অনলাইন ডেস্ক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমি গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে ম্যাডামকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনেছি, তার শরীরে টেম্পারেচার নেই, শ্বাসকষ্ট নেই। কিন্তু পোস্ট কোভিড জটিলতায় তার হার্ট ও কিডনি এফেক্টেড। এটা নিয়ে চিকিৎসকেরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, চিন্তিত।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তবে ম্যাডামকে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। অনেকদিন পর তার মুখে হাসি দেখেছি, যেটা এই কয়দিন ছিল না। একেবারেই ছিল না।’

বিদেশে চিকিৎসার আবেদন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, তার পরিবারের পক্ষ থেকে যখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছিল, যদিও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। চিকিৎসকেরা বলছেন, উন্নত দেশে এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, যেগুলোর মাধ্যমে তার চিকিৎসা সম্ভব, যেটা এই দেশে নেই। সেই কারণে বারবার করে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের সরকার আবেদনে সাড়া দেয়নি। তারা মনে করে, বেগম জিয়া যদি দেশের বাইরে যান, তাহলে আবার তিনি তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করবেন। ভয়টা কেন, ভয়টা এ কারণেই এদেশের জনগণের যে নেতা, সেটা তিনি। তিনি গণতন্ত্রের শেষ আশ্রয়স্থল।’

‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, রুহুল আমিন গাজী এবং নিপুন রায় চৌধুরীসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি চাই’ শীর্ষক এ সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার রোজিনাকে দিয়ে একটি শিক্ষা দিতে চায়। দেখো সাংবাদিক ভাইয়েরা, বেশি নাচানাচি করো না। এটাই ফ্যাসিস্টের চরিত্র। গোটা মানুষকে ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে দিতে চায়।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব বিভক্তিগুলো রাখবেন না, একটা, দুইটা, তিনটা ও চারটা আমাদের সাংবাদিকদের ভাইদের মধ্যে ইউনিয়ন। ফলে একজনের বক্তব্যে জোর পাচ্ছে না। সবাই একজোট হয়ে যদি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চলবে না। তারা দেখবেন সফল হবেন।’

রোজিনা ইসলামের ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘একটি ঘটনা নয়। ৪২ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের এখন পর্যন্ত খুঁজেই বের করতে পারেনি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই-বোনদের আহ্বান জানাব, আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বার্থে ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হই। তাহলে দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে ক্ষমতায় যারাই থাকুক কারো সাথেই সরকার অন্যায় করতে পারবে না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকর্মী ও সাংবাদিক রোজিনা ইসলামসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সরকার এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এনেছে তা দেশের মানুষ বিশ্বাস করে না বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বুঝলাম আপনারা সরকারের দুর্নীতি-অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনারা লিখতে পারবেন না। তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মানুষের ভোট এবং ভাতের অধিকার আদায়ের পক্ষে থাকা গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে পোস্টমর্টেম করে অসত্য লিখেন কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন আপনারা সাগর-রুনি হত্যার পর একদিন পত্রিকা বন্ধ রাখতে পারলেন না। কেন রোজিনা ইসলাম গ্রেপ্তারের পর একদিন পত্রিকা বন্ধ রাখতে পারলেন না। রোজিনা ইসলাম গ্রেপ্তারের পর আপনারা যে ঐক্য গড়েছেন তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এই ঐক্য কতক্ষণ রাখতে পারেন সেটাও দেখার বিষয়।’