Home কানাডা খবর কেমন হবে অটোয়ার আগামী দিনগুলোর গৃহনির্মাণ পরিকল্পনা

কেমন হবে অটোয়ার আগামী দিনগুলোর গৃহনির্মাণ পরিকল্পনা

শাহনুর চৌধুরী: করোনা মহামারিকালে কানাডায় আবাসনের গড় খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। অন্যদিকে এই মুহূর্তে কানাডায় আরো অধিকহারে বাড়ি তৈরি করা প্রয়োজন বলে সবাই একমত। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোতে কেমন হতে পারে আবাসন পরিকল্পনা- সে বিষয়ে অটোয়া প্রশাসন চিন্তা ভাবনা করছে। সরকারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নতুন বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির অস্বাভাবিক হার নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে আবাসন ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। এছাড়া সরকার এমন একটি গৃহ নির্মাণ তথা আবাসন পরিকল্পনা করতে চাইছে যাতে আগামীতে বাড়ি ক্রয়ে আগ্রহীরা আশান্বিত হতে পারেন এবং বাজেটের মধ্যে পছন্দের একটি আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। জনসংখ্যা ও গৃহায়নের ধারা বিষয়ক বিশ্লেষক ও স্মার্ট প্রসপারিটি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র পরিচালক মাইক মফেট বলেছেন, গৃহ নির্মাণ পরিকল্পনাগুলো এমনভাবে করা উচিত যেন, লোকজন তাদের কর্মস্থলের কাছাকাছি বসবাস করতে পারে। এতে আমরা যাতায়াতের সময় ও খরচ কমাতে পারব। এছাড়া এটি পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক হবে।

করোনা মহামারিকালে মফেটের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে গত প্রায় দুই বছরে কানাডায় জনসংখ্যার গতিবিধির নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ ব্যয়বহুল শহর ছেড়ে শহরতলীর দিকে ছুটেছে, ছোট ছোট পরিবারগুলো অন্য পরিবারের সাথে মিলে ‘স¤প্রদায়ের’ মতো বসবাস করা শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবে সমাজে এ ধরনের পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু করোনার কারণে এগুলো এবার খুব দ্রুত ঘটে গেছে। এখন আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে। রাতারাতি মানুষকে আবার শহরমুখী করা যাবে না। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে হবে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে হবে এখনই। কানাডার প্রধান ব্যাংকগুলোর অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে একমত যে, কানাডার আবাসন শিল্পখাতে স্থিতিশীলতা আনতে প্রচুর নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। তবে এই খাতে ঠিক কত অর্থ বিনিয়োগ করতে হতে পারে অথবা ফেডারেল সরকার কোন পথে এগুতে চাইছে সে বিষয়গুলো তাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। গত নভেম্বরে পুন:নির্বাচিত লিবারেল সরকারের একটি পরিকল্পনা স¤প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ৪ বিলিয়ন ডলারের একটি ‘হাউজিং এক্সিলারেটর ফান্ড’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যে ‘মধ্যবিত্তদের’ জন্য ১ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করা। সরকারের বৃহত্তর ‘ন্যাশনাল হাউজিং স্ট্যাটেজির’ আওতায় চালু করা এই প্রকল্পটিতে পৌরসভা প্রশাসনকে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ করা হবে যাতে নতুন বাড়ি নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হয়।

অটোয়া প্রশাসন বলছে, এসব অর্থ শর্ত সাপেক্ষে প্রদান করা হবে। সিটি ও পৌর প্রশাসনগুলো শর্ত পুরণ করে তহবিলের জন্য আবেদন করতে পারে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করা, পাবলিক ট্রানজিটের কাছাকাছি আবাসন নির্মাণ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

অটোয়া প্রশাসন নতুন আবাসন নির্মাণে তহবিল গঠনের পাশাপাশি পুরাতন আবাসনগুলোর সংস্কার, মেরামত ও স¤প্রসারণের জন্যও ২.৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। আবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হুসেন বলেন, তার সরকারের প্রবর্তিত বিভিন্ন কর্মসূচী ইতোমধ্যে আবাসন খাতে সুফল বয়ে আনতে শুরু করেছে। নতুন বাড়ি নির্মাণ ও পুরাতনগুলো মেরামতে সরকার সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করার কথা ভাবছে। শিগগিরই আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে কানাডিয়ানদের জন্য কয়েক হাজার নতুন বাড়ি নির্মাণ করব। এদিকে বিরোধী দলগুলো আবাসন খাতে সরকারের পরিকল্পনাকে ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মন্তব্য করেছে। নির্বাচনের আগে রক্ষণশীলরা ৩ বছরের মধ্যে দেশে ১০ লাখ নতুন গৃহনির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল। নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে তাদের ওই ‘উচ্চভিলাষী’ পরিকল্পনা জনগণ গ্রহণ করেনি। গত ৯ ডিসেম্বর হাউস অব কমন্সে কনজারবেটিভ দলের এম পি মেট জেনারেক্স বলেছেন, আমাদের প্রতিশ্রুতি উচ্চভিলাষী ছিল না। প্রতিপক্ষ জনগণকে ভুল বুঝিয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসিনরা আবাসন সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। তারা হাজার হাজার বাড়ি নির্মাণের কথা বলছে। কিন্তু এখনো কোথায় কতটি বাড়ি নির্মিত হবে তার সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। সরকার শুধু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের কথা বলছে, কিন্তু সত্যিকারের কাজ কতটুকু হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছি। তিনি অভিযোগ করেন নভেম্বরে বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিরোধীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী হুসেন বলেন, আমরা জানি, পন্যের সরবরাহ বৃদ্ধিই মূল্য নিয়ন্ত্রনের সমাধান। তাই আমরা বেশি বেশি বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছি। আসলে যা করা প্রয়োজন, সরকার সেটাই করবে।

কানাডা মর্টগেজ অ্যান্ড হাউজিং করপোরেশন (সিএমএইচসি) পরিচালিত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে অক্টোবর-নভেম্বরে কানাডায় নতুন আবাসন নির্মাণ ২৬ শতাংশ বেড়েছে। তবে ব্যাংক স্কশিয়ার ২০২১ সালের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৬ সাল থেকে কানাডায় নতুন গৃহ নির্মাণ জনসংখ্যার তুলনায় কমে গেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে দেশে বর্তমানে প্রতি ১ হাজার বাসিন্দার জন্য গড়ে ৪২৪ টি বাড়ি রয়েছে। জি-৭ ভ‚ক্ত দেশগুলোর পর্যায়ে পৌছতে কানাডাকে আরো ১.৮ মিলিয়ন নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। সে সব দেশে প্রতি হাজারের জন্য রয়েছে ৪৭১ টি বাড়ি। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version