এগারো দিনব্যাপী টরন্টো আন্তর্জাতিক লেখক উৎসবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম সেশন ‘রাইটিং অ্যাজ এ প্যাশন’এ অংশ নেন ড. দিলীপ চক্রবর্তী, রোকসানা লেইস এবং সুধীর সাহা

অতনু দাশ গুপ্ত : ব্রিগ্যানটিন প্যাটিও-ব্রিগ্যানটিন বলতে দুই মাস্তুলে ভর করে চলা এক পালতোলা জাহাজকে বোঝায় যার মূল মাস্তুলে দুটি পাল যুক্ত থাকে। প্যাটিও মানে বাইরের কোন প্রাঙ্গণ।

গত ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ এমনই এক পাল তোলা অদৃশ্য জাহাজে জনাকয়েক খেলোয়ারকে নিয়ে টরন্টো আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব বা টিফাতে বাংলা ভাষাকে তৃতীয়বারের মত বিশ্বমঞ্চে হাজির করেছিলেন দলের অধিনায়ক সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সমালোচক, উপস্থাপক সুব্রত কুমার দাস। ধীরে ধীরে সে জাহাজে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে, সবার উচ্ছ্বাস গতি পেয়েছে। জাহাজের খেলোয়ার বলতে আমন্ত্রিত দশজন সম্মানিত অতিথি লেখককে বুঝিয়েছি।

কানাডার আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব বা টিফাকে দেশের গ্রন্থকারদের সর্ববৃহৎ উৎসব বলা হয়। হারবারফ্রন্টের যে জায়গায় এবার এ মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছিল তার নাম ব্রিগ্যানটিন প্যাটিও। পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্ত থেকেই প্রণেতারা এতে অংশ নিতে টরন্টো নগরীতে হাজির হন। ১৯৭৪ সালে যাত্রা শুরু করে ম্যাপল পাতার দেশের কেন্দ্রস্থল নামে পরিচিত নগরী টরন্টোতে প্রতি বছর এর আয়োজন করা হয়। শতেরও বেশি দেশ থেকে আগত লেখকগণ যাদের মধ্যে বাইশজন সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী এবং আরও অসংখ্য বিখ্যাত পুরস্কারে ভ‚ষিতরা এখন পর্যন্ত পদভারে সমৃদ্ধ করেছেন টিফা প্রাঙ্গণকে।

১৯৯১ সালে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে রূপ নেওয়া এ আয়োজন এমন একটি মঞ্চে সকলকে একত্রিত করে যেখানে তারা নিজেদের অন্তঃস্থিত যাবতীয় ধারণা তুলে ধরার পাশাপাশি সুখ-দুঃখের নানান প্রসঙ্গ সকলের সাথে সহভাগ করেন। এ বছরে টিফা নানান রকমের অনুষ্ঠান যেমন টরন্টো লিট আপ, ক্রাইম ও মিষ্ট্রি উৎসব, টিফা কিডস্, টিফা বুক ক্লাব, আন্তর্জাতিক দর্শনার্থী উৎসব, দি বুক সামিট, উল্লেখিত এসব অনুষ্ঠান ছাড়াও নানা সম্মেলন, বই প্রকাশনা উৎসব, লেখা ও পোস্টার কর্মশালা, পুরস্কার বিতরণী আয়োজন, লেখক-পাঠক মতবিনিময়, পাঠ কার্যক্রম এবং সাক্ষাৎকার পর্ব করেছে। ২১ শে সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে এ বর্ণিল উৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে পহেলা অক্টোবর।

২৪ তারিখ রবিবারে বাঙালি লেখকদের অংশগ্রহণে প্রথম অধিবেশনের সময়কাল ছিল সকাল ১১.৩০। আলোচনার প্রসঙ্গ- রাইটিং অ্যাজ এ প্যাশন (পলখালেখির যত আবেগ)। প্রথম অধিবেশনের সম্মানিত আলোচকবৃন্দ হলেন লেখক, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. দিলীপ চক্রবর্তী, আইনজীবী মেজর সুধীর সাহা এবং কবি ও লেখকা রোকসানা লেইস।

