Home কানাডা খবর ট্রাক চালকদের বিক্ষোভে অশান্ত অটোয়া

ট্রাক চালকদের বিক্ষোভে অশান্ত অটোয়া

অনলাইন ডেস্ক : এক সপ্তাহ ধরে কানাডার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ট্রাক বহর গত ২৮ তারিখ শুক্রবার থেকে রাজধানী অটোয়ায় বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ এর টিকা নেয়ার প্রতিবাদে জমায়েত হয়েছে। ‘ফ্রিডম কনভয়’ নামের এই ট্রাকের বহরের প্রতিবাদ এখন সারা দেশের এক অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবাদের আয়োজকরা যদিও এই প্রতিবাদ সমাবেশকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু পুলিশের ভাষ্য মতে, বিক্ষোভকারীরা যে কোন ধরনের অশান্ত অবস্থা তৈরির জন্য প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছে।

জানুয়ারি মাসের শুরুতে লিবারেল সরকার যখন জানায়, কানাডা-আমেরিকার সীমানা পার হতে হলে সকল ট্রাক ড্রাইভারদের অবশ্যই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন নিতে হবে, তখন থেকেই এই বিক্ষোভের আগুন ধীরে ধীরে সারা কানাডার ট্রাক ড্রাইভারদের মধ্য ছড়িয়ে পড়ে। অটোয়ায় জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর নামে অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। প্রতিবাদ জানাতে ওয়ার মেমোরিয়ালের ওপর নাচ করেছে বিক্ষোভকারীরা। এমনকি তাদের ব্যানার পোস্টারে তারা জার্মান নাৎসি বাহিনীর ‘স্বস্তিকা’ চিহ্নও ব্যবহার করে। তাদের এই প্রতিবাদে তারা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে অজন্ম লড়াই চালিয়ে যাওয়া টেরি ফক্সের মূর্তিকেও অসম্মানীত করে।

ট্রাক ড্রাইভাররা তাদের দাবিতে অটোয়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তায় কনভয় তৈরি করে। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট ভবন ঘেরাও করে ক্রমাগত হর্ন দিতে থাকে তারা। এই বিক্ষোভের জেরে রাস্তায় যানজট এবং শব্দদূষণে একদম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন অটোয়াবাসী। রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া করোনা ভ্যাকসিনের এই নীতির পক্ষে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে আন্দোলনকারীরা এই আন্দোলনের নাম দিয়েছেন ‘ফ্রিডম কনভয়’।

ট্রাকচালকরা শুরু করলেও শিশু, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীরাও এই আন্দোলনে অংশ নেন। কেউ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন, কেউ আবার ট্রæডোকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করেন। বিক্ষোভকারীদের ওয়ার মেমোরিয়ালের উপর নাচও করতে দেখা যায়। চরম ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করেই রাস্তায় নামেন বহু মানুষ। ক্রমেই বাড়তে থাকে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা। ধীরে ধীরে জন জোয়ার সংসদ ভবনের কাছে পৌঁছে যায়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এ সময় কানাডার শীর্ষ সেনা জেনারেল ওয়েইন আয়ার এবং কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অনিতা আনন্দের তীব্র নিন্দা করেন ।

সারা দেশ জুড়ে এই বিক্ষোভে ইতোমধ্যে বিক্ষোভকারী ‘গোফান্ডমী’ প্রচারণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৯৯,০০০ হাজার দাতার কাছ থেকে ৭ মিলিয়ন ডলারের এক তহবিল সংগ্রহ করেছে। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবী পূরণ না হলে এ সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত অটোয়ার পার্লামেন্ট হিল এ অবস্থান করবে বলে জানিয়েছে। অটোয়া থেকে ১১৫ কিলোমিটার দূর থেকে আসা ট্রাক ড্রাইভার হ্যারল্ড জনকার জানান, ‘আমরা কোন বিধি নিষেধ চাপিয়ে দেওয়ার বিপক্ষে আমাদের অবস্থান নিয়েছি। টিকা নিব কি নিব না, এ সিদ্ধান্ত আমার হওয়া উচিৎ। রাষ্ট্র কখনও এমন সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আমাদের ‘আশা’র জন্য লড়াই করছি, যা রাষ্ট্র আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে।’

উল্লেখ্য, কানাডার অধিকাংশ মানুষ এই করোনার ভ্যাকসিনের পক্ষে এবং ইতোমধ্যে কানাডার ৮০ শতাংশের বেশী মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রæডো বিক্ষোভকারীদের এই আন্দোলনকে অবিবেচনাপ্রসূত বলে আখ্যায়িত করেন এবং উল্লেখ করেন, অতি স্বল্প সংখ্যক উন্মক্ত মানুষ জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এমন এক কাজে অংশ নিয়েছে। অন্যদিকে, কিছু কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদের কাছ থেকে বিক্ষোভকারীরা পূর্ণ সমর্থন পেয়ে আসছে। কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদদের মতে, এই বিক্ষোভ হচ্ছে গত দু’বছরে লিবারেল সরকারের ভুল নীতি এবং কানাডার মানুষকে বিভাজনের নীতির ফসল।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এক ছেলে করোনা পজিটিভ হওয়াতে তিনি বর্তমানে স্বপরিবারে সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন, নিজ ঘরে থেকেই তিনি সরকারী কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। সেলফ আইসোলেশনে থাকা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে অটোয়ার সরকারী বাসভবন থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। (খবর: সিবিসি)

Exit mobile version