কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা নালন্দা সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সংগঠক সুব্রত কুমার দাসের হাতে। সে সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা বহুল পরিচিত লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক তাহির আসলাম গোরা

অনলাইন ডেস্ক : স¤প্রতি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ব্রাম্পটন শহরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ এশিয় সাহিত্য উৎসব। গত ২৬ ও ২৭ আগস্ট সেঞ্চুরি গার্ডেন্স রিক্রিয়েশন সেন্টারে আয়োজিত এই উৎসবে বাঙালি লেখকেরাও অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে ২৫ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সাহিত্য উৎসবের জাঁকজমকপূর্ণ উদবোধন হয় শহরের অভিজাত হোটেলে ম্যারিয়টে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষার লেখকদের উৎসাহিত করতে দেওয়া হয় নালন্দা সাহিত্য পুরস্কার।

‘কেনেডিয়ান ল্যান্ডস্কেপ ফর সাউথ এশিয়ান রাইটারস’ সেশনে অংশ নেন বলদেভ মুত্তা, অনুভা মেহেতা এবং সুব্রত কুমার দাস। মডারেটর ছিলেন অন্যতম আয়োজক হালিমা সাদিয়া

অন্যান্য ভাষার লেখকদের সাথে কানাডার শ্রেষ্ঠ বাংলাভাষী লেখক হিসেবে এই পুরস্কার লাভ করেন বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও সংগঠক সুব্রত কুমার দাস। উল্লেখ করা যেতে পারে সুব্রত কুমার দাস রচিত, অনুবাদিত এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ঊনত্রিশ। ২০০৩ সালে তিনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে প্রথম ওয়েবসাইট বাংলাদেশি নভেলস (http://en.bdnovels.org/) এর প্রকাশ ঘটান। গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সাহিত্যকে আশ্রয় করে নির্মিত এই দ্বিভাষী ওয়েবসাইট সাহিত্য অনুরাগীদের মনের খোরাক জুগিয়ে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে কানাডায় অভিবাসী বাংলাদেশের এই লেখকের বই ‘কানাডীয় সাহিত্য: বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ একটি বহুল প্রশংসিত গ্রন্থ। ঢাকা থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থের প্রকাশক মূর্ধন্য। সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তিনি আমেরিকার নিউ জার্সি শহর থেকে গায়ত্রী গ্যামার্স পুরস্কার লাভ করেন। ২০২১ সালে কানাডার শ্রেষ্ঠ অভিবাসীর সংক্ষিপ্ত তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে। ২০২০ ও ২০২২ সালে তিনি টরন্টো আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব (টিফা)-তে যোগ দেন। এ বছর মূর্ধন্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘উৎস থেকে পরবাস’।

উদ্বোধনী পর্বে আমন্ত্রিত দুই শত অতিথির মধ্যে ছিলেন কানাডায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের সাথে কানাডার বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।

বাঙালি সমাজ থেকে উপস্থিত ছিলেন এনআরবি টেলিভিশনের সিইও এবং সাপ্তাহিক বাংলামেইল পত্রিকার সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টু, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মহসিন ভুইয়াঁ, তাঁর স্ত্রী ডলি ভুইয়াঁ, ব্যারিস্টার সূর্য চক্রবর্তী, শিল্পী অমল দেব এবং আইটি স্পেশালিস্ট জয়দীপ ভৌমিক।

কানাডায় ভারতীয় হাই কমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা সুব্রতর হাতে পুরস্কার তুলে দেন। সে সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা বহুল পরিচিত লেখক ও টেলিভিশন উপস্থাপক তাহির আসলাম গোরা। পুরস্কার ঘোষণাকালে অন্যতম আয়োজক হালিমা সাদিয়া কানাডায় বাঙালিদের সাহিত্যাঙ্গনে সুব্রতর অবদানের কথা তুলে ধরেন।

‘বেঙ্গলিজ ইন ক্যানলিট’ সেশনে যে তিনজন বাঙালি বংশোদ্ভুত ইংরেজিভাষী লেখক অংশ নেন তারা হলেন শাম মুখার্জি, সিলমি আব্দুল্লাহ এবং সুমাইয়া মতিন। পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি অনুবাদক শ্রেয়সি বোস