দিলীপ চক্রবর্তী একজন প্রাক্তন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক এবং টরন্টোর বাঙালি স¤প্রদায়ের মধ্যে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশে তাঁর জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তার পরিবার ভারতে চলে যায়। ড. চক্রবর্তী স্কটিশ চার্চ কলেজ, সেন্ট পলস কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন। তিনি কলকাতা এবং রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডবল এমএ অর্জন করেন। এরপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। অবসরের পরে তিনি কানাডার অভিবাসী হন।

তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন। সর্বশেষ বইটি হল, Jin – Memoir of an Octogenarian Canadian Bengali। বইটির ভ‚মিকা লিখেছেন এবারের টিফার সম্মানিত মডারেটর সুব্রত কুমার দাস।
তার অন্যান্য বইগুলি হল সপ্রতিভ, স্বগতোক্তি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী সুধীর সাহার জীবনের মূলমন্ত্র হল কর্মচঞ্চলতা এবং গতিময়তা। একটি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা, শৈশব থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী এবং ফলাফলে উজ্জ্বলতার সাক্ষর দেখিয়েছিলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সুধীর ঢাকা বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। লম্বা কালো কোট পরে কাজ করা এবং সুপ্রিম কোর্টের চারপাশে কর্মব্যস্ত জীবন পার করা সবসময়ই তার স্বপ্নের কাজ ছিল। অনেক চড়াই উৎরাই এর পর অবশেষে তিনি সেনাজীবনকে পেশা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বেশ কয়েকটি সেনানিবাস এলাকায় এবং বি.ডি.আর-এ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং দুর্নীতি দমন ব্যুরোর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সামরিক পেশা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি আবার আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান। মেজর সুধীর সাহা লেখালেখিতেও একনিষ্ঠ জীবন কাটিয়েছেন। এ পর্যন্ত তেইশটি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।
১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি থেকে তাঁর প্রথম বইয়ের উদ্বোধন হয় – মাদকদ্রব্য, সমাজ ও আইন।

তার তিনটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি বই হল – World history of civilization, Investment migration, How far uninhabitable world.
তার শেষ দুটি প্রকাশনা ছিল – ভুলতে পারি না সে জেনোসাইড এবং আমরা-ওরা-’র বিভাজন।

রোকসানা লেইস একজন লেখক, কবি ও শিল্পী। যদিও তিনি প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখেন, তার অনেক গল্প ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। তার কিছু অবদান হল চন্দ্রীমায় নীল জল, অজানার স্রোত, আলোর যাত্রা, অন্তরীপ, স্বপ্নের শহর এবং আকাশের চিঠি। তার বেশিরভাগ লেখাই জীবনের অপরিসীম বেদনা, প্রেম, ট্র্যাজেডি এবং অবিরাম যন্ত্রণাকে চিত্রিত করে। ভ্রমণও করাও তার প্রিয় এবং তিনি সারা বিশ্বে ঘুরতে ভালোবাসেন এবং পুরো বিশ্বকে একটি গেøাবাল ভিলেজ হিসেবে বিবেচনা করেন। একজন শৈল্পিক ব্যক্তি হিসাবে, তার আঁকা এবং লেখা উভয়ই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সময়ের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে অত্যন্ত সাবলীলভাবে। এছাড়াও ইতিহাস, রাজনীতি, লিঙ্গ বৈষম্য এবং সামাজিক সমস্যাগুলির মতো দিকগুলি নিয়েও লিখে থাকেন রোকসানা।

বাঙালিদের জন্য প্রথম পর্বে উদ্বোধনী প্রশ্নে দিলীপ চক্রবর্তীর প্রতি সুব্রত কুমার দাসের জিজ্ঞাস্য ছিল, অনেকদিন থেকে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত থাকলেও কেন ২০১৬ সালে লেখা প্রকাশ করার প্রতি আগ্রহ জন্মালো তাঁর? উত্তরে সদা কৌতুকপ্রিয় দিলীপ চক্রবর্তী বিশিষ্টজন লেখক সুজিত কুসুম পালের কথা উল্লেখ করে জানান ২০১৬ সালে সুব্রতর সাথে তাঁকে পরিচয়ই এই বয়োবৃদ্ধ বয়সে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী করেছে। আরও জানান, রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেকে ভুলবশত রং টার্ন নেন। কিন্তু নিজের জীবনে সুব্রতর সাথে সাক্ষাৎ তাঁকে ঠিক পথের দিশা দেখিয়ে সাহিত্যানুরাগী করেছে। সবাই গাড়ি ঘুরিয়ে ভুল রাস্তায় চলে যান আর তিনি সঠিক পথে এসেছেন। বই প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারেও সুব্রতর প্রত্যক্ষ ভ‚মিকার কথা জানান তিনি।

