Home কানাডা খবর টরন্টো গবেষকের প্রতিবেদন : পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আগ্নেয়াস্ত্রের হিসাব...

টরন্টো গবেষকের প্রতিবেদন : পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা আগ্নেয়াস্ত্রের হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে

অনলাইন ডেস্ক : টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন, সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় আসা আগ্নেয়াস্ত্রের হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। জুইয়ং লি নামের ওই গবেষক বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর বন্দুক আসছে। কিন্তু এর সঠিক হিসাব রাখা হচ্ছে না বা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের প্রবাহ নিরূপণকে কঠিন করে তুলেছে। আন্তঃসীমান্ত বন্দুক পাচারের এই সীমিত তথ্যের জন্য অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশকেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ইউ এস এ’র সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ও ফ্যাকাল্টি সদস্য জুইয়ং লি’র মতে, বিশ্বে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি বন্দুক রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং তারা বিশ্বব্যাপি আগ্নেয়াস্ত্রের সবচেয়ে বড় যোগানদাতা। প্রতি বছর বৈধ এবং অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। লি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈধ পথে কানাডায় আসা বন্দুকের প্রবাহের দীর্ঘ মেয়াদী ডাটা থাকলেও গবেষণায় দেখা গেছে অবৈধ পথে অপ্রতিরোধ্যভাবে আগ্নেয়াস্ত্র সীমান্ত অতিক্রম করছে। এসব অস্ত্রের কোন সঠিক হিসাব রাখা হচ্ছে না বা রাখা যাচ্ছে না। এই অস্ত্রগুলো পরে বিভিন্ন পন্থায় মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে।

লি তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, আমাদের কাছে যে সীমিত তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে অপরাধীরা সহিংস কর্মকান্ডে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করছে তার বেশিরভাগই হ্যান্ডগান এবং এগুলো সীমান্তের ওপার থেকে এসেছে। লি বলেন, স¤প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে কানাডায় অপরাধে ব্যবহৃত বেশিরভাগ হ্যান্ডগান এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া ও দক্ষিণাঞ্চলীয় কিছু রাজ্য থেকে। এসব রাজ্যে বন্দুক আইনে শিথিলতা আছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে লি তার প্রতিবেদনে বলেন, সীমান্ত শহরগুলিতে ঘটা বন্দুকবাজির ঘটনাগুলোতে অবৈধ আগ্নেয়ান্ত্রের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। অন্টারিওর উইন্ডসরে গত সপ্তাহে এমনি একটি ঘটনায় পুলিশ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। শহরের পূর্বপ্রান্তে একটি সড়কে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় ভিড়ের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হলে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেনি। তবে এগুলো অবৈধ পথে মিশিগান সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বলছে, মিশিগান সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে বন্দুক সম্পর্কিত ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। তাই এগুলো এখন আর নতুন কোন কিছু বলে মনে হয় না।

ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান জেসন বেলায়ার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয়। পরে তা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এগুলোর কিছু অংশ বৈধ ও অবৈধ উভয় পন্থায় কানাডাতেও প্রবেশ করে।

বেলায়ার বলেন, উইন্ডসর পুলিশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও সহিংসতা প্রতিরোধ বিষয়ক একটি বিভাগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে এটি গঠিত হয়েছে। তখন অন্টারিও সরকার প্রদেশজুড়ে বন্দুক সহিংসতা বন্ধ ও অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাজেটে ৩ বছরে ৭৫.১ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অপরাধীরা যারা আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করছে এবং শহরের মধ্যে সহিংতায় লিপ্ত হচ্ছে তাদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এসব অপরাধী আইনকে সম্মান করে না। ফলে আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো সহজে তাদের কাবু করতে পারে না।

এদিকে পুলিশের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে ৫১৮টি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২৩ টি হ্যান্ডগান এবং ১৭৬ টি রাইফেল ও শটগান। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৪৬ টি (৯৩ টি হ্যান্ডগান, ১৬০ টি রাইফেল ও শটগান)। ২০১৯ সালে ৪৮০ টি (১১২ টি হ্যান্ডগান, ১৭৭ টি রাইফেল ও শটগান, ২০১৮ সালে ৫৪ টি হ্যান্ডগান ও ১৩৬ টি শটগানসহ ৩৪৭ টি এবং ২০১৭ সালে ৮৯ টি হ্যান্ডগান ও ২৮৬ টি রাইফেলসহ সর্বোচ্চ ৫৫৫ টি অস্ত্র জব্দ করা হয়। অবৈধ ব্যবহারের কারণে এসব অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ।

গবেষক লি বলেন, পুলিশের জব্দ করা অস্ত্রের তালিকা থাকলেও কানাডায় নিখোঁজ বা চুরি হওয়া অস্ত্রের কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এটি খুবই হতাশাজনক। কারণ এসব অস্ত্রই অপরাধমূলক কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। সূত্র : সিবিসি

Exit mobile version