অনলাইন ডেস্ক : কোভিডের তাণ্ডব বিশ্বব্যাপী চলছে এক বছরের অধিক সময় ধরে। এই কোভিডের জন্য প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দুয়ারে ভীড় করছেন আমাদের আশেপাশের অতিপ্রিয় সব স্বজন আর চেনা-চেনা মুখ। গত কয়েকদিনে কোভিডের করাল থাবায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক জগতের বেশ কয়েকজন প্রিয় মুখ। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত চিত্র নায়িকা কবরী, বাংলা চলচ্চিত্রের ‘দি রেইন’ খ্যাত নায়ক ওয়াসিম, বাংলাদেশের ফোকলোর গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, চলচ্চিত্র শিক্ষক, গবেষক ও পরিচালক ডক্টর সাজেদুল আউয়াল, নাট্য অভিনেতা এস এম মোহসীন, বরেণ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী মিতা হক এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্য শিখা রউফ এর পিতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রোউফ ও নাদিম ইকবালের ভাই নাইয়ার ইকবাল। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের পক্ষ থেকে এই চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের প্রয়াণে গভীর শোক জানানো হয়। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সদস্যরা মনে করেন, তাঁদের এই অসময়ে চলে যাওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

সারা বেগম কবরী ১৯৫০ সালের ১৯শে এপ্রিল চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় এর মাধ্যমে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী কবরী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একজন কিংবদন্তী শিল্পী। তিনি ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ১৯শে জুলাই কবরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

মেসবাহউদ্দিন ওয়াসিম ১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিং এর জন্য ‘মি ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাবে ভূষিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া কাউন্সিলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম ১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ ছায়াছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অংগনে প্রবেশ করেন। পরের বছরই তিনি ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রের নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ওয়াসিম অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় ২০০টি। ওয়াসিম গত ১৭ই এপ্রিল ৭১ বছর বয়সে ঢাকার শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান গত ১৪ই এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। ২০১২ সাল থেকে তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদকে ভূষিত অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান দশ বছর বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডক্টর সাজেদুল আউয়াল গত চার দশক ধরে বাংলাদেশের নাটক ও চলচ্চিত্র অংগনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি একেধারে ছিলেন নাট্য ও চলচ্চিত্র কর্মী, চলচ্চিত্র গবেষক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিক্ষক। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে, নাট্যকলা ও ঋত্বিকমঙ্গল। সাজেদুল আউয়াল গত ১৫ই এপ্রিল ৬৪ বছর বয়সে ঢাকায় করোনা জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

এস এম মহসিন গত ১৭ই এপ্রিল ঢাকার বারডেম হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলা নাটকে অবদানের জন্য তিনি ২০২০ সালে একুশে পদকে সম্মানীত হন। এস এম মহসিন ঢাকা শিল্পকলা একাডেমীতে নাট্য বিষয়ক পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্য বিষয়ে শিক্ষকতা করতেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩।

বাংলাদেশের রবীন্দ্র সঙ্গীতের বরেণ্য শিল্পী মিতা হক গত ১১ এপ্রিল মাত্র ৫৮ বছর বয়সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
টরন্টো ফিল্ম ফোরাম প্রয়াত চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অবদানকে সব সময় কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করে।