পুরস্কার গ্রহণকালে সুব্রত দৃঢ়তার সাথে বলেন, কানাডীয় দক্ষিণ এশিয় সাহিত্য উৎসব যেমন কানাডায় থাকা দক্ষিণ এশিয়ার লেখকদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে সাহায্য করবে, তেমনি কানাডার মূল ধারার লেখকদের সাথে দক্ষিণ এশিয় লেখকদের সংযোগ তৈরিতেও ভ‚মিকা রাখবে। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয় সাহিত্য উৎসবে আরও অধিক সংখ্যক বাঙালি লেখক যোগ দেবেন এবং তাঁদের যোগদান হবে আরও বেশি সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ।

প্রথমবারের মতো কানাডায় বসবাসকারী দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন ভাষাভাষী লেখকদের নিয়ে আয়োজিত এই সাহিত্য উৎসবে ২৬ আগস্ট বাঙালি লেখকেরা বিভিন্ন সেশনে অংশ নেন।

সেদিন সকাল সাড়ে এগারোটায় ‘বেঙ্গলিজ ইন ক্যানলিট’ সেশনে যে তিনজন বাঙালি বংশোদ্ভুত ইংরেজিভাষী লেখক যুক্ত হন তারা হলেন শাম মুখার্জি, সিলমি আব্দুল্লাহ এবং সুমাইয়া মতিন। এই পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি অনুবাদক শ্রেয়সি বোস। জানিয়ে রাখা যেতে পারে যে, শাম মুখার্জির প্রধান গ্রন্থের নাম ‘ইন দ্য নেইম অব লাভ’, সিলমি আব্দুল্লাহর গ্রন্থের নাম ‘হোম অব দ্য ফ্লোটিং লিলি’ এবং সুমাইয়া মতিনের গ্রন্থের নাম ‘দ্য শয়তান ব্রাইড’।

‘কেনেডিয়ান বেঙ্গলি রাইটারস’ পর্বে কথা বলেন গবেষক সুজিত কুসুম পাল, কবি চয়ন দাস এবং কথাসাহিত্যিক জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন। এই পর্বটির পরিচালনায় ছিলেন নন্দিত লেখক ও উপস্থাপক তাসমিনা খান

দুপুর আড়াইটায় ‘কেনেডিয়ান বেঙ্গলি রাইটারস’ শিরোনামের পর্বে সেদিন যে বাঙালি লেখকেরা কথা বলেন তারা হলেন গবেষক সুজিত কুসুম পাল, কবি চয়ন দাস এবং কথাসাহিত্যিক জাকারিয়া মুহাম্মদ ময়ীন উদ্দিন।

এই পর্বটির পরিচালনায় ছিলেন নন্দিত লেখক ও উপস্থাপক তাসমিনা খান। সকাল সাড়ে ১০টায় ‘কেনেডিয়ান ল্যান্ডস্কেপ ফর সাউথ এশিয়ান রাইটারস’ সেশনে অবাঙালি লেখক বলদেভ মুত্তা এবং অনুভা মেহেতার সাথে যুক্ত হন সুব্রত কুমার দাস। মডারেটর ছিলেন অন্যতম আয়োজক হালিমা সাদিয়া।

এই পর্বে মনোজ্ঞ আলোচলায় উঠে আসে কানাডায় দক্ষিণ এশিয় লেখকদের চ্যালেঞ্জের প্রসঙ্গটি। সে চ্যালেঞ্জ কানাডায় অভিবাসী হওয়া অন্য যে কোনো দেশের লেখকদের মতোই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন সুব্রত।

কানাডার অন্টারিও প্রদেশের ব্রাম্পটন শহরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয় সাহিত্য উৎসবে ২৬ আগস্ট অংশ নেওয়া লেখকদের সাথে উপস্থিত অন্য বাঙালি লেখকেরা

আলাপনে লেখকদের গ্রন্থ প্রকাশের ব্যাপারে গুরুত্ব পায় কানাডার প্রকাশক কোম্পানি। অংশগ্রহণকারী লেখকেরা মত প্রকাশ করেন, ভারত বা বাংলাদেশ থেকে নিজেদের বই প্রকাশ না করে কানাডার দক্ষিণ এশিয়ার লেখকদের উচিত কানাডার প্রকাশকের মাধ্যমে বই প্রকাশ করা।

এই সাহিত্য উৎসবে প্যানেল আলোচকদের বাইরেও বেশ কয়েকজন বাঙালি কবি ও লেখক উপস্থিত ছিলেন।