রাশিদুল হাসান : টরন্টোতে প্রতি ১০ জনের একজন এখন ফুড ব্যাংকের উপর নির্ভর করছেন, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বলে একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে। টরন্টোভিত্তিক দুটি দাতব্য সংস্থা ‘ডেইলি ব্রেড ফুড ব্যাংক’ এবং ‘নর্থ ইয়র্ক হার্ভেস্ট ফুড ব্যাংক’ তাদের হুস হাংরি শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আবাসনের আকাশচুম্বি ব্যয়, মজুরি না বাড়া এবং অপর্যাপ্ত আয় অধিক সংখ্যক পরিবারকে দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। ফুড ব্যাংকই এখন তাদের শেষ আশ্রয়।

কানাডার সর্ব বৃহৎ নগরীটির খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্য নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, টরন্টোর ফুড ব্যাংকগুলোতে এ বছর ২৫ লাখ ৩০ হাজার বার মানুষ খাদ্য সংগ্রহের জন্য এসেছে। এক বছর আগের তুলনায় এটা ৫১ শতাংশ বেশি এবং এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আশাংকা করা হচ্ছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষ নাগাদ সংখ্যাটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

টরন্টোর ফুড ব্যাংকগুলোতে এ বছর নতুন গ্রাহক বেড়েছে ১৫৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফুড ব্যাংকের সাহায্য নেওয়া ব্যক্তিদের গড় আয় মাসে ১ হাজার ১৩১ ডলার, যা টরন্টোর দারিদ্রসীমার অনেক নিচে। বর্তমানে টরন্টোর দারিদ্রসীমা ধরা হচ্ছে মাসিক ২ হাজার ৩০২ ডলারের নীচে থাকা উপার্জনের মানুষদের।

ফুড ব্যাংকের সেবাগ্রহীতাদের ৮৯ শতাংশ সাশ্রয়ী নয় এমন বাড়িতে বসবাস করেন এবং তাদের এক চতুর্থাংশ আয়ের সিংহ ভাগই আবাসন বাবদ ব্যয় করে থাকেন। এটা তাদেরকে গৃহহীনতার উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
ডেইলি ব্রেড ও নর্থ ইয়র্ক হার্ভেস্ট এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এটা তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। টরন্টোর প্রতি দশজনের মধ্যে একজন বাসিন্দা ফুড ব্যাংক ব্যবহার করছেন। এটা ভয়ংকর এবং অনাকাংখিত। এ ব্যাপারে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে, সুন্দর ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে টরন্টোর যে পরিচিত আছে, তা অচিরেই শেষ হয়ে যাবে।

নর্থ ইয়র্ক হারভেস্ট ফুড ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রায়ান নোবেল সিবিসি টরন্টোকে বলেছেন, ‘আমরা এই শহরে এক গভীর সংকটের মধ্যে আছি। আমরা একটি স¤প্রদায় হিসাবে সত্যিকারের বিপদে আছি, যখন আমাদের ১০ জনের মধ্যে একজনকে ফুড ব্যাংকে যেতে হয়, তখন আমাদের গর্ব করার আর কিছুই থাকে না, বা আমাদের কখনই বলা উচিৎ নয় আমরা এক উন্নত সমাজে বসবাস করছি। তিনি আরও বলেন, নর্থ ইয়র্ক হার্ভেস্ট এবং ডেইলি ব্রেড ফুড ব্যাংক যেসব ফুড ব্যাংকে খাদ্য বিতরণ করে তারা স্বেচ্ছাসেবকদের একটি ঢিলেঢালা নেটওয়ার্ক দিয়ে কাজ করছে এবং তারা সহযোগিতা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। কিন্তু ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি এমন গতির সাথে তাল মেলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

সমাজের নি¤œস্তরের মানুষেরা মনে করেন, ক্রমবর্ধমান ফুড ব্যাংক ব্যবহারের সমস্যাজনক প্রবণতা ভাঙতে সরকারের সামাজিক সহায়তা কর্মসূচি আরও বাড়াতে হবে। সেই সাথে আবাসন, খাদ্য দ্রব্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো ব্যবস্থা নিতে হবে। সূত্র : সূত্র : সিবিসি