সাজ্জাদ আলী

একজন ক্রেতা একটি বাড়ি নাকি কন্ডোমিনিয়াম কিনবেন? এমনতর জিজ্ঞাসার জবাব এক কথায় বলা যায় না। জবাবটি ক্রেতার সামর্থ, পছন্দ, প্রয়োজন ইত্যাদি নানাবিধ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। উভয় ধরনের প্রপার্টিরই কিছু সুবিধার দিক এবং কম-সুবিধার দিক রয়েছে। প্রথমেই একটু বলেনি, কন্ডোমিনিয়াম বলতে শুধুমাত্র সুউচ্চ ভবনের একটি এপার্টমেন্টকেই বোঝায় না। একটি টাউন হাউস, সেমি-ডিট্যাচ্ট এমনকি ডিট্যাচ্ট হাউসও কন্ডোমিনিয়াম হতে পারে। আবার শপিং প্লাজা, অফিস বিল্ডিং বা একটি গলফ কোর্সও কন্ডোমিনিয়াম হতে পারেÑ যা ক্রয়-বিক্রয় যোগ্য। পক্ষান্তরে সাধারণভাবে ‘বাড়ি’ বলতে একটি ফ্রি-হোল্ড প্রপার্টিকেই বোঝায়। সেটি হতে পারে একটি পৃথক বাড়ি (ডিট্যাচ্ট), এক সাথে তৈরী দুটি বাড়ির মধ্যে একটি (সেমি ডিট্যাচ্ট) বা টাউন হাউস ইত্যাদি।

কন্ডোমিনিয়াম এবং ফ্রি-হোল্ড প্রপার্টির মধ্যে নানাবিধ পার্থক্য। তবে মৌলিক পার্থক্য হল, প্রপার্টির জমির উপরে মালিকানার সীমাবদ্ধতা সংক্রান্ত। কন্ডোমিনিয়াম প্রপার্টির মালিকের তুলনায় ফ্রি-হোল্ড প্রপার্টির মালিক সংশ্লিষ্ট জমিখন্ডের উপর অনেক বেশি অধিকার রাখেন। যেমন বাড়ির মালিক (সিটির অনুমোদন সাপেক্ষে) জমির উপরিস্থ বর্তমান স্থাপনা বর্ধিতকরণ বা ভেঙ্গে নতুন করে তৈরী করতে পারেন। কিন্তু কন্ডোমিনিয়াম এপার্টমেন্ট বা কন্ডো-টাউন হাউসের মালিকের পক্ষে এককভাবে তেমনটা করা সম্ভব না। কন্ডোমিনিয়ামের জমির উপর ইউনিটগুলোর মালিকদের একক মালিকানাও থাকে না, তাঁদের মালিকানা ধরণ সমানুপাতিক (প্রপরশনেট)।

কন্ডোমিনিয়াম ক্রেতার প্রধান সুবিধার দিকগুলো হল-
১) তুলনামূলকভাবে কম দাম, যা অনেকেরই ক্রয়-সামর্থের মধ্যে থাকে। ২) রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দিকটি কম ঝামেলাপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এপার্টমেন্টের বাইরের কোন কাজই মালিকদের করতে হয় না; কন্ডোমিনিয়াম কর্পোরেশনই পূর্ব নির্ধারিত মাসিক ফি’র বিনিময়ে কাজগুলো করে থাকে। অনেকেই এমন ঝামেলাহীন বসবাস পছন্দ করেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং অবসর জীবনযাপন করছেন এমন ক্রেতাদের মধ্যে কন্ডোমিনিয়াম অধিক জনপ্রিয়। অধিকাংশ কন্ডোমিনিয়াম করপোরেশনেরই মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি’র মধ্যে হিটিং, কুলিং, পানি, বিদ্যুতের খরচ, কমন-এরিয়ার সাধারণ পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতা, ক্ষেত্র বিশেষে কেবল টিভি’র বিলও অর্ন্তভুক্ত থাকে। একটু বনেদি গোছের কন্ডোমিনিয়ামে ব্যামাগার, নিরাপত্তারক্ষী, সুইমিং পুল, পার্টি রুম, গেষ্ট সুইট, ইনডোর গেমস, অন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, টেনিস কোর্ট ইত্যাদি সুবিধাদি থাকে। অনেক ক্রেতাই এমন ব্যবস্থাকে নির্ঝঞ্ঝাট মনে করেন।

