Home কানাডা খবর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় কানাডার এ বছরের বাজেট

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় কানাডার এ বছরের বাজেট

কানাডার হাউস অব কমন্স এ ফেডারেল বাজেট পেশ করছেন কানাডার উপপ্রধানন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রীল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক : গত ১৯শে এপ্রিল সোমবার কানাডার উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রীল্যান্ড প্রথম বারের মত হাউস অব কমন্স এ ফেডারেল বাজেট পেশ করেন। কানাডার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত কোন একজন নারী অর্থমন্ত্রী কানাডার পার্লামেন্ট এ ফেডারেল বাজেট উপস্থাপন করলেন। কোভিড মহামারীর এই প্রচণ্ড খারাপ সময়ে সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং আগামীতে কানাডার অর্থনীতিকে মজবুত করার লক্ষ্যে ও নারীদের জন্য আরো ভালো অবস্থা তৈরী করার প্রত্যয় রেখে এক বিশাল ঘাটতি বাজেট তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। হাউস অব কমন্স এ তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ফ্রীল্যান্ড বলেন, ‘এই বাজেটের মধ্যে কোভিডের সাথে আমাদের যুদ্ধের অবসান ঘটবে। কোভিড আমাদের অর্থনীতিতে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, সেখান থেকে উত্তরণের পথ দেখাবে এই বাজেট। এই বাজেটের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে এবং আগামী দশকে কানাডার উন্নয়নের সাথে সাথে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের পথ উম্মোচিত করা।’

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এই বাজেটে বিশেষভাবে নজর দেয়া হয়েছে একেবারে এই সময়ের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর দিকে এবং কানাডার সার্বিক উন্নয়নের এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্লনা পথ তৈরির ক্ষেত্রে। এটা কানাডার মধ্যবিত্ত সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে, এবং সেই সাথে এর মাধ্যমে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে যাতে আগামীতে অনেক বেশি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের কাতারে শামিল হতে পারে। সেই সাথে এই বাজেট বর্তমান বিশ্বের আরো বেশি সবুজ ও সতেজ অর্থনীতির ধারণাকে বেগবান করবে।’
৭৩৯ পৃষ্ঠার এই বাজেটে দেখানো হয়েছে, গত বছরে কানাডার অর্থনৈতিক ঘাটতি হয়েছে ৩৫৪.২ বিলিয়ন ডলার এবং পরিকল্পনা করা হয়েছে আগামী বছরের মধ্যে এই ঘাটতি থেকে ১৫৪.৭ বিলিয়ন ডলার হ্রাস করা হবে এবং আশা করা হচ্ছে, ধীরে ধীরে এই ঘাটতি কমতে কমতে আগামী ২০২৫-২৬ সালে মাত্র ৩০.৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।

বাজেট সম্পর্কে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজেট যে সব লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে, সেগুলো উল্লিখিত সময়ে সরাসরি পূরণ করার কোন জোরালো নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ কোভিড মহামারীর অবস্থা এমন পর্যায়ে যেতেও পারে যেখানে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে অনেক বেশি সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে।’

কনজারভেটিভ দলের নেতা এরিন ও টুলি বলেন, এই বাজেটে যে ঘাটতি ও ঋণের উল্লেখ আছে সেটা তাঁর ভাবনার মূল বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এই বাজেটে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কোন দূরদর্শিতার নমুনা তিনি দেখতে পাননি। এতে যা বলা হয়েছে, তার সবই ভাসা ভাসা এবং প্রচুর ঋণ নির্ভর, এখানে বস্তুনিষ্ঠ কোন অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধির পথ দেখানো হয়নি, বরং এটাতে স্পষ্টত আগামীতে এক ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির আভাস পাওয়া যায়। এই বাজেটে আমাদের অর্থনীতির বৃহৎ সেক্টর সম্পর্কে কোন পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি, সেই সাথে লাখ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে কিভাবে বর্তমানের এই মন্দাকাল থেকে রক্ষা করা যাবে, সে সম্পর্কে সত্যিকারের কোন পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়নি।’

