অনলাইন ডেস্ক : তুমুল উত্তেজনা। চীনের দাবি তাইওয়ান তাদের। তাইওয়ানের দাবি, তারা স্বাধীন, সার্বভৌম। সম্প্রতি চীনের যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে অনুপ্রবেশ করে। তা নিয়ে নতুন এক যুদ্ধের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে একীভূত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু তার ঘোষণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। কোনো চাপের কাছেই তাইওয়ান মাথা নত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

গণতান্ত্রিক জীবনধারাকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার ঘোষণা দিয়েছেন। হংকংকে কেন্দ্র করে যেমন উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল, এবার যেন উত্তেজনা তার চেয়ে তীব্র হয়ে উঠেছে। তাইওয়ানের সামনে নিজেদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন। অন্যদিকে বিশ্বের পরাশক্তি চীনের একটি ‘ইগো’ ইস্যু। ফলে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ওই দুটি দেশের মধ্যে, তা একরকম যুদ্ধের আলামত সামনে এনে দিয়েছে।
অনলাইন আল জাজিরা লিখেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের একত্রীকরণ অর্থাৎ চীনের সঙ্গে তাইওয়ানকে একীভূত করার ঘোষণা জোরালো হলেও, কঠিন অবস্থান নিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন। অন্যদিকে সমতার ভিত্তিতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখ- দাবি করে গত সপ্তাহে টানা চারদিন সামরিক যুদ্ধবিমান টহল দেয় তাইওয়ান প্রণালীতে। এতে তাইওয়ানের ওপর বৃদ্ধি পেয়েছে সামরিক চাপ। অন্যদিকে বেড়েছে রাজনৈতিক চাপ। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এই দ্বীপরাষ্ট্রটির কাছাকাছি ১৪৯টি সামরিক যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে বেইজিং। বাধ্য হয়ে তাদেরকে পিছু ধাওয়া করেছে তাইওয়ান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই দেশটির জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী তাইপে’র একটি র‌্যালিতে বক্তব্য রাখছিলেন। তাতে তিনি তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা প্রশমিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বলেন, তার সরকার হুট করে কোনো কাজ করবে না। তবে কোনো চাপের কাছে তাইওয়ানের জনগণ মাথা নত করবে এমন কোনো মতিভ্রমের মধ্যে থাকা উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা আরো শক্তিশালী করবে তাইওয়ান। আমাদের নিয়ে চীন যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা মেনে নিতে তাইওয়ানকে কেউই চাপ দিতে পারবে না। এটা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রতিরক্ষা সমৃদ্ধ করে তা প্রদর্শন করা হবে। প্রেসিডেন্সিয়াল অফিসের সামনে তিনি আরো বলেন, এসবের কারণ হলো চীন যে পন্থা অনুসরণ করছে তাতে তাইওয়ানের জনগণের গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। এমনকি আমাদের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের কোনো সার্বভৌমত্বও থাকবে না।
এর আগে তাইওয়ান পরিচিত ছিল রিপাবলিক অব চায়না (আরওসি) হিসেবে। কিন্তু দেশটি পরিচালিত হয় গণতান্ত্রিকভাবে। এর অবস্থান চীনের মূল ভূখ- থেকে প্রায় ১৬১ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের ভিতরে। ১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকেই চীন এবং তাইওয়ান আলাদাভাবে শাসিত হয়ে আসছে। ওই গৃহযুদ্ধের সময় কমিউনিস্টরা বেইজিংয়ে প্রতিষ্ঠা করে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। অন্যদিকে পরাজিত জাতীয়তাবাদীরা পালিয়ে চলে যান তাইওয়ানে। সেখানে তারা নিজেদের মতো করে একটি সরকার গঠন করেন।
প্রকৃত স্বাধীনতা সত্ত্বেও, তাইওয়ানকে নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে থাকে বেইজিং। তাদেরকে স্বায়ত্তশাসনের অধীনে এক দেশ দুই ব্যবস্থা নীতি প্রস্তাব করে। ঠিক যেমনটা হংকংয়ে প্রচলিত। কিন্তু তাইওয়ানের বেশির ভাগ বড় বড় দল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সূচনা এখন থেকে ৫ বছর আগে। ওই সময় তাইওয়ানের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সাই ইং-ওয়েন। এ সময় থেকেই রাজধানী তাইপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেই থেকে জিনপিংয়ের অধীনে চীনের সঙ্গে তাদের উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ৬৫ বছর বয়সী সাই ইং-ওয়েনকে বেইজিং বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করে। কারণ, তিনি তাইওয়ানকে ‘এক চীন’-এর অধীনে এমনটা মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি তবু সমতার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন রোববার। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট বলেন, তাইওয়ানের শুভ কামনার কোনো পরিবর্তন হবে না। তার সরকার চীনের সঙ্গে স্থিতাবস্থায় একতরফাভাবে পরিবর্তন না আনার জন্য যা যা করতে পারে, তা করবে। তিনি আরো সতর্ক করেন এই বলে যে, তাইওয়ান পরিস্থিতি অধিক মাত্রায় জটিল। গত ৭২ বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতি বেশি জটিল। তিনি বলেন, তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা জোনে চীনের সামরিক উপস্থিতি মারাত্মকভাবে জাতীয় নিরাপত্তা ও বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গণতন্ত্র রক্ষায় সামনের সারিতে থাকবে তাইওয়ান। তিনি আরো বলেন, আমরা যত বেশি অর্জন করবো, ততই চীনের দিক থেকে ততই বেশি চাপের মুখোমুখি হবো। আমার দেশবাসী নাগরিকদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রহরীদের (গার্ড) হতাশ করার মতো সুযোগ আমাদের হাতে নেই।
পরে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করা বিষয়ক সামরিক কর্মসূচিকে আধুনিকায়ন করা বিষয়ক কর্মসূচি পরিদর্শন করেন, যেখানে তারা নিজেরাই সাবমেরিন ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র চীনের গভীরে আঘাত করতে সক্ষম।