শাহনুর চৌধুরী : ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে বিতর্ক সত্বেও কানাডায় করোনা মহামারির টিকা কার্যক্রম জোরদারে এই পাসপোর্ট ভ‚মিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কুইবেকে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর পর এক মিলিয়নেরও বেশি লোক টিকা নিয়েছেন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতেও টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আলবার্টাতেও এই পাসপোর্ট চালুর ঘোষণার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সে দুই ডোজ করোনার টিকা গ্রহণকারীদের এই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এই পাসপোর্টধারীরা রেস্টুরেন্ট, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুলসহ বিভিন্নস্থানে কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। অনেকে এই পাসপোর্টের বিরোধীতা করে বলছে যে, এটি কানাডার নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবে। মূলত যারা বাধ্যতামূলক টিকার বিরোধী তারাই এই বিতর্ক সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে হলে ‘ফুল ভ্যাকসিনেশনের’ কোনো বিকল্প নেই। আর এই টিকার হারকে বাড়াতে হলে অর্থাৎ টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট। ইউনিভার্সিটি অব সাসচুয়ানের অধ্যাপক এবং কমিউনিটি হেলথ বিশেষজ্ঞ ডা. নাজিম মুহাজারিন বলেন, দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীরা অনেক নিরাপদ। তারা কোভিডে আক্রান্ত হলেও সামান্য চিকিৎসাতেই সুস্থ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে টিকা না নেয়ারা কোভিডে আক্রান্ত হলে দ্রæত তাদের শারিরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। হাসপাতালে নেয়ার পরও অনেকের জীবন বাঁচানো যাচ্ছে না। সরকার থেকে বারবার টিকা নেয়ার কথা বললেও অনেকে তা নিচ্ছেন না। এতে তারা যেমন নিজেদেরকে বিপদের মুখে রাখছেন তেমনি অন্যদের জন্যও হুমকি হয়ে থাকছেন। তাই ভ্যাকসিন পাসপোর্টের মাধ্যমে টিকা গ্রহণকারীদের বিশেষ সুবিধা ভোগের সুযোগ দিলে সবাই এই পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আগ্রহী হবেন। ফলে টিকা গ্রহণের হার বাড়বে। তিনি বলেন, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ লোক টিকা নিলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমরা এখনো ওই হার থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। এই পিছিয়ে থাকা শুধুমাত্র এক শ্রেণীর মানুষের টিকা নিতে অনাগ্রহের কারণে।
ইউনিভার্সিটি অব অটোয়ার সহযোগী অধ্যাপক এবং সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ রেওয়াত দেওনান্দন বলেন, ভ্যাকসিন পাসপোর্টের সুফলের বিষয়গুলো যখন সবার সামনে আসতে থাকবে তখন করোনার টিকা নেয়ার আগ্রহ এমনিতেই বাড়বে। বারবার বলা সত্বেও যারা টিকা নেয়নি, তারা ভ্যাকসিন পাসপোর্টের সুবিধা লাভের আশায় টিকা নিতে আগ্রহী হবে। এতে টিকা কার্যক্রম জোরদার হবে। তিনি বলেন, কোন শ্রেণীকক্ষ, অডিটোরিয়াম বা রেস্টুরেন্টে একজন করোনা আক্রান্ত থাকলে তার থেকে সবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অর্থাৎ ইনডোর পরিবেশে নন ভ্যাকসিনেটেডদের অবস্থান খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই যারা টিকা নেননি তাদের ওই সব স্থানে প্রবেশের অনুমতি না দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত। ইউনিভার্সিটি অব অ্যালবার্টার হেলথ ল’ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রধান টিমোথি কাউলফিল্ড বলেন, বাধ্যতামূলক টিকার বিরোধীতা ও সমালোচনাকারীরা যা-ই বলুক না কেন চলমান মহামারি থেকে বাঁচতে টিকার বিকল্প নেই। আর এই টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে ভ্যাকসিন পাসপোর্টসহ যা কিছু চালু করা প্রয়োজন সবই করা উচিত। তিনি বলেন, নাগরিক অধিকারের আগে আমার প্রয়োজন নিরাপদ পরিবেশ। আমার জীবনই যদি বিপন্ন হয়ে পড়ে তাহলে আমি নাগরিক অধিকার দিয়ে কী করব।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিন কলিঞ্জ ফ্রান্সের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো যখন তার দেশে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নীতি ঘোষণা করলেন তখন রাতারাতি লাখ লাখ লোক টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করা শুরু করল। কানাডার কিছু প্রভিন্সেও একই চিত্র দেখা গেছে। অন্টারিওর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালুর পর টিকা গ্রহণের আবেদন দিগুন হয়েছে। কুইবেকেও একই চিত্র দেখা গেছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে টিকা নেয়ার হার ২০০ গুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, এই নাটকীয় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নীতির কারণে। সূত্র : সিবিসি