড়া পথে দাঁড়িয়ে মহাকাব্য লেখা শুরু করলো।

ওকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, নন্দাদের বারান্দার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকে কেন। নন্দা দাঁড়িয়ে থাকলে একটা কথা ছিল। খালি বারান্দায় প্রতিদিন কী খোঁজো? মেয়েটা অহেতুক বাবা-মায়ের হাতে বকাঝকা খায়। ওকে বলেছিলাম, তুমি মাস্তান না হলে তোমাকে নিয়ে নন্দা স্বপ্ন দেখতো। চোখ দিয়ে তোমায় শাসন করতো। নন্দার চোখের ভেতর সংবিধান লেখা আছে। চোখের পাতায় পাতায় তার আইনের শাসন। যতো বড় মস্তানই হওনা কেন চোখের আইনকে অবজ্ঞা করা এত সহজ নয়। আমার কথা শুনে রানা শুধু হাসে। কোন উত্তর দেয় না। ভয়টা ওখানেই। রানা যতো হাসে আমার সংশয়টা ততোই জেগে ওঠে। এই বয়সে একা একা হাসা ভালো না। তাছাড়া রানা হাসলে ওর খক খক কাশিটা বেড়ে যায়। ঐ হাসি দেখে বোঝা যায় কৃষ্ণসাগরের কতোটা গভীরে হারিয়ে গেছে সে।

আমার মায়ের নামে একটা দোতালা বাড়ি আছে। আমি তাদের একমাত্র পুত্রসন্তান। তবুও প্রথমদিকে ছন্দা-নন্দার বাবা আমাকে মেনে নিতে চায়নি। খুব নিতিবান পিতা তিনি। এবার মনে হচ্ছে রানাকে বিদায় করতে আমাকে ঘরে তুলে নেবেন। না নিলে বেঁচে যেতাম। একদিন আমার হাত ধরে বললেন, ঐ মাস্তানটাকে বলো আমার মেয়েকে বিরক্ত না করতে। মাস্তানটার জন্য মেয়েটা বারান্দায় যেতে পারে না। তোমার খালাম্মাও দাঁড়াতে পারে না। ছন্দা তো সারাক্ষণ ছাদেই থাকে।

হবু শ্বশুরকে বলতে ইচ্ছে করলো, রানাকে ভয় পাবার কিছু নেই। রানা নন্দাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে না। সে নন্দাকে খুঁজতে দাঁড়িয়ে থাকে। নন্দার মাঝে হঠাত দেখা স্বর্গদেবীকে সে দেখতে চায়। ছন্দার বাবা শ্বশুর হিসেবে মোটেও সুবিধার নয়। নেশাখোরকে ঠেকাতে ঘুষখোরের ছেলেকে বরণ করে নিচ্ছে। মানুষের ন্যায় অন্যায় বিচার পানির রঙের মতো, যে পাত্রে রাখা যায় সে পাত্রের রং ধারণ করে। ঘুষখোর পুলিশের ছেলে বলে আমাকে যে অসম্মান করত, রানাকে ঠেকাতে ন্যায় অন্যয়ের বাটখারা বদলিয়ে আমাকে এখন সন্তান সমতুল্য করে তুললো। এখন আমি বড়ই স্নেহের পাত্র। নন্দার বাবার কথামত রানাকে ডেকে একদিন বকা দিলাম। একা একা হাসতে বারণ করলাম। যেখানে মিউনিসিপ্যালিটির লাইটপোস্ট নেই সেখানে দাঁড়াতে নিষেধ করলাম। রানা আমাকে পাত্তা দিল না। সে ভালো করেই জানে একজন কৃষ্ণ পরী তাকে অন্ধ করেছে এবং তারই বড় বোন আমাকে চুড়ি পরিয়েছে। ঠিকমত ধমকাতে না পেরে রানাকে হবু শ্বশুরের শেখানো কথাগুলো শুনিয়ে দিলাম। রানাকে বললাম, নন্দার এক মামাতো ভাই আছে খুব বড় পিস্তলধারী। নন্দার বাবা বলেছে তাকে দিয়ে তোমাকে চ্যাপ্টা করে দেবে। আমার কথা শেষ না হতেই বিকট শব্দে রানা হেসে দিল। এতজোরে হাসার প্রয়োজন ছিল না। রানাকে স্পর্শ করা যায় অতটা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আস্তে হাসলেও শুনতে পেতাম। ওর হাসির শব্দে মনে হল আমি বুঝি হিমালয়ের উপর এবং সে বঙ্গোপসাগরের পানির নিচে। হাসির সাথে সাথে রানার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল ফেন্সিডিলের তাজা গন্ধ। আজকাল দিনের বেলায়ও দু’এক ঢোক গলায় ঢালে। গন্ধটা আতরের মত লাগলো।