কন্ডোমিনিয়ামের কম-সুবিধার দিক বলতে গেলে প্রথমেই আসে তার ‘ভবিষ্যত মূল্যবৃদ্ধির’ বিষয়টি। একটি ফ্রি-হোল্ড বাড়ির তুলনায় কন্ডোমিনিয়ামের ভবিষ্যৎ মুল্যবৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। যে কোন কন্ডোমিনিয়াম এপার্টমেন্ট ক্রয় সিদ্ধান্তের পুর্বে ক্রেতাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঐ কন্ডো-কর্পোরেশনের লিগ্যাল ষ্টাটাস ও ফাইন্যান্সিয়াল ষ্টেটমেন্ট এবং বিগত বছরগুলোতে একই ধরনের এপার্টমেন্টগুলোর বিক্রয়ের গড় মূল্যসূচক যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ক্রেতা সাধারণের এ ব্যাপারে সৎ ও দক্ষ রিয়েল এষ্টেট পেশাদারের সাহায্য নেবার প্রয়োজন রয়েছে। কন্ডোমিনিয়ামের মাসিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি বছরে বছরে কিছু বাড়তে পারে, পুরোনো কন্ডো’র ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা কিছুটা বেশী।

সাধারণ বিবেচনায় ‘বাড়ি’ বলতে একটি ফ্রি-হোল্ড প্রপার্টিকেই বোঝায়। একজন সম্ভাব্য বাড়ি-ক্রেতার শুরুতেই কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়। যেহেতু বাড়ীর মূল্য তুলনামূলকভাবে কন্ডোমিনিয়ামের থেকে অধিক, তাই পছন্দের বাড়ীটির জন্য প্রয়োজনীয় ডাউনপেমেন্টও অধিক হবে এবং মরগেজ পাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। কন্ডো এপার্টমেন্টের তুলনায় বাড়ির ইউটিলিটি বিল, প্রপার্টি ট্যাক্স, মরগেজ পেমেন্ট ইত্যাদি মিলিয়ে খরচ কিছু বেশী। তবে এই বেশী খরচে বাড়তি সুবিধাটাও বাড়ির মালিকই উপভোগ করবেন। বাড়িতে গমরকালে ঘাশকাটা এবং ঠান্ডাকালে বরফ ছাফ করাটা তো রয়েছেই। নতুন বাড়ির কথা আলাদা, কিন্তু পুরোনো বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাড়ীটির বর্তমান অবস্থা একজন অভিজ্ঞ হোম ইনেসপেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করানো দরকার। বিশেষ করে বাড়ির ছাদ, বেসমেন্ট, হিটিং, কুলিং, প্লাম্বিং, ইলেকট্রিক্যাল ইত্যাদি সিস্টেমগুলো দেখে নেওয়া দরকার।
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণভাবে বলা চলে যে (কন্ডোমিনিয়ামের তুলনায়) ফ্রি-হোল্ড প্রপার্টিতে বিনিয়োগ আর্থিক বিবেচনায় নিরাপদ ও অধিক লাভজনক। বসবাসের ক্ষেত্রেও বাড়িই অধিক উপযোগী। বিগত দশকগুলোর দিকে পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায় যে কন্ডোমিনিয়ামের তুলনায় (অন্তত আর্থিক বিবেচনায়) বাড়ির মালিকেরাই অধিক লাভবান হয়েছেন। সীমিত পরিসরে এই বিষয়ের খুটিনাটি সবিস্তারে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। রিয়েল এষ্টেট মার্কেটের ক্রেতাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসার উপরেই কেবলমাত্র আলোকপাত করা হলো।
সাজ্জাদ আলী, রিয়েলটর, ৪১৬-৮৭৯-৭১৪১