অনলাইন ডেস্ক : জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ গৃহীত ‘গণহত্যা কনভেনশন’ লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। তারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলের আচরণে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও মানবিক আইন লঙ্ঘন ঘটছে। সেখানে ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতি আরোপ করা হয়েছে। ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু ঘটেছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধ থেকে গাজার বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ লাইনে অবরোধ দিয়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে গণহত্যা সংঘটিত করতে প্ররোচনার জন্য তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন– ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তাদের বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি বিভিন্ন সময় ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যার জন্য ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে উৎসাহ জুগিয়েছিল।
গাজা যুদ্ধকে আমালেক নামে পরিচিত শত্রুর বিরুদ্ধে ইহুদিদের লড়াইয়ের গল্পের সঙ্গে তুলনা করে নেতানিয়াহু গণহত্যায় উৎসাহ দিয়েছিলেন। হার্জোগ হামাসের হামলার জন্য সমগ্র গাজাবাসীকে হত্যা করা উচিত বলে উস্কানি দিয়েছিলেন। গ্যালান্ট এক বক্তব্যে ‘ইসরায়েল মানব পশুদের সঙ্গে লড়াই করছে’ উল্লেখ করে গণহত্যাকে উস্কে দেন।
জার্মানিতে নাৎসিরা ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করেছিল। এই হত্যাকাণ্ড ইতিহাসে ‘হলোকাস্ট’ নামে পরিচিত। সেই গণহত্যার স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘে ১৯৪৮ সালের ওই কনভেনশন গৃহীত হয়েছিল। এতে কনভেনশনে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে একটি জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলা হয়েছে। আর ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এটাই ঘটাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও হামাস প্রভাবিত। তিনি তদন্ত কমিশনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে করে।
প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশ হলো, যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ কতগুলো দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনের ফলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমশ আন্তর্জাতিক নিন্দা বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইসরায়েল তার পশ্চিমা ও আরব মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। সোমবার কাতারে আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব ওঠে।
নেতানিয়াহু মনে করেন, জর্ডান নদী ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী ভূমির কোনো অংশে ফিলিস্তিনিরা কখনও স্বাধীনতা পাবে না। কারণ, ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে তা ইসরায়েলিদের বিপদের কারণ হবে। ইসরায়েলি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করেন, এই ভূমি কেবল ঈশ্বর ইহুদি জনগণকে দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) মানুষকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বাস্তুচ্যুতি ঘটাচ্ছে। এতে গাজা শহরের ১০ লাখ মানুষ জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিমান হামলা এবং গাজা শহরের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। আইডিএফের দাবি, এই ভবনগুলো হামাস পরিচালিত ‘সন্ত্রাসী টাওয়ার’। এ ছাড়া ইসরায়েল গাজায় মানুষের জন্ম রোধেও ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা গাজার বৃহত্তম ক্লিনিকে হামলা করে প্রায় ৪ হাজার ভ্রূণ, এক হাজার শুক্রাণুর নমুনা এবং নিষিক্ত ডিম্বাণু ধ্বংস করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা রয়েছে। এই মামলার বিচার হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক বিভাজনকে আরও গভীর করে তুলেছে।