অনলাইন ডেস্ক : তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প আঘাত হানার ১০ দিন পেরিয়ে গেছে। দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪১ হাজার। এখন উদ্ধার তৎপরতা গুটিয়ে এনে গৃহহারা মানুষের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা ও খাদ্য সহায়তার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৪১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরীয় সরকার এবং জাতিসংঘ বলছে, দেশটিতে উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ জনের মরদেহ। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া গৃহহীন মানুষ তীব্র শীতে মানবেতর দিন পার করছেন।
তুরস্ক জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ৫০ হাজার ৫৭৬টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে ফেলা হবে। কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ১০টি প্রদেশের ৩ লাখ ৮৭ হাজারেরও বেশি ভবন পরিদর্শন করেছে। সবচেয়ে বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজিয়ান্তেপে।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেন, ধসে পড়া ভবন থেকে সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে। এরপর মাসখানেকের মধ্যে শুরু হবে ভবন পুনর্নির্মাণ। ধ্বংসপ্রাপ্ত বা বসবাসের অযোগ্য সব বাড়ি ও কর্মস্থল পুনর্নির্মাণের পর যথাযথ মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ভূমিকম্প নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুর্কি পুলিশ। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ অনুদান চুরির পরিকল্পনায় জড়িত ৪৬টি ওয়েবসাইট এবং ১৫টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন সমাজকর্মীরা। ভূমিকম্পে বিধ্বস্তের পর সহায়তায় ধীরগতির কারণে দেশটির বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। ইদলিব শহর থেকে আব্দুলকাফি আলহামদো নামে এক কর্মী আলজাজিরাকে বলেন, ভূমিকম্প আঘাত হানার দিন থেকেই এখানকার বাসিন্দাদের জরুরি সহায়তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখানে শুরু থেকেই ত্রাণ বিতরণে জাতিসংঘের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। এই অভিযোগ স্বীকার করে জাতিসংঘ জানিয়েছে, নতুন করে প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পর মঙ্গলবার ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে।
দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং আফটার শকে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বের ১০টি প্রদেশের বেশিরভাগ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ওইসব এলাকায় বসবাসরত সিরিয়ানরা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় স্বজন ও তাঁদের ঘরবাড়ি দেখতে বাব আল-হাওয়া সীমান্ত পার যাচ্ছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ তুরস্কের সিলভেগ সীমান্ত দিয়ে বাব আল-হাওয়া হয়ে পিকআপ ভ্যান ও ট্রাকে সিরিয়ার ইদলিবে মরদেহ নেওয়া যাচ্ছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে কবর দেওয়ার জন্য ১ হাজার ৪১৪ জনের মরদেহ সিরিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর প্রথম দামেস্ক সফরে গেছেন প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি। এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের সহায়তার বিষয়ে সাফাদি আলোচনা করবেন। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
