অনলাইন ডেস্ক : আফগানিস্তান বংশোদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক সাফিয়ার সাথে দুই বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পরিচয় হয় আফগান এয়ারফোর্সের এক শিক্ষানবিস পাইলটের। তাদের পরিচয় যখন ভালবাসায় পরিনত হয় তখন বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেছে করোনা মহামারির তান্ডব। এই তান্ডবের মধ্যেও তারা স্বপ্ন দেখেছিল ভালোবাসার ঘর বাঁধার। গত সেপ্টেম্বরে আফগানিস্থানে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর তাদের সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সাফিয়া কোনক্রমে কানাডায় ফিরতে পারলেও তার ভালোবাসার মানুষটি পারেনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সে তাজিকিস্তানে তালেবানদের হাতে অন্তরীণ অবস্থায় আছে। সেখানে তার জীবন বিপন্ন, যেকোনো সময় তালেবানরা তাকে মৃত্যুদন্ড দিতে পারে। প্রিয় মানুষটিকে তালেবানদের কবল থেকে উদ্ধারে অটোয়া সরকারের সহায়তা চেয়েছে সাফিয়া। সিবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে সাফিয়া তার স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তটা হতে পারতো আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের। নব দম্পতি হিসেবে নতুন জীবনে প্রবেশ করতাম আমরা। কিন্তু আফগানিস্তানের পতনে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।

সাফিয়া বলেন, বিয়ের পর কানাডায় বসবাসের স্বপ্ন ছিল আমাদের। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। কিন্তু আগস্টে কাবুলে আশরাফ গানির সরকারের পতনে আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। আমি প্রথম সুযোগেই কানাডায় ফিরতে পারলেও সে আটকে যায়। তবে আমাদের যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সারাক্ষণ একে অপরের খবর নিতাম। আমি উদ্বিগ্ন থাকলেও সে আমাকে আশ্বস্ত করতো। বলতো যে, মার্কিন বাহিনী আফগান পাইলটদের কাবুল থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এক পর্যায়ে তালেবানরা বিরোধী মতাবলম্বীদের শিরচ্ছেদ শুরু করলে কিছু পাইলট বিমান নিয়ে তাজিকিস্তানে পালিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তারা তালেবানদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। সাফিয়া বলেন, আফগান এয়ার বেস থেকে যাত্রার পর তার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। আমি জানিনা সে এখন কি অবস্থায় আছে। আমার পরিবার আমাকে সান্ত¡না দেয়। তারা বলে শিগগিরই কোনো ভালো খবর আসবে। কিন্তু আমার মনে নানা দুশ্চিন্তা ভর করে।

প্রিয় মানুষটির খোঁজ পেতে সাফিয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছে। কানাডায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়েছে এটি অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের বিষয়। সেখানে যোগাযোগ করলে জানানো হয়েছে, কাবুল থেকে পালিয়ে যাওয়া লোকদের দায়িত্ব তাদের নয়। যারা কাবুলে আটকে আছে শুধু তাদের বিষয়ে তারা সহায়তা করতে পারবে। কানাডা সরকারের প্রতিক্রিয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে সাফিয়া বলেন, আমি তাদের কাছে আরও ইতিবাচক আচরণ আশা করেছিলাম। তারপরও তিনি তাঁর প্রিয় মানুষটিকে তালেবানদের কবল থেকে উদ্ধারে সরকারের সর্বাত্বক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন। সূত্র : সিবিসি