বাকি আলোচকগণকেও একই প্রশ্ন করা হলে লেখক, উকিল, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সুধীর সাহা জানান, সবার ভেতরেই একজন লেখকের সত্তা বাস করে। উপযুক্ত সময়েই সেই অন্তঃস্থিত লেখকের আত্মপ্রকাশ ঘটে। কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে নিজের ঢাকা কলেজে অধ্যায়নের সময়ে ফেরত গিয়ে বলেন, ওই সময়ে তিনি আমাদের দেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর একটি কবিতা লিখেছিলেন। ঢাকা কলেজের এক বন্ধুকে তা দেখালে তিনি পুরো কবিতার আদলই পরিবর্তন করে দেন। এরপর তিনি আর ওই পথ মাড়াননি। ১৯৯১ সালে মাদকদ্রব্যের উপর তাঁর লেখা বই ‘মাদকদ্রব্য, সমাজ ও আইন’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হলে পরবর্তীকালে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠ্য বই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এ গুণীজন পাঁচটিরও অধিক বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকায় নিওমিত লিখে থাকেন।

তৃতীয় বক্তা লেখিকা রোকসানা লেইসও নিজ বাল্যবেলায় ফেরত গিয়ে বলেন, তখন তিনি রেডিও শুনতে খুব ভালোবাসতেন। গুনগুন করে বেজে যাওয়া গানের লাইনগুলো তাকে আর্কষণ করত। ধীরে ধীরে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকার জাতীয় কবিতা উৎসবে নিজের প্রথম কবিতা পাঠের সময় বিশাল জনতার বহর দেখে ছোট্ট রোকসানা কম্পমান হয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে তাঁর প্রথম বই “স্বপ্ননগরীর খোঁজে” প্রকাশিত হয়। এখন পর্যন্ত মোট প্রকাশিত পুস্তক সংখ্যা সাত। তিনি লেখনীর ধরন পরিবর্তনের ব্যাপারে নিজস্ব চিন্তাভাবনাও তুলে ধরেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটালেও তার প্রধান আর্কষণের জায়গাটা সবসময়ের মত আজও লেখালেখি।

পরবর্তী প্রশ্নে উপস্থাপক দিলীপ চক্রবর্তীকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর বর্তমান বইয়ের পরবর্তী কোন খন্ড আসছে কি না? এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা উত্তম যে দিলীপ চক্রবর্তীর চতুর্থ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে বেশ আনন্দমুখর পরিবেশে সকলেই উপস্থিত ছিলেন।

কৌতুক রসে ভরপুর দিলীপ অন্য আরও একটি তথ্য জানান। এই তথ্যের খোঁজ ছিল আমার গত জুলাই মাস থেকেই। যখন আমি নতুন লেখকদের গ্রন্থ উৎসবে অংশ নিয়ে তাঁর সম্পর্কে পরিচিত হই। জানালেন এই অদ্ভুতুড়ে নামের (জিন) উৎস কি – তাঁর এই নামের পেছনে নিজের কন্যা পারমিতা চক্রবর্তীর কথা উল্লেখ করেন। আলীগড়ে থাকাকালীন সময়ে ওখানকার স্থানীয় লোকজন তাঁদের বাবাদের ‘বাবুজি’ বলে সম্বোধন করেন। বাবুজি সাথে ‘ন’ যুক্ত হয়ে জিন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। কন্যা তাঁকে ওভাবেই সম্বোধন করতেন। পরের প্রজন্মও হয়তো তাঁকে জিন বলে সম্বোধন না করে জিনস বলে করবে। কারণ এই শব্দের সাথে জিন্স শার্ট বা প্যান্টের যথেষ্ট মিল তিনি খুঁজে পান!

