শাহনুর চৌধুরী : জীবনযাত্রার খরচ কমাতে প্রতি বছর হাজার হাজার পরিবার ব্যয়বহুল টরন্টো শহর ছেড়ে অন্টারিওর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব পরিবারে ছোট বাচ্চা বা স্কুলগামী শিশু রয়েছে তারা অন্টারিওর লন্ডনের মতো শহরগুলোতে গিয়ে বসবাস করা শুরু করছে। এভাবে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষ লন্ডনে আসায় টরন্টোকে এখন লন্ডনের বৃহত্তম ‘ফিডার শহর’ বলা হচ্ছে।

বেটসি টেভলিন ও তার স্বামী সিয়ান ২০১৬ সালে তাদের ছোট দুটি বাচ্চা নিয়ে টরন্টো ছেড়ে লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তারা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। এত দিনের পরিচিত শহর ছেড়ে নতুন জায়গায় গিয়ে থাকতে পারবেন কিনা-তা ভেবে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু টরন্টোর ব্যয়বহুল জীবন, বিশেষ করে বাড়িভাড়ার চাপে তারা শেষ পর্যন্ত লন্ডনে পাড়ি দেন। এখন তাদের কোন দুঃখ বা অনুশোচনা নেই। রাজনৈতিক বিপনন পরামর্শদাতা ৩৬ বছর বয়সী বেটসি বলেন, আমি এখন অনেক খুশি। এখানে টরন্টোর তুলনায় অনেক কম বাজেটে জীবনযাপন করা যায়। এছাড়া বাচ্চাদের লালন-পালন এখানে অনেক সহজ।

তিনি বলেন, টরন্টোতে ১৬০০ বর্গফুটের আধা-বিচ্ছিন্ন বাড়ির জন্য যে ভাড়া দিতে হত লন্ডনে তার চেয়ে কম ভাড়ায় ২৭০০ বর্গ ফুটের সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ি পাওয়া গেছে। এছাড়া বাড়ির সামনে রয়েছে বড় একটি উঠোন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কর্মজীবী হওয়ায় শিশুদের ডে-কেয়ার খরচও তাদের জন্য একটি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। টরন্টোতে খন্ডকালীন ডে-কেয়ার সেবার জন্য যেখানে প্রতিমাসে খরচ হতো ২২০০ ডলার সেখানে লন্ডনে ফুল-টাইম সেবার জন্য খচর হয় মাত্র ৯৫৮ ডলার।

বেটসি বলেন, আমরা এখানে আসার পর থেকে যা কিছু অর্জন করতে পেরেছি তাতে খুবই খুশি। আমরা আমাদের জমানো অর্থ দিয়ে এখন ছুটি কাটাতে বেড়াতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করতে পারব, টরন্টোতে থাকলে যা সম্ভব ছিল না।

অর্থনীতিবিদ মাইক মফেট বলেন, বেটসির মতো এমন হাজার হাজার পরিবার সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য টরন্টো ছেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া টরন্টোর বাড়িগুলোতে শিশুদের নিয়ে থাকার মতো পর্যাপ্ত জায়গার অভাবেও তারা পরিবার-বান্ধব বাড়ির খোঁজে শহর ছাড়ছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দশক ধরে টরন্টোতে নির্মিত বিলাসবহুল আবাসনগুলো ব্যাচেলর ও সিঙ্গেল দম্পতিদের জন্য ছিল খুবই উপযোগী। এসব কনডোগুলোতে আপনি সঙ্গী নিয়ে ততক্ষণই সুখে থাকবেন যতক্ষণ না সন্তান হয়। একটি বা দু’টি সন্তান জন্মের পর এসব বাসস্থানে আর বসবাসের উপায় থাকে না। তখন আপনাকে লন্ডনের মতো শহরে আবাসন খুঁজতে বের হতে হয়।

মোফেট বলেন, মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে ৬০ হাজার লোক টরন্টো অঞ্চল ছেড়েছেন। তাদের বেশিরভাগ পরিবারেই ৫ বছরের কম বয়সী শিশু রয়েছে। এসব পরিবারের অনেকেই লন্ডনে স্থায়ী হয়েছেন। ফলে শহরটির জনসংখ্যা ও আয়তন দুইই বাড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে লন্ডন শহরটি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্টারিওতে এটি এখন সবচেয়ে বর্ধনশীল শহর এবং কানাডায় ৪র্থ দ্রæততম বর্ধনশীল শহরে পরিণত হয়েছে। সূত্র : সিবিসি