অনলাইন ডেস্ক : তুরস্কের সামরিক শক্তি ও অগ্রগতির বলিষ্ঠ এক নিদর্শন এটি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কিযিলেলমা ড্রোন। শিগগিরই দেশটির অস্ত্রভাণ্ডারে যুক্ত হতে যাচ্ছে তাক লাগিয়ে দেয়া এই চালকবিহীন আকাশযান।
চলতি সপ্তাহেই সফলতার সাথে কিযিলেলমা পিটি-ফোরের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের প্রতিরক্ষা ও অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘বেকার’। এটিকে বলা হচ্ছে জেট-ইঞ্জিন চালিত তুরস্কের প্রথম ক্যারিয়ার-ক্যাপাবেল ড্রোন। অর্থাৎ এটি বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র বহনে সক্ষম। যুদ্ধক্ষেত্রে লেজার গাইডেড মিউনিশন, স্বল্প, মধ্যম ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে হামলা চালানো যাবে এই ড্রোনের সাহায্যে। আকাশ থেকে আকাশে বা ভূমিতে হামলা চালাতে সক্ষম এটি।
বেকার জানিয়েছে, এই ড্রোনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪৭ ফুট। ডানাসহ প্রস্থ ৩২ দশমিক ৮ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ১১ ফুট। এর ওজন সাড়ে ৮ টন। বিশাল আকৃতির হলেও এই ড্রোনের তাক লাগিয়ে দেয়া বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শত্রুপক্ষের রাডার ফাঁকি দিতে বিশেষভাবে সক্ষম। উড্ডয়ন করতে পারে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ এক হাজার একশ কিলোমিটার গতিতে।
বেকার আরো জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল ব্যাসার্ধের ভেতর অভিযান পরিচালনা করা যাবে কিযিলেলমা দিয়ে। এটি সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। তবে হামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৫ হাজার ফুট। টানা ৩ ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় ধরে উড়তে পারে এ ড্রোন।
দ্রুততার সাথে প্রস্তুত হয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যেই উড্ডয়নে সক্ষম কিযিলেলমা। ছোট রানওয়ে বা বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের রানওয়েও এর উড্ডয়নের জন্য যথেষ্ঠ। সব মিলিয়ে শত্রুপক্ষের জন্য ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হতে যাচ্ছে এটি। ২০২৬ সালের মধ্যেই তুরস্কের বিমান বাহিনীতে এই ড্রোনের অভিষেক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক পর্যায়েই চালকবিহীন আকাশযান নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি এক বিশেষ সংযুক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধগুলো অনেকাংশেই ড্রোন নির্ভর হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় কিযিলেলমা তুরস্ককে কৌশলগতভাবে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। একই সাথে দেশটির সামরিক সক্ষমতা যে আরো অত্যাধুনিক হয়ে উঠছে এটি সেদিকেই নির্দেশ করে। শেষ দুই দশকের মধ্যেই ড্রোন আমদানিকারক থেকে রপ্তানিকারকে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। শুধু তাই নয়, বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কার্যকর ড্রোন বানাতে সক্ষম গুটিকয় দেশের মধ্যে একটি তুরস্ক।
এদিকে চলতি বছর পাকিস্তানের সাথে সামরিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে কৌশলগত সম্পর্ক আরো গভীর করছে তুরস্ক। ভারতের সাথে সাম্প্রতিক যুদ্ধে প্রকাশ্যেই পাকিস্তানকে সমর্থন জানায় দেশটি। শুধু তাই নয়, ভারতীয় বিভিন্ন মহলের দাবি, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদকে ড্রোন ও অস্ত্রও সরবরাহ করে আঙ্কারা। সার্বিক প্রেক্ষাপটে নিকট ভবিষ্যতে তারা পাকিস্তানকে অগ্রসর প্রযুক্তির কিযিলেলমা ড্রোন সরবরাহ করে কিনা, এ নিয়ে এরই মাঝে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে ভারতীয় অনেক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যমের। এ নিয়ে ফলাও করে প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ অনেকেই।