অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ই-কমার্স জায়ান্ট এবং রিটেইলাররা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সংকুচিত করেছে। এর ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ বা স্থগিত করার ঘটনা ঘটেছে, যা ভারতের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গত কয়েক মাসে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পোশাক ও টেক্সটাইল পণ্যে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে এবং বাকি ২৫ শতাংশ ২৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি হলো, ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে, যা তাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
এর প্রভাব হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামাজন, ওয়ালমার্ট, টার্গেট, গ্যাপসহ অন্যান্য বড় রিটেইলার ভারত থেকে পণ্য অর্ডার বন্ধ বা স্থগিত করেছে। ভারতীয় রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, মার্কিন ক্রেতারা ইমেইল ও চিঠির মাধ্যমে আপাতত পোশাক ও টেক্সটাইল চালান বন্ধ রাখতে বলেছে। তারা বাড়তি শুল্কের খরচ ভাগাভাগি করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এই বোঝা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এনডিটিভির একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, দ্বিগুণ শুল্কের কারণে ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি খরচ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, আর আমেরিকাগামী অর্ডার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এতে ভারতের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে পোশাক ও টেক্সটাইল রপ্তানির প্রায় ২৮ শতাংশ চলে যায়। ওয়েলস্পান লিভিং, গোকালদাস এক্সপোর্টস, ইন্ডো কাউন্ট ও ট্রাইডেন্টের মতো বড় বড় রপ্তানিকারকের পণ্য বিক্রির বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। এই পরিস্থিতিতে ভারতের শুল্ক বৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর কাছে অর্ডার হারানোর আশঙ্কা বাড়িয়েছে, যেখানে বর্তমানে ২০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।
ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই শুল্ক আরোপকে “অন্যায্য, অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক” হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের দাবি, ভারতের জ্বালানি আমদানি পরিস্থিতি বাজারের ওপর নির্ভরশীল এবং দেশের ১.৪ বিলিয়ন মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ সংকটে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে ভারত, যা তখন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেছিল।
এখন ট্রাম্পের এই দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা সংকটে পড়েছেন, যেটি দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর মাধ্যমে শুধু রপ্তানিকারকরা নয়, পুরো দেশেই অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি
