ডব্লিউই চ্যারিটি একটি পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী - ফাইল ফটো

শাহনুর চৌধুরী: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ডব্লিউই চ্যারিটি কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মক্তি পেয়েছেন। তবে তার সাবেক অর্থমন্ত্রী বিল মরনোকে মুক্তি দেয়নি তদন্তকারীরা।
নীতিশাস্ত পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত গ্রীষ্মে ডব্লিউই চ্যারিটি ফান্ড নিয়ে কেলেঙ্কারির যে অভিযোগ উঠেছে তাতে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মহামারির শুরুতে কানাডায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রমের তদারকি করতে সরকার গত বছর এই দাতব্য সংস্থাটিকে নিয়োগ দিয়েছিল। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে ট্রুডোর পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠলে তিনি নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষকদের তদন্তের মুখোমুখি হন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া গেলেও সাবেক অর্থমন্ত্রী বিল মরনো এক্ষেত্রে ফেডারেল নীতি লংঘন করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষক কমিশনার মারিও ডিওন বলেছেন, করোনা মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের বৃত্তির বিষয়টি তদারকির জন্য নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তাতে সাবেক অর্থমন্ত্রী তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি বলে মনে হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কোন দুরভিসন্ধির আলামত পাওয়া যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতর্কের কারণে বাতিল হওয়া ওই কর্মসূচীর তদারকিতে জড়িত কেইলবারগার ব্রাদার্সের সাথে প্রধানমন্ত্রীর কোন পারিবারিক বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিল মরনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নীতি অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ওই প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেছে বিরোধী কনজারবেটিভ পার্টি। এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের কাছে টানার একটি কৌশল। নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষকেরা এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীকে দায়মুক্তি দিলেন।

গত গ্রীষ্মে লিবারেল সরকার শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য ডব্লিউই চ্যারিটি তহবিলের সাথে মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করে। পরে জানা যায় যে প্রতিষ্ঠানটির সাথে ট্রুডো ও মরনোর পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায় ট্রুডোর মা মার্গারেট ও ভাই আলেক জেন্ডারকে ডব্লিউইর পক্ষ থেকে ৩ লাখ ডলার ঘুষ প্রদান করা হয়েছে।

তবে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব অভিযোগ প্রমাণের মতো নিরেট কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোও অভিযোগের শুরু থেকে সবকিছু অস্বীকার করে আসছিলেন। বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আজ প্রমাণ হল আমি কোন অন্যায়ের সাথে জড়িত নই। প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছিলাম যে, এসব অভিযোগ সত্য নয়। আজ নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদন প্রমাণ করল যে, আমাদের বক্তব্যই সঠিক। তিনি এই অভিযোগের তদন্তে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মারিও ডিওন ও তার দল বিষয়টি নিয়ে অনেক কাজ করেছে। তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনার সঠিক চিত্রই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান মহামারির সময় তার সরকারের একমাত্র চিন্তা হলো যত দ্রুত সম্ভব দেশের মানুষকে বিশেষ করে তরুণদের সঠিক সহায়তা করা।
তবে সমালোচকরা এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ডবিøউই চ্যারিটি কেলেঙ্কারি নিয়ে নীতিশাস্ত্র পর্যবেক্ষকদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কানাডার ‘আইনের জবাবদিহিতা’ লঙ্ঘন করা হয়েছে। বিরোধী নেতা টোলে বলেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এই বিষয়ে আরো স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করবেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একসময় নিজেই বলেছিলেন তিনি কিছু অন্যায় করেছেন, তদন্তকারীরাও ডবিøউইর অর্থ নয় ছয় করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে। তা সত্বেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীকে সবকিছু থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। এটি কীভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমাদের আইনের জবাবদিহিতা ভেঙে গেছে। আমরা ট্রুডো প্রশাসনের আর কোন দুর্নীতি ও চক্রান্ত দেখতে চাই না। এখন সময় এসেছে সব অস্বচ্ছতা আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করার। এজন্য প্রয়োজনে নতুন দুর্নীতি বিরোধী আইন করতে হবে। যাতে সরকার তার দোসরদের আর কোন সহায়তা না করতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনে সাবেক অর্থমন্ত্রী বিল মরনো সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ডবিøউই তহবিলকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছেন, যা ছিল অনৈতিক। এক্ষেত্রে তিনি ফেডারেল নিয়ম-নীতি লংঘন করেছেন। তদন্তে দেখা গেছে যে মরনোর সাথে ডব্লিউইর উর্ধতন কর্মকর্তা কেইলবারগারের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। তারা পরস্পর চিঠি ই-মেইল আদান প্রদান করেছেন। যে সবের মাধ্যমে তারা ব্যক্তিগত উপহার বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এসবের মাধ্যমে তাদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিল মরনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের আগস্টে তিনি অর্থমন্ত্রী ও এমপি পদ থেকে ইস্তফা দেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডব্লিউইর সহ প্রতিষ্ঠাতা কেইলেবারগার এক ই-মেইলে মরনো ও তার স্ত্রীকে তাদের সন্তান আগমনের খবরে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া তিনি তাদের জন্য উপহার সামগ্রীও পাঠান। এসবের মাধ্যমে মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ধরনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকা একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কাজ তদারকির দায়িত্ব পাইয়ে দিয়ে তিনি আইন লংঘন করেছেন। মরনো এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও তিনি তার পক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দুই পরিবারের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে তদন্তকারীরা মরনোর বাসায় অনুষ্ঠিত একটি পার্টির তথ্যও তুলে ধরে যাতে কেইলবারগার উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এনডিপি নেতা জাগমিত সিং বলেন, প্রধান মন্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য এখানে মরনোকে বলির পাঠা বানানো হয়েছে। তারপরও কানাডিয়ানদের উচিত এটা অনুধাবন করা যে, সরকারের উচ্চ পদের কর্মকর্তারা কত রকমের দুর্নীতিতে জড়িত। সূত্র : সিবিসি নিউজ