অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচারপ্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।

গতকাল শনিবার বিকেলে উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শত বাধার মধ্যেও গোষ্ঠীস্বার্থকে উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তী সরকার তার ওপর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সব কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।

ক্ষোভ ও হতাশা থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে চাইছেন—দুই দিন ধরে এমন আলোচনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয় সারা দেশে। জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত আলোচনায় তাঁর পদত্যাগের ভাবনার কথা বলেন। এ সময় তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বলেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ওই দিন রাত থেকেই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করুন, কোনো দলই সেটা চায় না। তবে দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় চায়।

এরই মধ্যে গতকাল বেলা ১১টায় এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। পরে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর সোয়া ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় বেলা সোয়া ২টায়। দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অন্তত ১৯ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে উপদেষ্টাদের বাইরে আর কাউকে রাখা হয়নি। একনেক বৈঠক শেষে একে একে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিকল্পনাসচিবসহ সব সরকারি কর্মকর্তাকে এনইসি কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে দেখা গেছে।

চলমান কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সহায়তা চান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, একনেকের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের অনির্ধারিত বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর অর্পিত তিনটি প্রধান দায়িত্ব (নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার) বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, এসব দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের অযৌক্তিক দাবিদাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে যেভাবে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা হচ্ছে এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বৈঠকে।

দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।