Home কানাডা খবর তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে আরও বেশি কিছু করতে হবে : ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের...

তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে আরও বেশি কিছু করতে হবে : ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদন 

অনলাইন ডেস্ক : নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে কানাডায় প্রচন্ড তাপ প্রবাহের দিনের সংখ্যা ৫ গুণ বেশি হবে। এই তাপদাহ থেকে বাঁচতে হলে বর্তমানে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট হবে না, আরও বেশি কিছু করতে হবে। অন্টারিওর ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনট্যাক্ট সেন্টার অন ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশনের গবেষকরা ওই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন। এটি তৈরি করতে তারা সারাদেশে ৬০ জন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখকদের একজন বেøয়ার ফেল্টমেট উল্লেখ করেছেন, অন্টারিওর ওয়াটারলু অঞ্চলে বর্তমানে গ্রীষ্মকালে ‘চরম তাপমাত্রা’ দেখা যায় ১০ থেকে ১২ দিন। ওই কয়দিন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকে এবং তা সর্বোচ্চ ৩৪ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে প্রতি গ্রীষ্মে ৩০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা ৫৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে এবং এটি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়ায় পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আবহাওয়ার ‘চরম অবস্থাকে’ বন্যা বা আগুনের সাথে তুলনা করে ফেল্টমেট বলেন, এই দুর্যোগে শত শত মানুষ মারা যেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত বছর ‘তাপ গম্বুজ’ চলাকালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে ৫০০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। সেখানে ২০২১ সালের জুনের শেষ দিক থেকে জুলাইয়ের প্রথম দিক পর্যন্ত তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চরম তাপমাত্রা হল, একটি এলাকার তাপমাত্রা ও আদ্রতা স্বাভাবিক অবস্থার চাইতে বেড়ে যাওয়া। পরিবেশ দূষণের জন্যই মূলত এমনটা হয়ে থাকে এবং এটি মারাত্মক হতে পারে। কেননা এটি নীরব ঘাতকের মতো যখন কেউ আক্রান্ত হয়ে যায় তখন আর কিছুই করার থাকে না।

প্রতিবেদনে কানাডার ৩ টি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো আগামী দিনগুলোতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অঞ্চল ৩টি হলো- (১) ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পশ্চিম উপক‚ল, উপত্যকাসহ পাহাড় পর্যন্ত, (২) দক্ষিণ(প্রেইরি অঞ্চল, বিশেষ করে মমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী এলাকা এবং (৩) এরি হ্রদের উত্তর তীরে সেন্ট লরেন্স উপত্যকা থেকে লেক অন্টারিও পর্যন্ত। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে যে, তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে কমবেশি সবাই অসুস্থতার ঝুঁকিতে থাকে প্রতিবেদনের আরেক জন প্রধান লেখক জোয়ানা ইকুয়েম বলেন, গরমে যারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে পারেন তারা হলেন, গৃহহীন, বয়স্ক ও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এমন লোকেরা। এছাড়া যারা একা থাকেন তাপদাহে তাদের মৃত্যু হয় সবচেয়ে বেশি। ইকুয়েম বলেন, মূলত শহরগুলো প্রচন্ড তাপ তথা গেøাবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য হটস্পট। তাই আপনি যদি কোন শহরে একাকি বসবাস করেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি শঙ্কার মধ্যে আছেন।

এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের প্রথমেই রয়েছে বৃক্ষ নিধন বন্ধ এবং বৃক্ষ রোপন বাড়িয়ে সবুজায়ন বৃদ্ধি করা। বলা হয়েছে কানাডার শহরগুলো সবুজের পরিবর্তে ধূসর হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা রোধ করতে হবে। এই সবুজায়ন বৃদ্ধি করা ছাড়াও বাড়তি যা করতে হবে সে সবের মধ্যে আছে বাড়ির ছাদ সাদা রং করা। এতে সূর্যের আালো আবার মহাকাশে ফিরে যাবে। এমনিভাবে ফুটপাতগুলোকেও শীতল করার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হবে সেগুলোতে তাপ ও বায়ুরোধি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। নির্মাণ কাজে এমন ইট, পাথর ও টাইলস ব্যবহার করতে হবে যেগুলো অধিকহারে তাপ শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে বিষয়টির উপর তা হলো- যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ ‘কার্বন নিঃসরণ’ এই যানবাহনের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। ফেডারেল সরকার আগামী এক দশকের মধ্যে গ্রিণহাউস গ্যাস নির্গমণ ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে তা যথেষ্ট নয়। এটি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমাতে হবে। সূত্র : সিবিসি ও রেডিও কানাডা

Exit mobile version