অনলাইন ডেস্ক : সুন্দরবনকে রক্ষা, নৈতিক, জাতীয় ও সাংবিধানিক দায়িত্ব উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, স্বাধীনতার আগে সকল সুযোগ-সুবিধা যেত পশ্চিম পাকিস্তানে আর শোষণ হতো পূর্ব পাকিস্তান। যত ক্ষতিকর প্রকল্প হতো পূর্ব পাকিস্তানে। তেমনি বাংলাদেশে যত ক্ষতিকর প্রকল্প তা যৌথভাবে করছে ভারত। সমস্ত সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে যাবে ভারত। এই জায়গায় মনে হয় চিন্তা-ভাবনার সময় এসেছে। ‘ইউনেস্কোর ৪৩তম সভার সকল সুপারিশ বাস্তবায়ন, সুন্দরবনের পাশে রামপালসহ সকল শিল্প নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ ও সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন’ করার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।

কমিটির আহবায়ক সুলতানা কামাল বলেন, রামপালের প্রকল্প নির্মাতা ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি তাদের নিজ দেশ ভারতে সকল কয়লা বিদ্যুত্ প্রকল্প স্থগিত করেছে। তারা তাদের কার্বন তৈরির দায় কমাতে চায়।

তারা গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম সৌর শক্তি পার্ক স্থাপনের জন্য ২৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা কয়েকটি রাজ্যের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্ধদিবস বন্ধ রাখার কথাও জানিয়েছে। অথচ ওই একই প্রতিষ্ঠান প্রবল গণআপত্তির মুখেও বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুত্ তৈরিতে পিছপা হচ্ছে না। এটি নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ।

তিনি বলেন, আমি ভারতবিরোধী কোনো কথা বলছি না। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ভারত যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াতো তাহলে আমরা মুক্তিযুদ্ধটা যেভাবে শেষ করতে পেরেছি সেভাবে হয়তো শেষ করতে পারতাম না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেটা স্মরণ করি, সেজন্য অবশ্যই ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞও। কিন্তু আজকে বাংলাদেশকে একটা বাজারে কিংবা তাদের শিল্প কারখানার জায়গা বানিয়ে নিজেরা সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে নেবে, এ বিষয়ে আমাদের এখন চিন্তাভাবনা করতে হবে।

তিনি বলেন, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে কষ্ট হলেও বলছি, সবচেয়ে সস্তা শ্রমের দেশ বাংলাদেশ। এখানে বিনিয়োগে সবচেয়ে ভালো পরিবেশ রয়েছে। অর্থাত্ আমরা সব দিয়ে দিতে পারি। যেনতেনভাবে মানুষকে তাদের জায়গা-জমি থেকে উত্খাত করে রামপালের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প বিভিন্ন জায়গায় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইউনেস্কোর ৪৩তম সভা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের দুরাবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এর আগে ৪১তম সভায় (২০১৭) বেশ কিছু নেতিবাচক কিন্তু সঠিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল ইউনেস্কো। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছিল সেসব বিষয়ে করণীয় সকল কাজ সম্পন্ন করে এবারের অর্থাৎ গত জুনের ৪৩তম সভায় প্রতিবেদন জমা দেয়া। কিন্তু বাকুর সভায় বাংলাদেশের কৃত কাজের প্রতিবেদনে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে করেনি। কারণ ২০১৭ সালের কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য কমিটি আবার জোর তাগাদা দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ দল সরেজমিন সুন্দরবন দেখতে আসবে। আর বাংলাদেশকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবার প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। যা ৪৪তম সভায় মূল্যায়িত হবে। কিন্তু সভা বাংলাদেশ সরকারের কাজকর্মে সন্তুষ্ট না হলে ‘সুন্দরবন বিপদাপন্ন ঐতিহ্য’ তালিকায় চলে আসতে পারে। যা হবে জনগণের ও দেশের জন্য অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুঃখজনক, লজ্জাকর ও অপমানজনক।

তিনি বলেন দেশের মানুষ রামপালসহ সকল ক্ষতিকর প্রকল্প সম্পূর্ণ বাতিল চায়। সরকারের উচিত অবিলম্বে সব বন্ধ করে দেয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে আছে, অবিলম্বে সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুত্ প্রকল্প বাতিল করা। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুল জুড়ে পরিকল্পিত সকল কয়লা বিদ্যুত্ কেন্দ্র বাতিল করে বিকল্প জ্বালানীর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা। সুন্দরবনের বাফার জোন, কোর জোন ও বনের নিকটবর্তী সকল কল কারখানা, এলপিজি কারখানা বন্ধ করা। লাল ক্যাটাগরির শিল্পকে কলমের খোঁচায় সবুজ করণের অবৈজ্ঞানিক, অসত্ ও বেআইনি কাজ বন্ধ করা।

ইউনেস্কোর সকল দিকনির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত কর। সমগ্র দক্ষিণ পশ্চিম বাংলাদেশের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষার কার্যসীমা নির্ধারণ করা এবং সমীক্ষার সকল স্তরে নৈতিক ও বৈজ্ঞানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল মতিন এবং ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের সমন্বয়কারী ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।