অনলাইন ডেস্ক : গত রবিবার, ২০শে মার্চ, আবার টরন্টোর মানুষ সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে প্যারেড উপভোগ করলো। বিভিন্ন আইরিশ সংগঠনের সাথে সাথে টরন্টোর বিভিন্ন সংগঠন সবুজ পোশাকে সজ্জিত হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার এক মনোমুগ্ধকর প্যারেডের মাধ্যমে টরন্টোর ডাউন টাউনে এক উত্সবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, করোনাজনিত কারণে গত ২০২০ এবং ২০২১ সালে টরন্টোতে এই প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়নি।
সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে প্যারেড উপলক্ষে টরন্টোর মেয়র জন টরি তার বক্তব্যে বলেন, করোনা আমাদেরকে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং উত্সব থেকে বঞ্চিত করেছে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অনুক‚লে আসার ফলে আমরা আবার ধীরে ধীরে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছি। যারা গত ১৭ই মার্চ, বৃহস্পতিবার সবুজ রঙয়ে ছেয়ে যাওয়া সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে সবাই মিলে উদযাপন করতে পারেনি, তাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত হচ্ছে রবিবারে প্যারেডের মধ্যে দিয়ে দিনটি উদযাপন করা। এই প্যারেড আমাদের আইরিশ কানাডিয়ানদের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
রবিবার দুপুরে টরন্টোর বøর স্ট্রীট ওয়েস্ট এবং সেন্ট জর্জ স্ট্রীট থেকে এই প্যারেড শুরু হয়ে বøর ও ইয়াং স্ট্রীটের পূর্ব হয়ে ইয়াং ও কুইন স্ট্রীটের দক্ষিণ হয়ে কুইন এর পশ্চিমে নাথান ফিলিপ স্কয়ারে গিয়ে শেষ হয়। এই প্যারেডের জন্য নগরীর বিভিন্ন রাস্তা কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। এ মাসের শুরুতে টরন্টোর মেয়র জন টরি ঘোষণা দেন, সেন্ট প্যাট্রিক্স প্যারেড দিয়ে আবার টরন্টোতে মানুষের সরাসরি উপস্থিতিতে উত্সব শুরু হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এ বছরে ‘প্রাইড টরন্টো’, ‘টেস্ট অব দ্য ড্যানফোর্থ’, ‘জার্ক ফেস্ট’ এবং ‘ক্যারিবানা’ করোনা পূর্ববর্তী সময়ের মত অনুষ্ঠিত হবে। এই সপ্তাহের শেষে টরন্টোর কমিক ফেস্টিভ্যাল ‘কমিকন’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টরন্টো কনভেনশন সেন্টারে। করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষের উপস্থিতিতে টরন্টোতে সবচেয়ে বড় এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে আগামী শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত।
টরন্টোর সেন্ট প্যাট্রিক্স প্যারেড সোসাইটি জানায়, প্রতি বছর টরন্টোতে যে সেন্ট প্যাট্রিক্স প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়, সেটার মাধ্যমে তারা সেন্ট প্যাট্রিক এর প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সাথে সাথে আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য টরন্টোর বহু জাতির মানুষের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা চালায়। উল্লেখ্য, আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সেন্ট প্যাট্রিক ৩৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এক ধনী রোমান-ব্রিটিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা এবং পিতামহ দু’জনেই খ্রিষ্টান ধর্মগুরু ছিলেন। ১৬ বছর বয়সে আইরিশ দুস্যুরা তাঁকে অপহরণ করে আয়ারল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। দাস থাকা অবস্থায় তাঁকে রাখালের কাজ করতে হয়। এই অবস্থায় তিনি একদিন ঈশ্বরকে খুঁজে পান। সেন্ট প্যাট্রিক তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, ঐ দাস থাকা অবস্থায় একদিন ঈশ্বর তাঁকে জানান সমুদ্র উপক‚লে একটি জাহাজ আছে, সেটাতে করে তিনি যেন তাঁর মাতৃভূমিতে ফিরে যান। ঈশ্বরের নির্দেশ মত তিনি সেই জাহাজে চেপে নিজ গৃহে ফিরে গিয়ে ঈশ্বর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কয়েক বছর পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আয়ারল্যান্ডে ফিরে যাবেন এবং আয়ারল্যান্ডের বিধর্মী মানুষদের ঈশ্বরের পথে নিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। তারপর তিনি আমৃত্যু আয়ারল্যান্ডে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারে কাজ করেন। তিনি ৪৬১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মার্চ উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডাউনপ্যাট্রিক এ মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
আয়ারল্যান্ডের মানুষের কাছে যীশু খ্রিস্টের পরই সেন্ট প্যাট্রিকের অবস্থান। সে কারণে পৃথিবীর সব প্রান্তে বসবাসরত আইরিশ বংশোভূত মানুষেরা ১৭ই মার্চ গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করেন। সেন্ট প্যাট্রিককে সম্মান জানিয়ে এই দিন তারা সবুজ পোশাক পরিধান করে। কানাডা ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, পর্তুগাল, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রতিবছর সেন্ট প্যাট্রিক্স ডে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।






