অনলাইন ডেস্ক : সারাদিনের সতেজ অনুভূতির জন্য হলেও এক কাপ চায়ের প্রয়োজন পড়ে। অনেকের ধারণা চা খাওয়ার কোনো উপকারিতা নেই। আসলে এই ধারণা মোটেই সঠিক নয়। কারণ নিয়মিত চা খেলে পাবেন অনেকগুলো উপকার। সেইসঙ্গে বাঁচা যায় বিভিন্ন অসুখ থেকেও। চা খাওয়ার অভ্যাস মোটেও ক্ষতিকর নয়। তবে তা খেতে হবে পরিমিত।

অনেকের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও। ক্লান্তি দূর থেকে শুরু করে আয়ু বৃদ্ধি পর্যন্ত – চা পানের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলেছে নানা ধরনের জরিপ ও গবেষণা। আর প্রকাশিত সেসব গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে চা পানের বিভিন্ন ইতিবাচক দিক।

মূলত ক্যাফেইনের কারণেই চায়ের মতো পানীয়ের দিকে বেশিরভাগ মানুষ ঝুঁকে থাকে। সকাল সকাল ঘুম তাড়িয়ে তাজা হতে চা অনেকটা ইঞ্জিনের তেলের মতোই কাজ করে। তবে কফি বেশ জনপ্রিয় হলেও চায়ের থেকে তা কিছুটা পিছিয়ে। এর একটি কারণ হতে পারে এতে থাকা ক্যাফেইনের পরিমাণ।

সমান সাইজের এককাপ কফিতে যেখানে ৮০ থেকে ১১৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, সেখানে একই পরিমাণ চায়ে থাকে ৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, তুলনা করলে যার পরিমাণ দাঁড়ায় অর্ধেকেরও কম।

লন্ডনের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একদিনে একই সমান চা-কফি খাওয়ার পর মনোযোগের ক্ষেত্রে অভিন্ন ফলাফল দেখা গেলেও রাতে ঘুমানোর সময় কফি খাওয়া ব্যক্তিদের কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। অন্যদিকে, যারা চা খায় তাদের তাদের ঘুম তুলনামূলক দীর্ঘ ও প্রশান্তিদায়ক হয়।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা যে ‘স্ট্রেস কন্ডিশন’ বা মানসিক চাপে পড়ে যাই সেখান থেকে আমাদের শরীরের ভেতরে অক্সাইডস নামের এক ধরনের উপাদান সৃষ্টি হয়। চায়ের মধ্যে থাকে এন্টিঅক্সিডেন্ট। চায়ের মাধ্যমে শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করলে তা অক্সাইডসগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ব্যক্তি মানসিক চাপ থেকে রেহাই পায়।

বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চা মানুষের স্নায়ুকে শান্ত করে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ভেষজ চা পানকারীদের তুলনায় নিয়মিত চা পানকারীরা তুলনামূলক শান্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রতিদিন যারা অন্তত তিন কাপ চা পান করেন তাদের হতাশার ঝুঁকি চা পান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম থাকে।

বিভিন্ন গবেষণায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও চা পানের উপকারিতার দিকটি উঠে এসেছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কয়েক কাপ চা পানের ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। এই উপকারিতা ঠিক কতটুকু, সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা না গেলেও তা পাঁচ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।

শরীরের ইনসুলিনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে রক্তের গ্লুকোজকে দক্ষতার সঙ্গে সামলায় চা। রং চা গ্রহণের পর শরীরের কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন বের হয়। আর ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

নেদারল্যান্ডসের ১৩ বছরব্যাপী এক গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি কিছু পরিমাণে হৃৎপিণ্ডকেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিয়ে করা গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দিনে ছয় কাপের বেশি চা পান করা ব্যক্তিদের হৃদরোগের শঙ্কা এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যায়।

যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে পাঁচ লাখ চা পানকারীদের নিয়ে করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি চা পান করার সঙ্গে মৃত্যুর ঝুঁকি কিছুটা কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। যারা প্রতিদিন দুই কাপ বা তারচেয়ে বেশি চা পান করেন তাদের চা পান করেন না – এমন লোকদের তুলনায় যে কোনও কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি নয় থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কম থাকে।

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, চা পানে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু ঝুঁকিও কমে যায়। সেক্ষেত্রে চায়ের তাপমাত্রা, দুধ বা চিনি যুক্ত করা কিংবা ক্যাফেইন বিপাকের হারের মতো বিভিন্ন অবস্থা নির্বিশেষে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে চা। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের ‘চা’ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এতে পুষ্টিগুণ সামান্য থাকলেও, পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ক্যাটেচিন নামক উপাদানের উপস্থিতি ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধা দেয়। ফলে চা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা