হাসান আমিন : কানাডিয়ানরা যখন মেক্সিকো, ইউরোপ বা আমেরিকা ভ্রমণে যায় তখন তাদের জন্য এটা জানা আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায় যে তারা লুনি খরচ করে কি কি ক্রয় করতে সামর্থ্য হবে। আর এ কারণেই সাধারণত কানাডিয়ানদের বৈদেশিক মুদ্রা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখা জরুরি একটি বিষয়। সে হিসেবে বর্তমানে ব্রিটেনে ভ্রমণকারী কানাডিয়ানরা দেশে ফিরে যখন তাদের ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ পরীক্ষা করবে তখন সম্ভবত তারা খুব খুশি হবে। এই বছরের শুরুতে কানাডিয়ানদের এক পাউন্ড স্টার্লিং এর জন্য ১.৭০ ডলার দিতে হয়েছিল; এই সপ্তাহে ব্রিটিশ মুদ্রা ১.৫০ ডলারেরও নিচে নেমে গেছে।
এর অর্থ হল সেই দেশের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির হিসাব করার পরে লন্ডনের কিছু প্রতিষ্ঠানে এক পিন্ট বিয়ারের জন্য আপনাকে মাত্র ১২ বাকস খরচ হবে। উল্লেখযোগ্য হল, লন্ডন ওভারহেড ছাড়া একটি ল্যাঙ্কাশায়ার পাবে এক পিন্ট বিয়ার তিনটিরও কম লুনিতে পাওয়া যায়।
তবে ভ্রমণে কম খরচ ব্যয়ের বিষয়টি আনন্দদায়ক হলেও কানাডিয়ান এবং তাদের অর্থনীতির জন্য চূড়ান্ত হিসাব দিন শেষে এসে ব্যয়বহুলই সাব্যস্ত হতে পারে। কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন যে, মুদ্রা বিনিময় হারে বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার ক্রমবর্ধমান ধারা আসলে ২০০৮ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে আঘাত হানার থেকে একেবারে ভিন্ন একটি নতুন আর্থিক সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যদি তাই হয়, তাহলে কানাডিয়ানরা এর প্রভাব এড়াতে পারবে না। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্টের মুদ্রার মান বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে; ইতিহাস বলে, তাহলে ক্রমবর্ধমান গ্রিনব্যাক (ডলারের দামের ঊর্ধগতি) মার্কিন অর্থনীতিকে এমন সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে যা আর্থিক বাজারগুলো এখনও বিবেচনায় আনেনি।
পাউন্ডের দরপতন : মুদ্রাস্ফীতি, হার বৃদ্ধি এবং অস্থিরতা দ্বারা পরিবেষ্টিত বিশ্বে চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ পাউন্ডের দরপতন মুদ্রার অস্থিতিশীলতার নিদর্শন হয়ে উপস্থিত হয়েছে; যা ১৯৯০ সালের “স্টার্লিং সংকট” সহ অতীতে একটি ভূমিকা পালন করেছে। গত কয়েক দিনে দফায় দফায় কমেছে পাউন্ডের দাম, প্রতিবারই সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। এটি ৩৭ বছরের মধ্যে পাউন্ডের সর্বোচ্চ দরপতন।
কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না যুক্তরাজ্যের। লিজ ট্রাসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর মিনি বাজেট ও বড় ধরনের কর ছাড় দেওয়া হলো গত সপ্তাহে। একই সঙ্গে সেদিন ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের ভর্তুকি প্যাকেজ দিয়েছে সে দেশের সরকার। এই অর্থায়ন করতে নতুন সরকারকে বিপুল পরিমাণ ঋণ করতে হবে। তাতে মানুষের সুবিধা হলেও পাউন্ডের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমেছে। ফলাফল—পাউন্ডের দরপতন।
গত সপ্তাহে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কাওয়াসি কাওয়ারতেং ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দেন। এরপরই ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। আইএমএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাজ্য সহ অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপের প্রেক্ষিতে, আমরা এই সন্ধিক্ষণে বড় এবং লক্ষ্যহীন আর্থিক প্যাকেজের সুপারিশ করি না; যেহেতু এটা গুরুত্বপূর্ণ যে রাজস্ব নীতি মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিকল্প হিসেবে কাজ করে না।
ব্রিটিশ মুদ্রার দরপতন অব্যাহত থাকায় ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড বাজারগুলোকে শান্ত করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে এবং এটি নিয়মতান্ত্রিক বাজার পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য একটি ‘জরুরি ভিত্তিতে’ সরকারী বন্ড কেনা শুরু করবে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
সমস্যার একটি অংশ হল, যখন প্রকৃত উদ্বেগের কারণে মুদ্রার মানের আকস্মিক পরিবর্তন হয়; তারা বৈদেশিক মুদ্রা জগতের হাঙ্গরকে আকর্ষণ করতে পানিতে রক্তের মতো কাজ করে : মুদ্রা ফটকাবাজ, বলেন জ্যাকলিন বেস্ট। যিনি অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এবং পলিটিক্স অব ফাইন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করেন। অবশ্যই আমরা এই মুহূর্তে মুদ্রা বাজারে ব্যাপকভাবে অস্থিরতা বাড়িয়েছি, যা উদ্বেগজনক, বেস্ট বলেছেন।
তিনি বলেন, সাধারণত জাতীয় মুদ্রার মধ্যে ভাসমান বিনিময় হারের ব্যবস্থা ভালভাবে কাজ করে এবং অর্থনীতির আপেক্ষিক শক্তি পরিবর্তিত হওয়ায় মুদ্রার মান ধীরে ধীরে পরিবর্তনের অনুমতি দেয়। “কিন্তু তাদের নেতিবাচক দিক হল তারা খুব অস্থির হয়ে উঠতে পারে এবং সেই অস্থিরতা স্ব-শক্তিশালী হতে পারে কারণ ফটকাবাজ এবং ব্যবসায়ীরা মুদ্রা কোথায় যাচ্ছে তার উপর বাজি প্রবর্তন করার চেষ্টা শুরু করে,” বেস্ট বলেছেন।
এখানে দুর্বল মুদ্রার দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমস্যাটির কেন্দ্রবিন্দু হল মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বগতি, বলেছেন এরিক হেলেইনার যিনি ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ও অর্থায়নে বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯৮০ সালের সাথে সমান্তরালতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেইবার মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতিকে পরাস্ত করতে সুদের হার তীব্রভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিল। হেলেইনার বলেন, যখন ইউএস রেট বাড়ছে এবং ইউএস ডলার বাড়ছে, তখন এটি এমন দেশগুলোর উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করে যাদের ডলারে ঋণ রয়েছে।