Home আন্তর্জাতিক গাজায় ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় ত্রাণ বিতরণের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র নতুন এক মানবিক সহায়তা তহবিল গঠন করছে। এর লক্ষ্য হলো ইসরায়েলকে সঙ্গে নিয়ে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। যাতে জাতিসংঘের মতো সংস্থাকে এ প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়।

শুক্রবার (৯ মে) মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানান, এই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের নতুন সংস্থা সহায়তা বিতরণে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সহায়তা পাবে। কিন্তু ইসরায়েল সরাসরি এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে না। বৃহস্পতিবার এ পরিকল্পনার ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি বরুস। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর মাধ্যমে সহায়তা বিতরণে বাধা এড়াতে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের একটি যৌথ উদ্যোগ।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানায়, নবগঠিত জিএইচএফ একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা বিদ্যমান জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাঠামোকে প্রতিস্থাপন করবে। এই কাঠামোর অধীনে বেসরকারি ঠিকাদারদের দিয়ে গাজায় বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের উপস্থিত হয়ে সহায়তা সংগ্রহ করতে হবে। ইসরায়েল গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের সহায়তা প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। তাদের দাবি, সহায়তা যেন হামাসের হাতে না যায় তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ প্রত্যাহার হবে না। নতুন প্রস্তাবে সহায়তা বিতরণে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ দিতে চাওয়ায় মানবিক সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র সাবেক মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেন, এটা মূলত ‘এইড-ওয়াশিং’। ইসরায়েল ও তার মিত্ররা সহায়তার নামে মানুষকে অনাহারে আত্মসমর্পণে বাধ্য করছে। মানুষকে অনাহারে ধ্বংস করে বিতাড়িত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটি গণহত্যার কৌশল। গানেস আরো বলেন, ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএ-কে ধ্বংস করতে চায়। অথচ এই সংস্থাই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যার অবকাঠামো, কর্মী, গুদাম ও যানবাহন রয়েছে গাজায় ব্যাপক অনাহার ঠেকাতে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তহবিল পরিচালনায় সাবেক বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি দায়িত্ব পেতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাক্সিস নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে তার আলোচনা চলছে। ইসরায়েল নিজেই তার নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় একটি বিতরণ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। সেখানে বলা হয়, চারটি ‘নিরাপদ বিতরণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে, প্রতিটি ৩ লাখ মানুষকে সেবা দেবে। গাজার উত্তর থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের এসব কেন্দ্রে এসে সহায়তা নিতে হবে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে। তারা বলছে, সহায়তা সংগ্রহ করতে এসে বহু ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন।

এ বিষয়ে শুক্রবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাকাবি বলেন, সবচেয়ে বড় বিপদ হলো কিছু না করা। অনাহারে মানুষের মৃত্যু প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি দাবি করেন, সহায়তা ‘কার্যকর ও নিরাপদভাবে’ বিতরণ করা হবে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫৭ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা গেছেন এদের অধিকাংশই শিশু, অসুস্থ ও প্রবীণ।

জাতিসংঘ মানবিক সংস্থার মুখপাত্র জেন্স লারকে মঙ্গলবার বলেন, বিদ্যমান সহায়তা কাঠামো ভেঙে ফেলার এই উদ্যোগ একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস, যার মাধ্যমে মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক অস্ত্রে র পান্তর করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ হওয়া উচিত কেবল মানবিক প্রয়োজন বিবেচনায়।

গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই থেকে গাজায় অবরোধ ও হামলার মধ্যে প্রায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ২৩ লাখ মানুষের অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুহারা হয়েছেন এবং সহায়তা না পেলে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সূত্র: আলজাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি

Exit mobile version