২০২১ সালের বাজেটে রাজস্বের প্রধান খাতগুলি হচ্ছে,
* যে সব বড় ডিজিটাল কোম্পানীর মোট রাজস্বের পরিমাণ ৭৫০ মিলিয়ন ইউরো’র বেশি তাদেরকে ২০২২ সালের ১লা জানিয়ারি থেকে রাজস্বের শতকরা তিন ভাগ কর হিসেবে দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ থেকে আগামী পাঁচ বছরে সরকারের কোষাগারে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার জমা হবে।

* বিলাসবহুল গাড়ি ও উড়োজাহাজ যেগুলোর মূল্য এক লক্ষ ডলারের বেশি এবং যে সমস্ত ব্যক্তিগত নৌযানের মূল্য আড়াই লক্ষ ডলারের বেশি তাদেরকে আগামী ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ কর দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ থেকে আগামী চার বছরে ৬০৪ মিলিয়ন ডলার সরকারের উপর্জন হবে।

* যে সব নন-রেসিডেন্টদের কানাডায় সম্পত্তি আছে, কিন্তু তারা কানাডায় নিয়মিত বসবাস করে না, তাদের সম্পত্তির মূল্যের উপর শতকরা ১ ভাগ করারোপ করা হবে আগামী ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে। এ থেকে আগামী চার বছরে মোট আয় হবে ৭০০ মিলিয়ন ডলার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এই করারোপ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফ্রীল্যান্ড বলেন, কানাডিয়ানদের জন্য বাড়ি হচ্ছে বাস করার জন্য। এগুলো শুধুমাত্র ফেলে রাখার জন্য নয়। যারা এটা করবে, তাদেরকে অবশ্যই এই করের ভার নিতে হবে।’

কর্মক্ষেত্রে আরো বেশি নারীদের আকৃষ্ট করা এবং পরিবেশ তৈরির জন্য ফেডারেল সরকার আগামী চার বছরের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রতি বছর ফলপ্রসূ প্রাথমিক শিক্ষা এবং চাইল্ড-কেয়ার প্রোগ্রামের জন্য ৮.৩ বিলিয়ন ডলার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রীল্যান্ড মনে করেন, নতুন কর্মের সংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটা খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

বাজেটের প্রাক-কথনে ফ্রীল্যান্ড বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় আমাদের জন্য নতুন পথ উম্মোচিত করে দিয়েছে, এবং যার প্রেক্ষিতে আমরা শেষ পর্যন্ত সারা দেশব্যাপী বলিষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষা এবং চাইল্ড-কেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে নজর দিয়েছি।’

বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, আগামী ২০২২ সালের শেষ নাগাদ চাইল্ড কেয়ারের খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০২৫/২৬ সালের মধ্যে ডে-কেয়ারের খরচ প্রতিদিন ১০ ডলারে নেমে আসবে।

এনডিপি নেতা জগমিত সিং সরকারের চাইল্ড কেয়ার কর্মসূচীকে ইতিবাচক হিসেবে মনে করলেও তিনি এটা সত্যিই বাস্তবে প্রতিফলিত হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘লিবারেলরা এই ব্যাপারে এত বেশি বার মানুষকে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে যে, মানুষ এ ব্যাপারে আর আশাবাদী হতে পারে না। লিবারেলরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এ ব্যাপারে কথা দিয়েছেন, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন করেননি।’

২০২৫ সালের মধ্যে সবুজায়ন প্রক্রিয়া এবং ভূমি ও সমুদ্রের শতকরা ২৫ ভাগ সংরক্ষণের জন্য বাজেটে ১৭.৬ ডলার ধার্য করা হয়েছে।

এই বাজেটে ফেডারেলের সর্বনিম্ন মজুরীর হার ধরা হয়েছে ১৫ ডলার। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ফেডারেল অনুমোদিত ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায়ে কর্মরত ২৬,০০০ কর্মজীবী এতে উপকৃত হবে। এ বাজেটে লং টার্ম কেয়ার হোম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন কিছুর উল্লেখ নেই, তবে বলে হয়েছে ফেডারেল এবং প্রভিন্স ও টেরিটরীস সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিবে। আগামী ২০২২-২৩ সালে লং টার্ম কেয়ার হোমের কিছু স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলার দেবার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে।
(সুত্রঃ সিবিসি নিউজ, কানাডা)

Exit mobile version