অনলাইন ডেস্ক : করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেও তা নিতে পারছেন না কানাডার টরন্টোর অনেক অধিবাসী। ভ্যাকসিন স্বল্পতায় সেখানে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টিকার জন্য প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কার্যত হাহাকার চলছে। হতাশ ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এজন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দোষারোপ করছেন।
একজন কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষক সব রকমের অনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরও টিকা না পেয়ে শনিবার সংবাদ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা হতাশ, সত্যিই হতাশ, আমরা জানিনা ভ্যাকসিনের জন্য আমরা এখন কী করব, কোথায় যাব?
লরেইন লেনডর নামে ওই শিক্ষক আরো বলেন, সরকার টিকার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও শিক্ষকদের অগ্রধিকার দিয়েছিল। আমরাও সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন হতাশ হওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাদের পাওয়ার কথা তারাই যদি সময় মতো টিকা না পায় তাহলে অন্যদের অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। এদিকে অন্টারিও সরকার বলছে, টরন্টোর যেসব এলাকায় করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি এবং যেসব এলাকায় স্বল্প আয়ের লোকজনের বসবাস সেসব এলাকায় টিকা কার্যক্রম জোরদারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত টিকাকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ওইসব এলাকায় ১৮ বছরের বেশি বয়স্কদের দ্রুত টিকা দেয়া হবে। কিন্তু সরকারের এই ঘোষণায় মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না। অনেক লোক টিকার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করে নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্রে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন। ভাগ্যবান দু’একজন টিকা পাচ্ছেন। বেশিরভাগই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্কারবার্গ এলাকার জন্য জন ম্যাকেয়ার পাবলিক স্কুলে স্থাপিত টিকাকেন্দ্রে এসে ফিরে যাওয়া ইসহাক রহমান বলেন, আমি পরপর দুই দিন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাইনি। গত শনিবার তিনি লাইনে থাকা অবস্থাতেই সংবাদ মাধ্যমকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল আমাকে বলা হয়েছিল।। আজও কয়েক ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাব বলে মনে হচ্ছে না।
একই কেন্দ্রে কথা হয় লরেইন ল্যান্ডরের সাথে। তিনি বলেন, টিকা নেয়ার আশায় সকাল ৭ টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এর আগে নিয়ম মাফিক নিবন্ধন করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি। এখন বলা হচ্ছে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না থাকায় আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তিনি বলেন, ভোর রাত থেকে শত শত লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। একন টিকা কেন্দ্রের নার্স এসে সবাইকে ফিরে যেতে বলছে। কবে আবার আসতে হবে তাও তারা বলতে পারছে না। সত্যিই এমনটা হবে তা আমরা ভাবতেও পারিনি।
ইনস্টিটিউট ফর ক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েট সায়েন্সের (আইসিইএস) পরিচালিত এক জরিপে স¤প্রতি দেখা গেছে, যেসব এলাকায় ভ্যাকসিনেশনের হার বেশি সেব এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার কম। অন্যদিকে যেখানে টিকা দেয়া যায়নি সেখানে সংক্রমণের হারও বেশি। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত জরিপেও একই চিত্র দেখাগেছে। ফলে জনগণ টিকা নেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত মজুত না থাকায় সরকার সবাইকে টিকা দিতে পারছে না। চাহিদা মতো ভ্যাকসিন দিতে না পারায় টিকা কেন্দ্রগুলো পড়েছে বিপাকে। যেখানে প্রয়োজন ৪০ হাজার ডোজ সেখানে যদি মাত্র ১ হাজার ডোজ পাঠানো হয় তাহলে অবস্থা কিরূপ দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় আব্দুর রউফ নামে একজন বলেন, আজ যা দেখলাম তা কানাডাতে আগে কখনো দেখিনি। টিকা দেয়ার কথা বলে আমাদেরকে ডেকে এনে ফেরত দেয়া হল। সত্যিই আমরা হতাশ।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিভাগ নানান পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় টিকার চাহিদাও বেড়ে গেছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী টিকার মজুদ নেই। তাই যা আছে তা দিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী যে সব এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি সেসব এলাকাকে অগ্রধিকার দেয়া হচ্ছে। অন্টারিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ভ্যাকসিনের পরিমাণ বাড়াতে পারলে সংক্রমণ কমে আসবে। তাই যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি সেসব এলাকায় ভ্যাকসিনের হার বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় কানাডা এখন পর্যন্ত টিকাদানের হার অনেক কম। তারমধ্যে দেশটির অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় টরোন্টতে এই হার আরও কম। ফলে টিকার জন্য টরোন্টবাসীর মধ্যে হাহাকার চলছে।
নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাদান শুরু হয়। এ পর্যন্ত সেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক অর্থাত ৫০% লোককে পূর্ণ মাত্রার টিকা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৪২ শতাংশ, জার্মানিতে ২২%, স্পেনে ২২% ও ইতালিতে ২০% হলেও কানাডাতে এই হার এখনো অনেক কম। সূত্র : সিবিসি নিউজ