অনলাইন ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্রিকেটসহ বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নে আরাফাত রহমান কোকোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কোকো রাজনীতির বাইরে থেকে পুরোপুরিভাবে খেলাকে খেলা হিসেবে দেখে তাঁর সংগঠনের জন্য ব্যয় করেছেন এবং তা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করেছেন। ক্রিকেটে এখন যে ভিত্তি, সেটা তৈরি করেছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ৫১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ‘আরাফাত রহমান কোকো ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন খেলাধুলা, গানবাজনা, রাজনীতি—কোনোটাই দলীয়করণের বাইরে নয়। যোগ্যতা বা নিরপেক্ষতা দিয়ে নয়, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগের যে কেমিস্ট্রি, এই কেমিস্ট্রিটা হচ্ছে দলীয়করণের কেমিস্ট্রি। নিরপেক্ষতা অথবা দলের বাইরে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা, এটা তাদের মধ্যে নেই। আজকে গোটা রাষ্ট্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে তারা। এটা তাদের আদর্শগত, নীতিগত বলব। কারণ, ১৯৭৫ সালে তারা একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমরা তো সেগুলো ভুলে যাইনি। আজকে যদিও সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এত সহজে সত্যকে তো ঢেকে দেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সময়ে খেলাধুলা বলুন, গান-বাজনা বলুন আর রাজনীতি বলুন—কোনোটাই দলীয়করণের বাইরে নয়। আমরা ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম সেই চেতনাটি ছিল গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার চেতনা, গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ করবার চেতনা, সেই চেতনাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’

জিয়াউর রহমানকে খাটো করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখবেন, এই দেশের স্বাধীনতা যিনি ঘোষণা দিলেন, যিনি যুদ্ধ করলেন, একই সঙ্গে যিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসার পরে ক্রীড়াঙ্গনে উদ্দীপ্ত করলেন, দেশকে জাগিয়ে তুললেন, তাঁর সম্পর্কে আজকে যেগুলো একেবারেই সত্য নয়, মিথ্যা সমস্ত কথা বলে তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ সমর্থক না হলে কোথাও ডাক পাওয়া যায় না অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে এক অনুষ্ঠানে আমাদের এক প্রথিতযশা শিল্পী, যিনি লালনগীতিকে সবচেয়ে বেশি জনগণের কাছে, বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছেন, কণ্ঠশিল্পী ফরিদা পারভীনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁর স্বামী, যিনি সবচেয়ে ভালো বাঁশি বাজান, হাকিম সাহেবের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। ওনারা খুব দুঃখ করে বললেন, এখন আর তাঁদের সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে অথবা সরকারের স্পনসর যেসব টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আছে, তারা তাঁদের আর ঢাকেন না। কী নিদারুণ অবস্থা চিন্তা করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী ফরিদা পারভীন লালনসংগীত-লোকসংগীতে আর যিনি আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারও পেয়েছেন, হাকিম সাহেব ওই ধরনের বংশীবাদক, তাঁদের ডাকা হয় না। ঠিক একইভাবে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন কিন্তু তাঁদের (আওয়ামী লীগ) সমর্থক ছিলেন না। তাঁরা মারা যাওয়ার পরে তাঁদের মরদেহ শহীদ মিনারে পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি।’

উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো দলমত–নির্বিশেষ আমাদের যে রাষ্ট্র, যেটা আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বহু চিন্তার যে রাষ্ট্র, বহুমতের যে রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রকে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখানে কে বিএনপি করে, কে আওয়ামী লীগ করে, কে সিপিবি করে, কে অন্যান্য দল করে, ওটা বেশি ব্যাপার নয়, ব্যাপারটা হচ্ছে এই রাষ্ট্রকে সবার কথায়, সবার মতের চিন্তার স্বাধীনতা এবং জনগণের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব। তাহলেই ক্রিকেট, ক্রীড়াঙ্গন সবকিছুরই উন্নয়ন হবে।’

ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা, ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সহসভাপতি শাহ নুরুল কবির শাহিন, ক্রীড়া সংগঠক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও সর্বশেষ নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।