লেখক সুধীর সাহাকে পরের বই নিয়ে প্রশ্নে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, এটি একটি নন-ফিকশন এবং ফিকশন ধর্মী বই হতে যাচ্ছে। এতে মূলত তিনি সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের কথা তুলে ধরবেন। তিনি জানান, কানাডা এমন একটি দেশ যা সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোতে এ প্রবণতা দেখা যায় না। তিনি বাংলাদেশের একজন অধিবাসী হয়েও কানাডায় স্থানান্তরিত হওয়ার কারণ থাকবে সেই বইতে? নিজের মাতৃভ‚মিকে সবাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালবাসলেও কেন একসময় ভিটে বাড়ি ছেড়ে হাজার হাজার মাইল আটলান্টিক অতিক্রম করে কানাডায় আসার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে সেটা তুলে ধরবেন।

রোকসানা লেইসের রচনায় ভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের কথা রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের নানান দিক তিনি তার রচনায় পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন। কোন একটি বিশেষ বইয়ের কথা বলতে বলা হলে তিনি ‘আকাশের চিঠি’ র কথা উল্লেখ করেন। এখানে একজন প্রেরক চিঠি লিখেন কিন্তু তিনি কোথায় চিঠি পাঠাবেন তার ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে দেশে গিয়ে হারিয়ে যান চিরতরে।
এরপর উপস্থাপক সুব্রত কুমার একটু ভিন্ন ধারার প্রশ্নের অবতারণা ঘটান। জিজ্ঞাসা ছিল, মাতৃভ‚মি থেকে এত দূর দেশে অবস্থান করেও সবার বাংলা ভাষায় লিখতে কেমন লাগে? বিজ্ঞজন দিলীপ চক্রবর্তীর জবাবে কিছুটা সুরারোপিত করে বলেন, বাংলার নদ, কানাডার হ্রদ, বাংলার ননী, কানাডার প্রবাহিনী। অ্যাডভোকেট সাহা দৃপ্ত কন্ঠে জানান, মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা অকৃত্রিম। নিজ মাতৃভাষাতে হৃদয়ে টানে লেখেন। বাংলাভাষায় লিখতে পেরে, সাহিত্য চর্চা করতে পেরে তিনি মহাতৃপ্ত। রোকসানাও অনেকটা একই সুরে স্বদেশের প্রতি নাড়ির টান অনুভব করার ব্যাপারে আলোকপাত করেন। পরম সাচ্ছন্দ্যে লিখে তিনিও বাংলা ভাষার প্রতি নিজের মধুর মায়ার কথা জানান।

অনুষ্ঠানের শেষ প্রশ্নে ছিল ক্যানলিট প্রসঙ্গে। বাবু দিলীপ চক্রবর্তীর মতে, যদি কানাডার অভ্যন্তরে বাংলা ভাষার চর্চা করা হয়, তাহলে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এবং সার্বিকভাবে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে সমৃদ্ধ করবে। মেজর সুধীর সাহা এক্ষেত্রে কানাডার বহুসাংস্কৃতিক সমাজের কথা তুলে ধরেন। এখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি সকল ভাষার সমানভাবে চর্চা এবং বিকাশ লাভের সুযোগ রয়েছে।

সুব্রত কুমার এক্ষেত্রে ভিয়েতনামী বংশোদ্ভূত কানাডীয় লেখক কিম টুই-এর কথা উল্লেখ করেন। যিনি ২০০৯ সালে ফরাসি ভাষায় ‘রু’ নামে প্রথম উপন্যাস লেখেন। বিষয়বস্তু ছিল ভিয়েতনাম থেকে কুইবেক পর্যন্ত দশ বছরের এক শিশুর যাত্রা। উপন্যাসটি গর্ভনর জেনারেল পুরষ্কারে সম্মানিত হয়।
রোকসানা এদেশের ভাষা চর্চার পরিবেশ এবং কথ্য ও লিখিত ভাষার তফাতের কথা বলেন। সকল ভাষার মত বাংলা ভাষারও লেখা বা কথা বলা ভিন্ন ধরনের। আমরা প্রাত্যহিক জীবনে যেভাবে কথা বলি, লিখিত রূপ তার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আগামী প্রজন্মের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরার জন্যও তিনি আরও বেশি বেশি চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। সঞ্চালক পরবর্তীতে দর্শক আসনের কাছে প্রশ্নোত্তর পর্বে চলে যান। উত্তর শুনে আমরা প্রথম আসরের ইতি টানি।