রানার হাসি সবসময় কাশি দিয়ে শেষ হয়। একসাথে অনেকক্ষণ হাসতে পারে না। দমটা নিভে আসে। সে হাসে আর কাশে। অল্প বয়সেই রানার দাঁতগুলো কালো হয়ে গেছে। চোয়াল ভেঙ্গে গেছে। হাসতে হাসতে রানার সাদা ইস্ত্রি করা লুঙ্গি খুলে যায়। কাঁপা কাঁপ হাত দিয়ে গলায় পরে থাকা মালাকে চুমো খায়। এরপর লুঙ্গিতে গিঁট দেয়। রানা চোখ বন্ধ করে প্রশ্ন করে, কি বললেন হীরু ভাই, চ্যাপ্টা করে দেবে? আমার অপরাধ! কী দোষ করেছি আমি?

এতটুকু কথা বলতে রানা যে সময় নিলো ততক্ষণে একটা উপন্যাস শেষ করা যায়। কাশবার শক্তি যেমন নেই, কথা বলার শক্তিও সে হারিয়ে ফেলেছে। কিছুটা মাস্তানী তাকে পেয়ে বসলো। নন্দাদের বারান্দার দিকে টুকটুকে লাল চোখ মেলে চিৎকার করে উঠলো, আমার কৃষ্ণ পরী, তুমি কোথায়। চলো আমরা উড়ে যাই, উড়ে যাই, উড়ে যাই।

এভাবে চিৎকার করতে করতে সে বড় রাস্তায় গিয়ে ওঠে। নন্দার দীর্ঘদেহী মামাতো ভাই সে-সময় ওদের ঘরে বসে ছিল। রানার চিৎকার সে ঘরে বসেই শুনতে পেল। রানা বড় রাস্তায় উঠে যাবার পর সে নন্দাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তার গাড়িটা বড় রাস্তায় দাঁড় করানো। সে কারণে রিক্সা বেবিট্যাক্সী চলতে অসুবিধা হচ্ছিল। নামেই শুধু বড় রাস্তা। আসলে বেবিট্যাক্সী ছাড়া কিছু ঢোকে না। মাঝে মধ্যে নন্দার মামাতো ভাইয়ের গাড়ির মতো দুই একটা গাড়ি দেখা যায়। ছোট গলির ভিতর গাড়ির গতি বেড়ে গেলে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। তবে সেই সন্ধ্যার দুর্ঘটনার জন্য নন্দার মামাতো ভাইকে কেউ দোষী করেনি। সন্ধ্যা হতে না হতে ফেন্সিডিল খেয়ে রাস্তায় বের হলে গাড়ির নিচে পড়বে নাতো কি হাতির পিঠে চড়বে? দমটা বের হবার আগে রানা শুধু একটা কথাই বলেছিল, উড়ে যাই, উড়ে যাই।

নন্দার গল্প এখানেই শেষ। তারপর থেকে নন্দাকে কেউ কোনদিন কৃষ্ণ পরী বলে ডাকেনি। সেই প্রথম -সেই শেষ। নন্দা এখন প্রতিদিন নির্ভয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। দোতালার বারান্দায় এসেই নোংরা ড্রেনের পাশে কাল্পনিক একটা লাইটপোস্ট খুঁজে নেয় সে। সেই লাইটপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক রাজপুত্র। যার মুখে নন্দা এখনো কৃষ্ণ পরী ডাক শুনতে পায়। আমাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি দেখি, মাঝে মাঝে একটি অঘ্রাণী মালা পেতে নন্দা মাথাটা নিচু করে দেয়।