অত্যন্ত আনন্দঘন ও জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে নন্দন টেলিভিশন কানাডার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “চট্টগ্রাম সমিতি কানাডার” শুভ যাত্রার প্রথম প্রহর। সূর্য ডোবার আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে – মিল্টন, হ্যামিলটন, ওকভিল, কিচেনার, মিসিসাগা, ব্রাম্পটন এমনকি মন্ট্রিল থেকেও চট্টগ্রামবাসীরা সভাস্থলে আসতে শুরু করে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নবীন – প্রবীণের সরব উপস্থিতিতে মুহূর্তেই নন্দন টিভির হলরুম পরিণত হয় কানাডার বুকে ছোট্ট একখন্ড “চট্টগ্রামে।”

আড্ডা, হাসি আর উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠে সভাস্থল। করোনাকালীন বাধ্যবাধকতার কারণে আমন্ত্রিতের সংখ্যা ১৫০ জনে সীমাবদ্ধ থাকায় অনেকেই বাসা থেকে ফেইসবুক লাইভের অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং উপভোগ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশ্বমারির করালগ্রাসে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তাদের স্মরণে এবং বিশেষ করে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার সদ্গতি কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরপরই দুদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজান হয়।
সভার সভাপতিত্ব করেন কানাডা ও নর্থ আমেরিকায় অনেকগুলো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিঞা। সূচনা বক্তব্যে সভাপতি সংক্ষেপে “চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা ইনকের” লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। উনার বক্তব্যে উনি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেন “চট্টগ্রাম সমিতি” হবে কানাডায় বসবাসরত সকল শ্রেণী-পেশা-নবীন-প্রবীণ প্রতিটি চট্টগ্রামবাসীর ইচ্ছে -আশা-আকাঙ্খার প্রতিচ্ছবি। তিনি বলেন, ধর্ম-বর্ণ -গোত্র -লিঙ্গ বিশেষে সকল চট্টগ্রামবাসীর সমঅংশদারীত্ব এবং মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে এই সংগঠন। এখানে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা স¤প্রদায়ের কোনো বিশেষ প্রভাব বা প্রতিপত্তির কোনো স্থান থাকবে না। সংগঠনের মূল লক্ষ্য হবে কানাডায় বসবাসরত সকল চট্টগ্রামবাসীকে একত্র করে বীর চট্টলার হাজার বছরের ইতিহাস -ঐতিহ্য -সংস্কৃতিকে কানাডা তথা নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে একটা গতিশীল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানবিক ও অস¤প্রদায়িক সংগঠন হিসাবে কানাডার বুকে প্রতিষ্ঠা করা। আর এইটা পরিচালিত হবে আমাদের অভিভাবক সংগঠন “চট্টগ্রাম সমিতি বাংলাদেশের” ভাবাদর্শে এবং অবয়বে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে : বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টোর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বর্ষীয়ান নাট্য ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ দুলাল, চট্টগ্রাম সমিতি বাংলাদেশের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মারুফ শাহ চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জয়নাল আবেদীন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার তপন বড়ুয়া, আর্কিটেক্ট আকসিন আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম চৌধুরী সাইফুল, চবির প্রাক্তন ছাত্র মানস রক্ষিত, রোটারিয়ান হুসাইনুজ্জামান শামীম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ বিজিনেস ফোরামের ডিরেক্টর এডমিন মোহাম্মদ হাসান, সংগঠক উজ্জ্বল চৌধুরী, পিল ডিষ্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের শিক্ষক হাসান তারিক চৌধুরী, তরুন উদ্যোক্তা শাহেদ তাহের, নাঈমা ফেরদৌসী, জর্জ ব্রাউন কলেজের অধ্যাপক ডঃ নুরুল হুদা, অধ্যাপক আনোয়ার সাদত, ডঃ হারুনর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার শহীদুল হক চৌধুরী শাহীন, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রুমি খান এবং আরো অনেকেই।

এর পরপরই আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পালা। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াঁকে আহবায়ক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, মেলোডি হোমস এর কর্নধার মনজুর চৌধুরীকে সদস্য সচিব এবং আরিফ রহমানকে কোষাধক্ষ্য করে ৫১ সদস্যের একটা শক্তিশালী আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত সবাই মূহুর্মূহু করতালি দিয়ে নতুন কমিটিকে স্বাগত জানান। নবনির্বাচিত সদস্য সচিব মনজুর চৌধুরী উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং তার উপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা যথাযতভাবে পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সভার সভাপতি এবং নবনির্বাচিত আহবায়ক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াঁর সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই পর্বের সমাপ্তি হয়। তৃতীয় পর্বে টরন্টোর অত্যন্ত পরিচিত মুখ নাট্যকার, অভিনয় শিল্পী ও লেখক তানভী হক সংগীত পরিবেশন করেন। সকলেই উপভোগ করেন।

সমগ্র অনুষ্ঠানে যে বিষয়টি চোখে পড়ার মত ছিল তা হল সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা এক ঝাঁক তারুণ্যের উপস্থিতি – পরবাসে চট্টগ্রামের পরবর্তী কান্ডারী। তাদের সরব উপস্থিতি আমাদের চমকিত করেছে – সেই সাথে আমাদের করেছে আস্বস্ত, আশান্বিত এবং মুগ্ধ।
সব শেষে সুস্বাদু রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। সবকিছু মিলিয়ে একটা গোছানো, পরিচ্ছন্ন ও উপভোগ্য সন্ধ্যা উপহার দিল চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা ইন্ক।