চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত ৭ই আগষ্ট রবিবার পিকনিকে যেন মানুষের ঢল নেমে এসেছিল। টরেন্টো শহর থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে নদীর কুলে নান্দনিক প্রাকৃতিক পরিবেশে পিটারবোরো শহরের নিকোলাস ওভাল প্যভিলিয়ন নামক পার্কে শহরের সবচেয়ে বড় এবং অত্যন্ত সুশৃংখল বনভোজন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল।

এই উল্লেখযোগ্য আয়োজনে অন্যতম আকর্ষন ছিল চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ঐতিহ্যবাহী সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোনের পরিচালনা সম্পাদক জসিমউদ্দিন চৌধুরীর উপস্থিতি। সংগঠনের সভাপতি সরওয়ার জামানের সভাপতিত্বে জনাব জসিমউদ্দিন চৌধুরীকে সংবর্ধনা জানিয়ে শিবু চৌধুরী, আলমগীর হাকিম, নাসিরউদ্দৌজা, সেলিনা হোসাইন, সৈয়দ শওকত, সেলিনা সরওয়ার, মো শামসুদ্দিন খলেদ সেলিম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান সংগঠনের ট্রেজারার সনৎ বড়ুয়া, মো সোলায়মান, কফিল উদ্দিন পারভেজ, মো আজম, বিশ্বজিত পাল, আব্দুল মোমেন জুয়েল, আমিনুল ইসলাম, ডঃ মন্জুর মোর্শেদ, ব্যরিষ্টার আশরাফুল করিম রনি, ডাঃ সাগুফা আনোয়ার, শরীফা কামাল মসী প্রমুখ। স্পোর্টস আয়োজনে ছিলেন ফারাহ হোসাইন ফৌজিয়া সহযোগীতায় তরী, মুনতাহার, উজান। স্পোর্টসের সকল পুরস্কার স্পন্সর করেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান শেঠ প্রপারটিস।

ব্রেকফাষ্ট বিতরনে কায়সার কবিরের নেতৃত্ব বেশ কয়েকজন ভলান্টিয়ার আয়েশা, মৌসুমী, ফৌজিয়া, শওকত হোসাইন সক্রিয় ছিলেন। শিবু দার নেতৃত্বে খাবার রান্না এবং বিতরণে নিরলস পরিশ্রম করেছেন একটি টিম যারা সকলের অকুন্ঠ প্রশংসা অর্জন করেছেন। কানিজ ফাতেমার আয়োজনে র‌্যাফেল ড্র এর টিকেট বিক্রী ছিল রেকর্ড পরিমাণ। বিনয় দার নেতৃত্বে সারাদিন ব্যাপী চা বিতরণ চলছিল। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনায় ছিলেন মৌসুমী বড়ুয়া, মুক্তা পাল, সিরাজী, আলো, শেখর, মারুফ। নাম জানা এবং অজানা অসংখ্য ভলানটিয়ার এই পিকনিক আয়োজনে অবদান রেখেছেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী চক্রবর্ত্তী। পরিবারের এক সদস্যের আকস্মিক অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত পিকনিক কনভেনর শাহাবউদ্দিন বুলবুলকে সবাই মিস করেন এবং দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া করেন। সকল স্পন্সর বিশেষ করে টরেন্টো ঢাকা টরেন্টোর টিকেট নিশিথা ফুডসহ ২৩টি র‌্যাফেল ড্র এর পুরস্কার প্রদানকারী ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে এবং চারটি বাস স্পন্সর কানন গার্ডিয়ান ফার্মেসী, রিয়েলেটর টিম সোলায়মান, রিয়েলেটর সরওয়ার জামান এবং রিয়েলেটর সনৎ বড়ুয়াকে সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

ব্রেকফাষ্টের পর পরই শুরু হয় স্পোর্টস। অসংখ্য ছোট বড় ছেলেমেয়ের কলকাকলীত স্পোর্টস গ্রাউন্ড যেন কচিকাচাদের মেলায় রুপান্তরিত হয়। দুপুরের খাবারের তিনটি লাইন দৃষ্টিসীমানার বাহিরে গিয়ে শেষ হয়। সাদা ভাতের সাথে ডাল, চিকেন, মাটনকারী এবং পরিশেষে শুটকীর তরকারী উপস্থিত সকলকে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে সহায়তা করেছে। খাবারের স্বাদ যেমন ছিল অপূর্ব ঠিক তেমনি উপস্থিত অতিথিদের সুশৃংখল ব্যবহার ছিল উল্লেখ করার মত। খাবারের পর পরই শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্লো বিটের সুরের মূর্ছনায় যেমন সবাই মোহিত ছিল, ঠিক তেমনি হাই বীটের গানের তালে ছোট বড় সব বয়সের উত্তাল নৃত্য এক অপূর্ব আনন্দময় দৃশ্যের অবতারণা করে। উপস্থিত অতিথিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম আইডল সংগীত প্রতিযোগিতা। সব আয়োজনে বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পরার মত। বিকাল না নামতেই পরিবেশিত হয় মিষ্টি, ঝাল মুড়ি, তরমুজ, ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুট সহকারে সাড়া দিন ব্যাপী ছিল চা বিতরণ। এর মাঝে অনুষ্ঠিত হয় দুই শত এর অধিক মহিলার অংশগ্রহণে জমজমাট মিউজিক বীটের তালে তালে পিলো পাস গেমস। সর্বশেষে ছিল দিনের অন্যতম আকর্ষণ র‌্যাফেল ড্র। প্রথম পুরস্কার টরেন্টো ঢাকা টরেন্টোসহ ২৩টি পুরস্কার ড্র এর মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। সারাদিনের রৌদ্রের আলোছায়ায় মমতা মাখানো দিনের শেষে যখন গৌধুলীর আলোয় আলোকিত সন্ধ্যা নামছিল তখন সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এই সুবিশাল আয়োজনে যাদের অবদান ছিল তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন। হয়তো কত নাম বাদ পরে গেল তবুও অতিথি এবং আয়োজনকারীদের ক্লান্ত চেহারায় ছিল তৃপ্তির আভাস। এই সুবিশাল আয়োজনে পর্যাপ্ত সুস্বাদু খাবার, অসংখ্য গেমস, সংগীতের মুর্ছনা, র‌্যাফেল ড্র এর পুরস্কার, সর্বোপরী হাজারো চট্টলাবাসীর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সন্ধ্যা নামার প্রাক্কালে রাত্রি ৮টায় বনভোজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।